ঝাড়ুল গ্রামে চলছে গোলমাল। —নিজস্ব চিত্র
কয়েক বছর ধরেই সরকারি প্রকল্পে বাড়ি তৈরিতে টাকা নেওয়া, ‘টোলে’র হিসেব না দেওয়ার অভিযোগ উঠছিল। দু’পক্ষের আলোচনার জন্য দিনও নির্ধারিত হয়। তবে শ’পাঁচেক গ্রামবাসী জড়ো হলেও আসেননি নেতারা কেউই। এর পরেই তোলাবাজি, দুর্নীতির অভিযোগে হামলা চলে অভিযুক্ত তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য ও দুই নেতার বাড়িতে।
গলসি ১ ব্লকের পারাজ পঞ্চায়েতের ঝাড়ুল গ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ, ‘‘সরকারি প্রকল্পের সুবিধে দেওয়ার জন্য টাকা তোলা হয়েছে। একশো দিনে কাজ করার পরে টাকা মেলেনি। নেতাদের জবাব দিতে হবে।’’
তৃণমূলের নেতাদের অবশ্য দাবি, গ্রামের লোকজন নয়, বিজেপিই অশান্তি পাকাচ্ছে। তৃণমূলের গলসি ১ ব্লক সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, ‘‘গ্রামে অশান্তি পাকাচ্ছে বিজেপি। গ্রামবাসীদের তাতানো হচ্ছে। পুলিশকে লিখিত ভাবে অভিযোগ করা হবে।’’ যদিও বিজেপির তফসিলি মোর্চার সভাপতি ছোটন মাজির পাল্টা, ‘‘দু’মাস ধরে ওই গ্রামের মানুষ হিসেব চাইছেন। নেতাদের অন্যায় স্বীকার করে নিতে বলছেন। কিন্তু তৃণমূলের নেতারা গা করেননি। তাতেই ক্ষোভ জন্মেছে। এর সঙ্গে বিজেপি কোনও ভাবেই জড়িত নয়।’’
মঙ্গলবার কলকাতায় বৈঠকে দলের নেতা-কর্মীদের ‘তোলাবাজি’র টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। চোরেদের দলে না রাখার হুঁশিয়ারিও দেন। তার পরেই রাজ্যের নানা জায়গায় অশান্তির অভিযোগ উঠেছে। তৃণমূল নেতাদের বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগও উঠেছে। ঝাড়ুল গ্রামের ঘটনাও তার জেরেই, দাবি বিরোধীদের। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, পারাজ পঞ্চায়েতের সদস্য গোরাচাঁদ মাঝি প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বাড়ি তৈরির জন্য প্রত্যেকের কাছ থেকে হাজার দশেক করে টাকা নিয়েছেন। একশো দিনের প্রকল্পে সাধারণ গ্রামবাসীদের চেয়ে তৃণমূল সমর্থকেরা বেশি কাজ পেয়েছেন বলেও তাঁদের দাবি। পিঙ্কি মাজি, বাপন রুইদাসদের অভিযোগ, ‘‘গ্রামের শঙ্কর মাঝির বাড়ি থেকে ভ্রমর মাঝির বাড়ি পর্যন্ত ১০০ মিটার রাস্তা পাকা হয়েছে দেখিয়ে ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা লুটেছে পঞ্চায়েত। বাস্তবে কিছুই হয়নি।’’ সোনালি বাগদির দাবি, ‘‘৮-৯ দিন কাজ করেছি। এক পয়সাও পাইনি।’’ গ্রামবাসীদের আরও অভিযোগ, মাণিকবাজার মোড় থেকে ঝাড়ুল গ্রাম পর্যন্ত কাঁচা রাস্তা মেরামতির জন্য টোল আদায় করা হয় স্থানীয় ভাবে। গত তিন বছর ধরে সে হিসেব রয়েছে তৃণমূল নেতা দিলীপ ঘোষের কাছে। কিন্তু বারবার চাওয়ার পরেও হিসেব দেননি তিনি।
বৃহস্পতিবার এ সব আলোচনার জন্যই নেতাদের সঙ্গে বসার কথা ছিল তাঁদের। কিন্তু কেউ না আসায় ক্ষোভে শুরু হয় অশান্তি। অভিযোগ, পঞ্চায়েত সদস্য গোরাচাঁদের বাড়িতে হামলা হয়। বাড়ির সদস্যদের গালিগালাজ করার অভিযোগ ওঠে। তৃণমূল নেতা দিলীপ ঘোষ ও সমীর ঘোষের বাড়িতেও চড়াও হয়ে ইটপাথর ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। পুলিশ পৌঁছে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে। ব্লক অফিসে অভিযোগ জানাতে বলার পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। রাত পর্যন্ত গ্রামে পাহারা দেয় পুলিশ।
যদিও অভিযুক্ত তিন নেতার কেউই বাড়িতে ছিলেন না। কারও সঙ্গে যোগাযোগও করা যায়নি। দিলীপবাবুর বাড়িতে থাকা এক বৃদ্ধার দাবি, ‘‘বিজেপি জেতার পর থেকেই মারার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। হামলাও গ্রামের লোক নয়, ওরাই করেছে।’’ এ দিন হামলার সময় ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি দেওয়া হচ্ছিল বলেও তাঁর দাবি।
পারাজ পঞ্চায়েতের প্রধান সাজাহান শেখের দাবি, ‘‘দুর্নীতির কোনও লিখিত অভিযোগ হয়নি। সব কাজ নিয়ম মেনেই হয়। কাজ না করে টাকা নেওয়ার অভিযোগও ঠিক নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy