মশাল জ্বালিয়ে হাতিদের তাড়াতে নেমেছেন হুলাকর্মীরা। নিজস্ব চিত্র।
শনিবার রাত ২টো। আউশগ্রামের ভাল্কির জঙ্গল ছেড়ে গলসির পারাজ স্টেশনের রাস্তা ধরেছিল হাতির দল। হুলাপার্টির লোকজন ভাবতে শুরু করেছিলেন, সে রাতেই হয়তো হাতিদের দামোদর পার করে বাঁকুড়ার জঙ্গলের দিকে এগিয়ে দেওয়া যাবে। অভিজ্ঞতায় তাঁরা এ-ও জানেন, হাতির মর্জি বোঝা অত সহজ নয়। বাস্তবে হলও তাই। জামতাড়া গ্রামের কাছে গিয়ে হঠাৎ মুখ ঘুরিয়ে হাতির দল ফের ভাল্কির জঙ্গলের পথ ধরল। এর ফলে শনিবার রাতে দুর্যোগের মধ্যে দৌড়-ঝাঁপ করেও হুলাকর্মীরা হাতিদের পূর্ব বর্ধমান জেলা থেকে সরাতে
পারলেন না।
রবিবার সকালেও হাতিরা বনকর্মীদের বিভ্রান্ত করে। জঙ্গলের মধ্যে হাতিদের খোঁজ পাচ্ছিল না বন দফতর। দুপুরের পরে ‘ড্রোন’ উড়িয়ে বন দফতর দেখে, হাতিরা জঙ্গলের ভিতর দু’টি দলে ভাগ হয়ে গিয়েছে।
ফের আউশগ্রামের জঙ্গলেই হাতিরা ফিরল কেন?
শাবক-সহ প্রায় ৫০টি হাতির দল জেলায় আসার পর থেকে আউশগ্রামে পড়ে রয়েছেন রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) দেবল রায়, মুখ্য বনপাল (দক্ষিণ পূর্ব চক্র) কল্যাণ দাস থেকে পূর্ব বর্ধমানের বিভাগীয় বন দফতরের একাধিক আধিকারিক থেকে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা হুলাপার্টির কর্মীরা।
তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শনিবার রাতে জামতাড়া গ্রাম পার করে পারাজ স্টেশনের কাছে যখন হাতিরা রেললাইন টপকাবে, সে সময় ট্রেনের হর্ন শোনা যায়। তখনই সতর্ক হয়ে হাতির দল দাঁড়িয়ে যায়। তারপরে ফের গন্তব্যের দিকে এগোনোর জন্যে পা বাড়িয়েও হঠাৎ তারা একেবারে উল্টোমুখী হয়ে যায়।
হুলাপার্টির কর্মীদের একাংশ জানান, রেললাইনের ধারে যাওয়ার পরেই অঝোরে বৃষ্টির জন্যে হাতিগুলিকে প্রথমে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। বেশ কিছুক্ষণ পরে বোঝা যায়, দাঁতাল হাতি শাবকদের নিয়ে আলাদা হয়ে পিছিয়ে পড়েছিল। তাদের জন্যেই বড় দলটি অপেক্ষা করছিল। পরে দাঁতাল হাতির খোঁজে অন্য হাতিগুলি ফের আউশগ্রামের জঙ্গলের দিকে চলে যায়।
বন-কর্তা কল্যাণ বলেন, “অনেকগুলি শাবক থাকার জন্যে সব হাতি সমান গতিতে হাঁটতে পারছে না। শাবকদের আগলে নিয়ে একটি দল যাচ্ছিল। তারাই পিছিয়ে পড়ে বলে অন্য হাতিগুলি ঘুরে চলে আসে। তার উপরে আবহাওয়া প্রতিকূল থাকায় সংগঠিত ভাবেও হাতিদের ঠিক মতো পথ দেখাতে সমস্যা হয়।’’
বন দফতরের কর্মীদের দাবি, দলমার হাতির দলের মেজাজের সঙ্গে বাঁকুড়া বা পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে আসা হুলাপার্টির কর্মীরা ‘পরিচিত’। সে জন্যেই তাঁদের নিয়ে আসা হয়েছে। কিন্তু শনিবার থেকে দু’দিন নাগাড়ে বৃষ্টিতে হুলাপার্টির মশাল জ্বালানো কঠিন হয়ে পড়ছে। তার উপরে নতুন এই পথ অন্য জেলার হুলাকর্মীদের কাছেও অপরিচিত। সে জন্যেও খানিকটা অসুবিধা হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। বন দফতরের একাধিক কর্তার কথায়, “জঙ্গলের ভিতর প্রচুর গ্রাম রয়েছে। হুলাপার্টিকে সে দিকেও খেয়াল রাখতে হচ্ছে। শাবক আগলে হাতিরা সন্তর্পণে এগোচ্ছে। অনেক কিছু বুঝে হুলাপার্টিকে হাতিদের নিয়ে যাওয়ার কাজ করতে হচ্ছে।’’
বৃষ্টির মধ্যে রবিবার সন্ধ্যায় মশাল নিয়ে ভাল্কির জঙ্গলের ভিতর ঢুকে পড়েন হুলাপার্টির কর্মীরা। ডিএফও (পূর্ব বর্ধমান) নিশা গোস্বামী বলেন, “বৃষ্টিতে কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে। তার মধ্যেই হাতিদের দু’টি দলকে এক করে গন্তব্যস্থলের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy