চলছে রবি চাষের জন্য জমি তৈরির কাজ। মঙ্গলকোটের বারুইপাড়ায়। ছবি: প্রদীপ মুখোপাধ্যায়
‘জলদি’ বা পোখরাজ জাতের আলু চাষের জমি তৈরি করছেন চাষিরা। আমন ধান ওঠা শুরু করলেই জ্যোতি আলুর চাষের জমি তৈরি শুরু হবে। জমি তৈরিতে প্রয়োজন ‘সুষম’ সারের। সে কারণে নাইট্রোজেন, পটাশ ও ফসফেট সারের সংমিশ্রণে তৈরি (১০:২৬:২৬) সারের খোঁজে দোকানে যাচ্ছেন চাষিরা। কিন্তু তাঁদের দাবি, ওই সারের সরবরাহ অপ্রতুল। বিকল্প সার ব্যবহার করলে খরচ বাড়বে। পর্যাপ্ত ফলন নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। কৃষি দফতরের কর্তাদের অবশ্য দাবি, বিকল্প সার প্রয়োগ করলে ফলনে ঘাটতি হবে না। সব চাষিই ‘১০:২৬:২৬’ সার চাওয়ায়, ঘাটতি প্রকট হয়েছে।
ব্যবসায়ীদের দাবি, গত বছর থেকেই ওই সারের সঙ্কট চলছে। এ বছর জেলায় ওই সারের বিশেষ জোগান আসেনি এখনও। বিভিন্ন সার প্রস্তুতকারী সংস্থার দাবি, ১০:২৬:২৬ সারের ৫০ কেজির বস্তার সরকার নির্ধারিত দাম ১৪৭০ টাকা। কিন্তু বেড়েছে উৎপাদন খরচ। আন্তর্জাতিক বাজারে ফসফেটের দাম বাড়ছে। নিকট ভবিষ্যতে তা কমার সম্ভাবনা কম। সে কারণে ওই সারের উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি। ফলে, বাজারে তৈরি হয়েছে ‘সঙ্কট’।
‘ইফকো’ সূত্রে জানা যায়, পূর্ব বর্ধমানে আলু চাষের জন্য প্রায় ৬০ হাজার টন ‘১০:২৬:২৬’ সারের চাহিদা থাকে। ১০ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে সারের জোগান জেলায় সর্বোচ্চ হয়। অক্টোবর থেকেই ব্যবসায়ী ও চাষিরা সার মজুত করেন। ইফকোর পূর্ব বর্ধমানের ফিল্ড ম্যানেজার কৌশিক সানার দাবি, “এখন বড়জোর ২০০-৩০০ টন ১০:২৬:২৬ মজুত রয়েছে। ব্যবসায়ী ও চাষিদের ডিএপি (ডাই অ্যামোনিয়াম ফসফেট) এবং অন্য বিকল্প সার নিতে বলছি।’’ শক্তিগড়ের চাষি শেখ সামসের আলম, মেমারির মহেশ চন্দ্র, জামালপুরের দেবু দাসদের অবশ্য দাবি, “১০:২৬:২৬ আসলে সুষম সার। সমপরিমাণে তিন রকম সার থাকায় জমির উর্বরতা নষ্ট হয় না। ফলনও বাড়ে। রোগ-পোকার আক্রমণ থেকেও ফসল রক্ষা করে। বিকল্প সারে চাষ করলে খরচ প্রায় দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’’
যদিও বর্ধমান কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের (কৃষি উৎপাদন ও বিপণন) প্রশাসনিক আধিকারিক তপন গণের দাবি, “ডিএপি দিয়ে চাষ করলে বিঘায় খরচ দেড় হাজার টাকা কম হবে। ফলনও ভাল হবে। এটা চাষিদের বুঝতে হবে। তাঁদের বোঝাতে হবে কৃষি দফতরকে।’’ জেলার উপ-কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) আশিসকুমার বারুইয়ের দাবি, “সব চাষিই ১০:২৬:২৬ সারের দিকে ঝুঁকছেন বলে ঘাটতি বেশি হচ্ছে। তাঁদের ইউরিয়া, ফসফেট ও পটাশের সংমিশ্রণ করে চাষ করার পরামর্শ দিচ্ছি। তাতে তাঁদের ভালই হবে।’’
জেলার অন্যতম সহ-কৃষি আধিকারিক সুকান্ত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বেশির ভাগ চাষি দীর্ঘদিন ধরে বেশি মাত্রায় ১০:২৬:২৬ সার প্রয়োগ করে আসছেন রবি মরসুমে। এই সার ছাড়াও, কোন কোন সার গাছের খাদ্য হিসেবে কত মাত্রায় দিতে হয়, তা আমরা চাষিদের মধ্যে প্রচার করছি লিফলেটের মাধ্যমে।’’ তাঁর আরও দাবি, জেলায় রবি চাষের জন্য প্রয়োজনীয় সার যথেষ্টপরিমাণে রয়েছে। শীঘ্র জেলায় আরও সার আসবে।
কালনা-সহ বেশ কিছু এলাকার চাষিদের একাংশের দাবি, বহু ডিলার এই সুযোগে বেশি দামে ১০:২৬:২৬ সার বিক্রি করছেন। অনেকে ওই সার বিক্রির শর্ত হিসেবে অনুখাদ্য নিতে বাধ্য করছেন। যদিও কালনার সহ-কৃষি আধিকারিক পার্থ ঘোষের বক্তব্য, ‘‘এ ব্যাপারে চাষিদের তরফে এখনও পর্যন্ত আমাদের লিখিত ভাবে কেউ কিছু জানাননি। জানালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ রবি মরসুমে সার কোথায় কী ভাবে বিক্রি হচ্ছে, সে নজরদারিও চলছে বলে জানান তিনি।
(সহ-প্রতিবেদন: কেদারনাথ ভট্টাচার্য)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy