Advertisement
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Durgapur

পরিত্যক্ত আবাসনের মধ্যে হাত-পা বাঁধা, চোখে জল নিয়ে শুয়ে বৃদ্ধ! তিন ছেলের কাণ্ডে শোরগোল দুর্গাপুরে

অশীতিপর বৃদ্ধের তিন ছেলে। এক জন ইস্পাত কারখানার কর্মী। দুই ছেলে বেসরকারি সংস্থার কর্মী। দুর্গাপুরেই অন্যত্র বাস করেন তাঁরা। কিন্তু, অসুস্থ এবং বৃদ্ধ বাবার জায়গা হয়নি কারও বাড়িতে।

old man

এ ভাবেই উদ্ধার করা হয় বৃদ্ধকে। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৪ ১৭:৫০
Share: Save:

বর্ষার মরসুমে ডেঙ্গি-আতঙ্ক ছড়িয়েছে। তাই বাড়ি বাড়ি ‘সার্ভে’ করছিলেন পুরকর্মীরা। একটি পরিত্যক্ত আবাসনে গিয়ে থমকে গিয়েছিলেন তাঁরা। গোঙানির শব্দ শুনে আবাসনের ভিতরে ঢুকে চোখ কপালে ওঠে তাঁদের। দেখেন, ভাঙা খাটে হাত-পায়ে দড়ি বাঁধা অবস্থায় শুয়ে এক বৃদ্ধ। দু’চোখ কান্নায় ভরা। শুক্রবার পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুরের জয়দেব অ্যাভিনিউ এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে খবর, ওই বৃদ্ধের নাম মাগারাম ঘোষ। অশীতিপর বৃদ্ধের তিন ছেলে। এক জন ইস্পাত কারখানার কর্মী। দুই ছেলে বেসরকারি সংস্থার কর্মী। দুর্গাপুরেই অন্যত্র বাস করেন তাঁরা। কিন্তু, অসুস্থ এবং বৃদ্ধ বাবার জায়গা হয়নি কারও বাড়িতে। ছেলেরা দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার একটি পরিত্যক্ত আবাসনের মধ্যে বাবাকে খাটে শুইয়ে দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখে চলে যান তাঁর নিরাপত্তার কথা ভেবে! এই ঘটনায় শোরগোল এলাকায়। এলাকার জনপ্রতিনিধিরও কোপে পড়েন তিন ছেলে।

স্থানীয় সূত্রে খবর, সকালে দুর্গাপুর নগর নিগমের স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়েছিলেন ডেঙ্গি নিয়ে সচেতনতার জন্য। তখনই অমানবিক ঘটনা নজরে আসে তাঁদের। খবর যায় প্রাক্তন কাউন্সিলর মণি দাশগুপ্তের কাছে। তিনি ঘটনাস্থলে পৌঁছে বৃদ্ধের বড় ছেলে দয়াময় ঘোষকে ডেকে পাঠান। তাঁকে ভর্ৎসনা করেন। খবর দেওয়া হয় দুর্গাপুর থানার পুলিশকেও। তার মধ্যে পরিত্যক্ত আবাসনে ভিড় জমে যায়। এলাকাবাসীরাও ভিড় জমান। অসুস্থ বৃদ্ধের হাত-পায়ের দড়ি খোলা হয়। উদ্ধার করে নিয়ে যান স্বাস্থ্যকর্মীরা।

বৃদ্ধের বড় ছেলে দয়াময়ের যুক্তি, ‘‘বাবা এখানেই থাকতেন। সেই জন্য এখানেই রাখা হয়। বাবার চিকিৎসা হয়েছিল। তাই খাট থেকে যাতে পড়ে না যান, সেই জন্য দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। আমি নিয়মিত আসি। বাবার দেখভাল করি। সংসারের অবস্থা খারাপ হওয়ায় বাবাকে ওই আবাসনে রাখা হয়েছে।’’ তিনি এতে ‘অমানবিক’ কিছু দেখছেন না। যদিও প্রাক্তন কাউন্সিলর মণির মন্তব্য, ‘‘এ রকম নির্মম দৃশ্য আগে দেখিনি। মাগারামবাবু খুব ভাল মানুষ বলে এলাকায় পরিচিত। কিন্তু বৃদ্ধের ছেলেরা যে বাবার সঙ্গে এ রকম ব্যবহার করবেন, সেটা কল্পনাও করতে পারিনি।’’ তিনি জানান, পুলিশকে জানিয়েছেন ঘটনার কথা। প্রয়োজনে বৃদ্ধের ছেলেদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করবেন। তাঁর সংযোজন, ‘‘এই রকম ঘটনা যাতে সমাজে না ঘটে, সেই নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Durgapur Old Man
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE