Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Death

কৃতীদের হারিয়ে শোকস্তব্ধ গোপালমাঠ

এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে পাঁচটি বিষয়ে লেটার-সহ ৪২০ নম্বর পেয়েছেন সৌরভ। বাবা কাশীনাথবাবু বিভিন্ন জায়গায় রান্নার কাজকর্ম করে সংসার চালান। তিনি জানান, সৌরভের ইচ্ছা ছিল মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার।

ঘটনাস্থলে পড়ে রয়েছে ঘটি, জামা-কাপড়। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ

ঘটনাস্থলে পড়ে রয়েছে ঘটি, জামা-কাপড়। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২০ ০৫:৫০
Share: Save:

আজ, মঙ্গলবার আঠারো বছরে পা দেওয়ার কথা একমাত্র সন্তানের। রাহুল মাড্ডির জন্মদিন উপলক্ষে বনশোল প্রাথমিক স্কুলের ৫০-৬০ জন পড়ুয়াকে খাওয়ানো, শিক্ষাসামগ্রী ও ‘মাস্ক’ বিলির পরিকল্পনা নিয়েছিলেন বাবা নারায়ণ ও মা কমলা মাড্ডি। সে জন্য চাল, ডাল, মশলাপাতি, জলের বোতল-সহ অন্য জিনিসপত্র সব কিনে বাড়িতে মজুতও করে ফেলেছেন তাঁরা। এ দিন সেই সব সামগ্রী দেখিয়ে ডুকরে কেঁদে ওঠেন দামোদরে তলিয়ে নিখোঁজ রাহুলের মা কমলাদেবী। তিনি বলেন, ‘‘দামোদরে জল আনতে যাবে, সেটা আগেই বলেছিল ছেলে। আমি নিজের হাতে গেট খুলে দিই। আমরা শেষ হয়ে গেলাম!’’ পড়শি সঞ্জয় গড়াই বলেন, ‘‘রাহুল আমাদের কোলে-পিঠে বড় হয়েছে। ভাবতেই পারছি না, এমন ঘটনা ঘটবে।’’

অণ্ডালে দামোদর নদে চার পডু়য়ার তলিয়ে যাওয়ার ঘটনায় সোমবার সকাল থেকেই শোকের ছায়া দুর্গাপুরের গোপালমাঠের মেজেডিহি ও জগুরবাঁধ প্লটে। এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, মেজেডিহিতে ভাড়াবাড়িতে থাকতেন সৌরভ মণ্ডল, শিবু দাস ও রাহুল মাড্ডি। সব্যসাচী মুখোপাধ্যায় থাকতেন জগুরবাঁধ প্লটের ভাড়াবাড়িতে। সৌরভ, রাহুল ও সব্যসাচী, তিন জনই বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। এ দিন ভোরে তাঁরা অণ্ডালে দামোদরের ঘাটে যান জল আনতে যান।

এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে পাঁচটি বিষয়ে লেটার-সহ ৪২০ নম্বর পেয়েছেন সৌরভ। বাবা কাশীনাথবাবু বিভিন্ন জায়গায় রান্নার কাজকর্ম করে সংসার চালান। তিনি জানান, সৌরভের ইচ্ছা ছিল মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার। মা অন্নপূর্ণাদেবী জানান, ভোর ৪টে নাগাদ বাড়ি থেকে বেরোন সৌরভ। দামোদরে যাবেন শুনে বারণ করেছিলেন তিনি। কিন্তু সৌরভ বলেছিলেন, চিন্তা না করতে। কান্নায় ভেঙে পড়ে তিনি বলেন, ‘‘কত স্বপ্ন ছিল। এমন দিন দেখব ভাবিনি!’’

ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ছিল দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার ঠিকাকর্মী মনতোষবাবুর ছেলে সব্যসাচীর। মনতোষবাবু জানান, বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করে উচ্চ মাধ্যমিকে সব্যসাচী পেয়েছিলেন ৩৪৭ নম্বর। ছেলেকে হারিয়ে তিনি বলেন, ‘‘কী নিয়ে বাঁচব জানি না।’’ মা মৌমিতাদেবী বললেন, ‘‘ভোরে বন্ধুদের সঙ্গে বেরিয়ে গেল। সকালে দুঃসংবাদ পেলাম। তখনও বিশ্বাস করিনি। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারি, আর কোনও আশা নেই।’’ শিবুর উচ্চ মাধ্যমিকে প্রাপ্ত নম্বর ২৬৯। বাবা আনন্দবাবু বেসরকারি কারখানার অস্থায়ী কর্মী। বড় ছেলে দেবাশিস বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন। ছোট ছেলে শিবু প্রতিদিন ভোর ৪টে নাগাদ প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়ে যান বলে জানান আনন্দবাবু। তিনি বলেন, ‘‘এ দিনও একই সময়ে বেরিয়ে যায় সে। কিন্তু দামোদরে যাবে, সে কথা বাড়িতে জানায়নি।’’ মা সন্ধ্যাদেবী বলেন, ‘‘দুর্ঘটনার খবর পেয়েই বুঝতে পারি, শিবুর আর বাড়ি ফেরার আশা নেই!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Death Gopalmath
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy