সুনসান সোনাপট্টি। নিজস্ব চিত্র
পাড়ায় ঢোকার মুখ থেকে ভেসে আসত স্যাকরাদের ছেনির শব্দ। উৎসবের মরসুম শুরুর মাস দুয়েক আগে থেকেই রাত পর্যন্ত গয়নায় নকশা তুলতেন শিল্পীরা। তবে এ বার পুজোর সপ্তাহ দুয়েক আগেও অনেকটাই সুনসান বর্ধমান শহরের সোনাপট্টি। স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের একাংশের দাবি, নোটবন্দির পরেও কেনাবেচা ছিল। কিন্তু এমন করুণ পরিস্থিতি আগে হয়নি। হঠাৎ সোনার দাম (প্রায় এক ভরি) ৪০ হাজার ছোঁয়াতেই এই হাল, দাবি তাঁদের।
বর্ধমান সদর স্বর্ণশিল্পী ওয়েলফেয়ার সমিতির সম্পাদক স্বরূপ কোনারেরও দাবি, ‘‘দৈনন্দিন খরচা সামলানোর পরে মানুষ আমাদের কাছে আসেন। কিন্তু এখন মানুষের হাতে নগদ নেই। তাই উৎসবের মরসুমেও সোনার গয়না কেনার শখ পূরণ করতে পারছেন না তাঁরা। আমাদেরও নাভিশ্বাস উঠছে।’’
বর্ধমান শহরের জহুরি পট্টি, সোনাপট্টি ছাড়াও মিঠাপুকুর, সিং দরজা, আমড়াতলা, বিসি রোড, শ্যামবাজার মিলিয়ে আনুমানিক ১৩৫০টি দোকান রয়েছে। এই ব্যবসার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে জড়িয়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষ। ব্যবসায়ীরা জানান, একটা গয়নার পিছনে অনেকের খাটনি থাকে। পালিশ, ছেলা, নকশা, সেটিং, মিনে করা, গালা, গরিদের মতো কাজ করেন শিল্পীরা। বর্ধমান শহরে এ রকম স্বর্ণশিল্পী রয়েছেন প্রায় তিন হাজার। এর বাইরেও গয়না সাজিয়ে বিক্রির বাক্স, শাঁখা-পলা, ব্যাগ সরবরাহকারীরা জড়িয়ে রয়েছেন।
স্বর্ণশিল্পী ওয়েলফেয়ার সমিতির দাবি, প্রতিদিন বর্ধমান শহর থেকে আনুমানিক দেড়-দু’কোটি টাকার গয়না বিক্রি হয়। আড়াই থেকে তিন কিলোগ্রাম সোনার গয়না প্রস্তুত করা হয়। সমিতির সভাপতি দেবাশিস দত্ত বলেন, “বর্ধমান সদর এলাকা ছাড়াও বাঁকুড়ার ইন্দাস, পাত্রসায়র, বীরভূমের বোলপুর, ইলামবাজারের একাংশ ক্রেতা আমাদের কাছে আসতেন। এখন কাউকেই দেখা যাচ্ছে না। ফলে বর্ধমান শহরে সোনার গয়না তৈরি থেকে বিক্রি ১০ গুণ কমে গিয়েছে।’’
এ পরিস্থিতির পিছনে সোনার দাম বেড়ে যাওয়াকেই দায়ী করছেন তাঁরা। প্রতিদিন দাম বাড়লে বাজারের স্থিতাবস্থা বজায় থাকবে কী ভাবে সে প্রশ্নও করেছেন অনেকে। বর্ধমান শহরের বিসি রোডের একটি নামী গয়নার দোকানের কর্ণধার সন্দীপ দাসের কথায়, “নোটবন্দির বছরে ভেবেছিলাম, ব্যবসার হাল খুব খারাপ। কিন্তু এ বছর সেটাও পেরিয়ে গেল। উৎসবের মরসুমেও দোকানে খদ্দের নেই, ভাবতেই পারছি না।’’ কাটোয়ার খড়ের বাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী তরুণ গড়াইয়েরও দাবি, “দ্রুত বাজারে স্থিতাবস্থা না এলে শিল্পকে টেনে তোলা কঠিন হবে।’’
মন্দার বাজারেও তাঁদের আশা, ধনতেরসের আগে নিশ্চয় বদলাবে পরিস্থিতি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy