Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Crop Insurance

ফসলবিমায় বেড়েছে আগ্রহ, দাবি

প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জেরে গত বছর আলু চাষে ক্ষতি হয়েছিল। দেরিতে হলেও আলু চাষিরা বিমা সংস্থার কাছে ক্ষতিপূরণ পেয়েছিলেন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সৌমেন দত্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২০ ০০:১৫
Share: Save:

ফলন মার খাওয়ায় লোকসানের মুখে পড়তে হয়েছে, নানা ফসলের ক্ষেত্রেই অভিযোগ করেন চাষিরা। কিন্তু সে লোকসানের ভার কমাতে চাষিদের বড় অংশ ফসলবিমা করানোর রাস্তায় হাঁটেননি বলে বারবার দাবি করেছেন কৃষি দফতরের কর্তারা। অবশেষে চাষিদের মধ্যে এই বিমা নিয়ে খানিকটা সচেতনতা দেখা যাচ্ছে, চলতি রবি ও বোরো মরসুমে জানাচ্ছেন পূর্ব বর্ধমানের কৃষি-কর্তারা।

প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জেরে গত বছর আলু চাষে ক্ষতি হয়েছিল। দেরিতে হলেও আলু চাষিরা বিমা সংস্থার কাছে ক্ষতিপূরণ পেয়েছিলেন। এ বার ‘বুলবুল’-এর প্রভাবে আলু চাষের সময় পিছিয়ে গিয়েছে। ফলন ভাল হবে, তা জোর দিয়ে বলতে পারছেন না কৃষি-কর্তারা। বোরো ধান ওঠার মুখে অনেক সময়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা পোকামাকড়ের আক্রমণে ক্ষতি হয়। এ সব কারণেই ফসলবিমায় আগ্রহ বেড়েছে বলে দাবি চাষিদের বড় অংশের। যদিও কৃষি দফতরের দাবি, লাগাতার প্রচার ও বিমার কিস্তির টাকা রাজ্য সরকার দিয়ে দেওয়া এর অন্যতম কারণ। বিকল্প চাষেও বিমা করাতে এগিয়ে আসছেন অনেকে, জানান কৃষি-কর্তারা।

জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার খরিফ মরসুমের চেয়ে প্রায় ২৫ শতাংশ বেশি চাষি রবি ও বোরো মরসুমে ফসলবিমা করিয়েছেন। দফতরের হিসাব অনুযায়ী, মোট চাষির ৭৯% ফসলবিমার আওতায় এসেছেন। গত বারের চেয়েও বেশি চাষি এ বার বিমার আওতায় এসেছেন বলে কৃষি-কর্তাদের দাবি। দফতর সূত্রে জানা যায়, আলুর জন্য ৪৭,২৮৮ জন চাষি বিমা করিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে মাত্র ১০৯ জন কৃষিঋণের আওতার বাইরে রয়েছেন। আবার বোরো ধানে কৃষিঋণের আওতায় থেকে ফসলবিমা করানো কৃষকের সংখ্যা ১ লক্ষ ৩৪ হাজার ৮৯৩ জন। কৃষিঋণের বাইরে থাকা ১ লক্ষ ৭৪ হাজার ৬২০ জন ফসলবিমা করিয়েছেন। সব মিলিয়ে, বোরো ধানের জন্য বিমা করানো চাষির সংখ্যা প্রায় তিন লক্ষ সাড়ে ন’হাজার, গত বছরের চেয়ে যা কয়েক হাজার বেশি বলে কৃষি দফতরের দাবি।

কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বছর বিকল্প চাষেও ফসলবিমা করাতে আগ্রহ দেখিয়েছেন কিছু চাষি। দফতরের হিসাবে, মুসুর ডালে কৃষিঋণের বাইরে থাকা ৩০৯ জন ফসলবিমা করিয়েছেন। সর্ষে চাষে কৃষিঋণ নেওয়া ১৯২ জন ও তা ছাড়া, ৩৪১১ জন বিমা করিয়েছেন। গম চাষে ৬৬ জন ফসলবিমা করিয়েছেন। গলসির চাষি শেখ সমিরুদ্দিন, কালনার রামচরণ টুডুদের কথায়, ‘‘বিমার টাকা কি আদৌ মেলে, তা নিয়ে চাষিদের সংশয় থাকে। কিন্তু গত কয়েকবছর ধরে দেরিতে হলেও বিমার টাকা মিলছে। তাই আগ্রহ বাড়ছে।”

যদিও সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা কৃষকসভার জেলা সভাপতি উদয় সরকারের অভিযোগ, ‘‘সব চাষিকে ফসলবিমার আওতায় আনতে পারছে না সরকার। আবার বিমার টাকা নিয়েও কমিশন, ‘কাটমানি’র সমস্যা থাকায় চাষিরা উৎসাহ হচ্ছেন না। কৃষি নিয়ে সরকারের গাফিলতি চাষিদের খাদের কিনারায় ঠেলে দিচ্ছে।’’ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার অবশ্য বলেন, ‘‘ফসলবিমার উপরে রাজ্য সরকার বেশ কয়েক বছর ধরেই জোর দিয়েছে। সে জন্য চাষিদের বিমার কিস্তি দিতে হয় না। তার ফল মিলছে। সামান্য কারণে চাষিদের বিমার টাকা যাতে না আটকে যায়, তা সহ-কৃষি অধিকর্তাদের নজর রাখতে বলা হয়েছে।’’ তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘আগের আমলে ফসলবিমা সম্বন্ধে চাষিরা কি কিছু জানতেন?’’

জেলার উপ-কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়েরও বক্তব্য, ‘‘ফসলবিমার জন্য বাড়ি-বাড়ি প্রচার চালানো হয়েছিল। তার ফল মিলছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘নানা কারণে সবাই ফসলবিমার সুযোগ নিতে পারেন না। কেন তাঁরা সুযোগ হাতছাড়া করছেন, তা জানতে সমীক্ষা করার কথা ভাবা হচ্ছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Crop Insurance Burdwan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy