লক্ষ্মী প্রতিমা বিক্রিতে ব্যস্ত মণি সাউ। নিজস্ব চিত্র।
বছরভর চলে জীবন সংগ্রাম। তবে বাড়তি রোজগারের আশায় উৎসব মরসুমে সংসার ছেড়ে বেরিয়ে আসেন ঘরের লক্ষ্মীরা। দুর্গাপুজো থেকে শুরু হয়ে মাসখানেক নাওয়া-খাওয়া ভুলে পরিবার থেকে দূরে থাকেন। পরিবারের সদস্যদের একটু বেশি সচ্ছলে রাখার জন্যই তাঁদের এই লড়াই বলে জানালেন মণি, রুবিরা।
গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন দেব-দেবীর প্রতিমা ও পুজোর নানা উপকরণ বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন আসানসোলের মণি সাউ। লক্ষ্মীপুজোর দিন, বুধবার সকালেও দেখা গেল, আসানসোলে জিটি রোডের পাশে লক্ষ্মী প্রতিমা-সহ পুজোর নানা উপকরণ সাজিয়ে ক্রেতাদের অপেক্ষায় বসে রয়েছেন মণি। কথায় কথায় তিনি জানালেন, তাঁর পোশাকি নাম লক্ষ্মী। কিন্তু এলাকায় তাঁকে সকলে মণি নামে জানেন। ছোট-বড় নানা আকারের প্রতিমা সাজিয়ে রেখেছেন। মণি বলেন, “স্বামীর একার রোজগারে সংসারের সাত জনের পেট চালানো সম্ভব নয়। সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ সামলানো খুবই কঠিন হয়ে উঠেছে। তাই স্বামীকে সঙ্গ দিতেই আমাকেও পথে বেরোতে হয়েছে।” মণি জানান, দুর্গাপুজো থেকে এক মাস উৎসব চলে। এই সময়ে বাজার বেশ ভাল থাকে। ক্রেতারা হাত খুলে খরচ করেন। ফলে, দু’-পয়সা বেশি রোজগার হয়। তবে তাঁর আক্ষেপ, মূল্যবৃদ্ধির বাজারে ক্রেতারা সহজে মুঠো আলগা না করায় আয়ের পরিমাণ কমেছে।
বছরভর ফল বিক্রি হয়। তবে পুজো-পার্বণের দিনগুলিতে বিক্রি অনেক বেড়ে যায় বলে জানালেন নিয়ামতপুরের ফল বিক্রেতা রুবি রব্বানি। তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, সংসারের হাল ধরতে প্রায় ১৮ বছর ধরে রাস্তার পাশে ফল বিক্রি করছেন। বাড়িতে মা-বাবা, ছোট-ছোট তিন ভাইবোন রয়েছে। বাবার একার রোজগারে সংসার চলে না। তাই তিনি ফলের পসরা নিয়ে রাস্তার পাশে বসেন। রুবি বলেন, “তখন আমি পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। বন্ধুদের সঙ্গে নিয়মিত স্কুলে যেতাম। এক দিন সন্ধ্যায় কাজ থেকে অসুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেন বাবা। শরীরের অবস্থা দেখে বুঝলাম বাবার একার পক্ষে আর হচ্ছে না। তখন থেকে বইপত্র তুলে দিয়ে পরের দিন বাবার সঙ্গে ফল বিক্রি করতে বেরিয়ে পড়লাম। সেই থেকে সমানে চলছে।” নিজে পড়াশোনা করতে না পারলেও ভাইবোনেরা যাতে শিক্ষিত হতে পারে, সে দিকে তাঁর সব সময় কড়া নজর রয়েছে।
প্রতি বছর দুর্গাপুজোর মেলায় ঝিনুকের শৌখিন সামগ্রী নিয়ে কুলটিতে আসেন পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকের সুজাতা মাইতি। এ বারও এসেছেন। তিনি জানান, কালীপুজো পর্যন্ত আসানসোলের নানা প্রান্তে হওয়া মেলায় যান। তার পরে বাড়ি ফেরা। সুজাতার কথায়, “উৎসবের এই দিনগুলোতে বাড়তি কিছু রোজগারের আশা নিয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়ি। বহু বছর লক্ষ্মীপুজোয় বাড়িতে থাকিনি। পরিবারের সদস্যেরা অবশ্য পুজোর আয়োজন করেন।” তিনি জানালেন, এ বছর মেলার মাঠে ভিড় অনেক কম। বেচাকেনা সে রকম হচ্ছে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy