Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Manteswar

ক্ষতিপূরণের টাকায় সেতু তৈরি চাষিদের

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায, প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য বছর চারেক আগে বসতপুরের প্রায় দেড়শো চাষি ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রায় ছ’লক্ষ টাকা পান। তা দিয়ে তৈরি হচ্ছে সেতু।

সাঁকোর পাশেই গড়া হচ্ছে পাকা সেতু। ছবি: সুদিন মণ্ডল।

সাঁকোর পাশেই গড়া হচ্ছে পাকা সেতু। ছবি: সুদিন মণ্ডল।

সৌমেন দত্ত
মন্তেশ্বর শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২১ ০৩:৩৫
Share: Save:

দৈনন্দিন প্রয়োজনে নদী পারাপারের জন্য সাঁকো রয়েছে। কিন্তু ফসল নিয়ে যাতায়াত ও পড়ুয়াদের পারাপারের জন্য দরকার ছিল পাকা সেতুর। প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য পাওয়া ক্ষতিপূরণ ব্যক্তিগত প্রয়োজনে খরচ না করে তা ব্যাঙ্কে জমিয়ে রেখেছিলেন এলাকার কৃষিজীবী মানুষজন। সুদ-সহ সেই টাকা তুলে নিজেদের উদ্যোগেই বাঁকা নদীতে সেতু তৈরির কাজ শুরু করেছেন পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বরের বসতপুরের ওই বাসিন্দারা। তাঁরা জানান, সেতু ও সংযোগকারী রাস্তা তৈরির জন্য আরও বেশ কিছু টাকা দরকার। তা-ও তাঁরা চাঁদা তুলে জোগাড় করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ওই এলাকা থেকে কিলোমিটার খানেক দূরে মন্তেশ্বর-মেমারি রোডে ঝিকরা সেতু রয়েছে। বসতপুরে পারাপারের জন্য রয়েছে একটি বাঁশের সাঁকো। বসতপুরের উল্টো পাড়ে রয়েছে মেমারি ২ ব্লকের সোঁতলা গ্রাম। সেখানে জমি রয়েছে বসতপুরের অনেকের। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ফসল আনা-নেওয়ায় সমস্যা হয়। অনেকটা ঘুরে যাতায়াত করতে হয়। এলাকার অনেক ছেলেমেয়ে সোঁতলার হাইস্কুলে পড়তে যায়। গ্রামবাসী অমল ঘোষ, রূপা কোলে, কবিতা কোলেদের দাবি, ‘‘বর্ষার সময়ে সাঁতার কেটে বা টিউব ভাসিয়ে স্কুলে যেতে হয় ওদের। বাড়ি না ফেরা পর্যন্ত চিন্তায় থাকি আমরা। তাই এলাকায় একটি সেতু হলে সুবিধা হয়।’’

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায, প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য বছর চারেক আগে বসতপুরের প্রায় দেড়শো চাষি ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রায় ছ’লক্ষ টাকা পান। গ্রামবাসী পল্টু বিশ্বাস, সমীর ঘোষেরা জানান, গ্রামের নেতৃত্ব স্থানীয়দের কাছে তাঁরা কয়েকজন প্রস্তাব রাখেন, এই টাকা সবাই মিলে ব্যাঙ্কে রাখা হোক। পরে তা দিয়ে সেতু তৈরি করা যাবে। তাঁদের দাবি, ‘‘ক্ষতিপূরণের টাকা চাষের কাজের চেয়ে অন্য নানা ভাবে খরচ করে ফেলে অনেকেই। তার চেয়ে তা দিয়ে সেতু তৈরি করলে, একটা সমস্যার স্থায়ী সমাধান মিলবে বলে মনে হয়েছিল।’’

বাসিন্দারা জানান, গ্রামের বারোয়ারিতলায় এই প্রস্তাব নিয়ে বৈঠক হয়। অন্য ক্ষতিপূরণ প্রাপকেরা প্রস্তাবে সায় দেন। একটি কমিটি গড়া হয়। ঠিক হয়, সবাই চেক ভাঙিয়ে টাকা কমিটির কাছে জমা দেবে। তা ‘মধ্যমগ্রাম সমবায় সমিতি’তে অ্যাকাউন্টে রাখা হবে। গত ফেব্রুয়ারিতে সুদ-সহ সাত লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা মেলে। তখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সাড়ে ছ’ফুট চওড়া ও ১৩৫ ফুট লম্বা সেতু তৈরি করা হবে। সেতুটি ধরে রাখার জন্য চারটি করে স্তম্ভ তৈরি করা হবে। সেইমতো স্থানীয় রাজমিস্ত্রিদের দিয়ে কাজ শুরু করে দেওয়া হয়। বর্ষায় বাঁকার জল বাড়ায় কাজ বন্ধ রাখা হয়। জমানো টাকাও শেষ হয়ে গিয়েছিল তার মধ্যে। ওই কমিটির সদস্য উত্তম বিশ্বাস বলেন, ‘‘সেতু তৈরির জন্য অন্তত ১৫ লক্ষ টাকা প্রয়োজন। ক্ষতিপূরণের বাইরেও গ্রামের অনেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। প্রায় ১০ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। সংযোগকারী রাস্তা তৈরি নিয়ে চিন্তা রয়েছে। তবে বাকি টাকা গ্রামবাসী চাঁদা তুলে দেবেন বলে ভেবেছেন।’’

পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ তথা তৃণমূলের মন্তেশ্বর ব্লকের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা বাগবুল ইসলাম বলেন, ‘‘নজিরবিহীন ঘটনা। প্রশাসনও যাতে ওই বাসিন্দাদের পাশে থাকতে পারে, সে জন্য যথাসম্ভব চেষ্টা করব।’’ মধ্যমগ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তথা বসতপুরের তৃণমূল সদস্য সুমন্ত রায় বলেন, ‘‘প্রয়োজনীয় অনুমোদন জোগাড় করে সেতু তৈরিতে নেমেছেন গ্রামবাসী।’’ মন্তেশ্বর পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি আহমেদ শেখ বলেন, ‘‘ওই এলাকা থেকে কিছুটা দূরেই পাকা সেতু রয়েছে। তাই প্রশাসনিক উদ্যোগে ওখানে স্থায়ী সেতু তৈরি সম্ভব ছিল না। গ্রামবাসীর উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Manteswar Bridge Farmer Compensation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy