দুর্গাপুর হাসপাতাল। নিজস্ব চিত্র।
মাসখানেক আগের কথা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে হঠাৎ পরিদর্শনের পরেই হাসপাতালে দালাল-রাজ ভাঙতে তৎপর হয় প্রশাসন। গ্রেফতার করা হয় বেশ কয়েক জনকে। তাঁদের মধ্যে ছিলেন হাসপাতালের এক চতুর্থ শ্রেণির কর্মীও। দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালেও সেই রকম দালাল-রাজের অভিযোগ তুলেছেন রোগীর পরিজনেরা। এখানেও এক শ্রেণির চতুর্থ শ্রেণির কর্মী জড়িত বলে অভিযোগ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শহরে আরও বেশ কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল থাকায় দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালের উপরে রোগীর চাপ অন্য মহকুমা হাসপাতালের তুলনায় কম। শয্যার অভাবে বারান্দায় রোগীদের শুয়ে থাকার মতো ছবি বিশেষ দেখা যায় না। তবে বর্ষার আগে-পরে সেই ছবিটাই বদলে যায়। এক বিছানায় দু’জন রোগী রাখার ব্যবস্থা করতে হয় কর্তৃপক্ষকে। হাসপাতালে শয্যার সংখ্যা ৩৩০। তবে বছরের এই সময় দিনে গড়ে প্রায় পাঁচশো রোগী আসেন। বর্ষায় জ্বর, পেটের অসুখ, সাপে কাটা রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়। সেই সুযোগে হাসপাতালে এক শ্রেণির চতুর্থ শ্রেণির কর্মী ও কিছু অস্থায়ী কর্মীর মদতে বহিরাগত কয়েক জন হাসপাতালে দালাল চক্র চালায় বলে অভিযোগ উঠেছে।
রোগীর পরিজনদের অভিযোগ, স্ট্রেচারে করে রোগীকে নিয়ে যাওয়ার সময়ে হাসপাতালের কোনও কর্মীর দেখা মেলে না। বহিরাগত কেউ রোগীকে নির্দিষ্ট ওয়ার্ডে পৌঁছে দেন। বিনিময়ে তিনি একশো টাকা নেন। হাসপাতালে তুলনায় ভাল শয্যা পেতে হলে ‘সহযোগিতা’র বিনিময়ে অর্থ দিতে হয়। টাকার বিনিময়ে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটের মতো জরুরি পরিষেবা সুলভে পাওয়ার ব্যবস্থাও গোপনে হাসপাতালে চালু রয়েছে বলে রোগীর পরিজনদের অভিযোগ। এমনকী, চিকিৎসার সময়ে প্রয়োজনীয় নানা জিনিসপত্র আনা-নেওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্যও বাড়ির লোকজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে হয়। দালালদের একাংশ এখানকারই কর্মী হওয়ায় হাসপাতালের আঁটঘাট তাঁদের জানা। গতিবিধিও অবাধ। সেই সুযোগই তাঁরা কাজে লাগাচ্ছেন বলে অভিযোগ।
রোগীর পরিজনদের পরামর্শ দিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে রোগী পাঠিয়ে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে এক শ্রেণির কর্মীর বিরুদ্ধে। হাসপাতালের বাইরে ভাড়ায় অ্যাম্বুল্যান্স চালান শেখ নৌসাদ, সুনীল ঘোষেরা। তাঁদের দাবি, ওই কর্মীরা বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে যোগসাজস করে চড়া ভাড়ায় সেখানকাপ অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করতে বাধ্য করেন। এর ফলে, এক দিকে যেমন রোগীর পরিজনেরা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন, তেমনই মার খায় তাঁদের রোজগারও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু রোগীর আত্মীয় জানান, ভর্তির সময়েই তুলনায় আর্থিক ভাবে সম্পন্ন রোগীদের বেছে নেয় দালালেরা। ভর্তি থেকে শুরু করে বিভিন্ন পরিষেবার ক্ষেত্রে নানা রকম বাধা দেওয়া হয়। আর তার পরেই দালালেরা ‘মুশকিল আসান’ হয়ে উদয় হয়। সমস্যা এড়াতে এবং ভাল পরিষেবার লোভে রোগীর পরিজনদের অনেকে তাদের খপ্পরে পড়েন।
মহকুমা হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানান, বেসরকারি হাসপাতালের মতো পরিষেবা এখানে মেলে না, তা ঠিকই। আর সেই সুযোগই অনৈতিক ভাবে কাজে লাগিয়ে পয়সা কামাচ্ছে কেউ-কেউ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যদিও জানান, এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কেউ কোনও অভিযোগ জানাননি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তাঁদের আশ্বাস।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy