Advertisement
০২ ডিসেম্বর ২০২৪
Potato Onion Price

আলু-পেঁয়াজ চাষে খরচ বাড়ছে, লাভ নিয়ে শঙ্কা

মেমারির চাষি রহিম মণ্ডল বলেন, ‘‘আলু চাষে শুরুতে মোটা অঙ্কের টাকা খরচ হয়। এ বার যা পরিস্থিতি, তাতে শেষ পর্যন্ত বিঘা প্রতি খরচ হবে প্রায় ৪০ হাজার টাকা।

পেঁয়াজের ঝাঁঝে চোখে জল। দোসর আলুও।

পেঁয়াজের ঝাঁঝে চোখে জল। দোসর আলুও। —প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
কালনা শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৯:১৬
Share: Save:

আমন ধান কাটা, ঝাড়ার ফাঁকে পূর্ব বর্ধমান জেলার চাষিরা আলু চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে চাষিদের ভাবাচ্ছে বীজ এবং সারের চড়া দাম। পাশাপাশি, চারার দাম বাড়ায় পেঁয়াজ চাষেও সমস্যায় পড়েছেন চাষিরা।

পূর্ব বর্ধমান জেলায় প্রায় ৭২ হাজার হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়। চাষিরা জানিয়েছেন, রাজ্যে ভাল আলুবীজ উৎপাদন হয় না। ফলে বেশির ভাগ চাষিকে ভিন্‌ রাজ্যের, বিশেষ করে পঞ্জাবের বীজের উপরে নির্ভর করতে হয়। গত বছর দুর্যোগে চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এ বার ভিন্‌ রাজ্যের বীজের চাহিদা আরও বেড়েছে। বাজারে ভাল মানের আলু বীজ বস্তা পিছু বিক্রি হচ্ছে ৩০০০-৩২০০ টাকায়। ক্রমশ বাড়ছে বীজের দর। শুরুতে আলু চাষে বিঘা প্রতি জমিতে প্রয়োজন হয় ছ’বস্তা সারের। যার মধ্যে চার বস্তা চাষিরা ব্যবহার করেন ১০-২৬-২৬ সার। এই সার বস্তা পিছু বিক্রি হচ্ছে ১৮০০-১৮৫০
টাকা দরে।

মেমারির চাষি রহিম মণ্ডল বলেন, ‘‘আলু চাষে শুরুতে মোটা অঙ্কের টাকা খরচ হয়। এ বার যা পরিস্থিতি, তাতে শেষ পর্যন্ত বিঘা প্রতি খরচ হবে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। ফলন প্রতি বিঘায় গড়ে ৮০ বস্তা, বস্তা পিছু আলুর দাম ৫০০ টাকা হলে খরচ উঠবে। মোটা অঙ্কের অর্থ খরচ করে চাষে লাভ মিলবে কি না তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। সেই কারণে এ বার সব জমিতে আলুর চাষ করব
কি না ভাবছি।’’

কালনা ১ ব্লকের চাষি সন্দীপ কর্মকার জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় দানার বৃষ্টির কারণে জমির মাটি নরম থাকায় এ বার আমন ধান তুলতে অন্তত ১৫ দিন দেরি হয়েছে। শীত পড়ে গেলেও এখনও শুরু করা যায়নি আলুর চাষ। দেরি করে আলুর চাষ শুরু হওয়ার কারণে ফলনে প্রভাব পড়তে পারে।ফলে চড়া দামে আলুবীজ, সার কিনে চাষ করে এ বার কিছুটা ঝুঁকির আশঙ্কা থাকছে। তা-ই দশ বিঘা জমির সব অংশে আলু চাষ করবেন না বলে ঠিক করেছেন তিনি।

এ বার অনেকেই আলুর জমি চুক্তিতে অন্য চাষিদের দিতে চাইছেন। কোথাও চুক্তি হচ্ছে আর্থিক, কোথাও বিঘা প্রতি জমিতে ৫০ কেজি বস্তা দেওয়ার বিনিময়ে। চাষিদের দাবি, কয়েক বছর আলু চাষে লাভ মেলেনি। গত দু’বছর শুরুতে দুর্যোগের কারণে বহু জমিতে আলু বীজ পচে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বেড়েছিল চাষের খরচ। এই পরিস্থিতিতে চুক্তিতে জমি নিয়ে আলু চাষেও তেমন আগ্রহ নেই।

তবে কি এ বার আলু চাষ কমবে? জেলার এক কৃষিকর্তার কথায়, ‘‘কত এলাকায় আলু চাষ হল তা বলার সময় এখনও আসেনি। আশা করা যায় জমি পড়ে থাকবে না।’’ আলুর পাশাপাশি রবি মরসুমে পেঁয়াজের চাষ করতেও সমস্যায় পড়েছেন জেলার চাষিরা। বিঘা প্রতি সুখসাগর পেঁয়াজের চারা লাগে ৮০-১০০ কেজি। গত বছর চারার দাম ছিল ৩০-৪০ টাকা কেজি। এ বার পেঁয়াজের চারা বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ১৮০-২০০ টাকায়।’’

কালনার নান্দাইয়ের চাষি বাপি শেখ বলেন, ‘‘শুরুতে বিঘা প্রতি জমিতে ১৪-১৫ হাজার টাকা চারা কিনতে চলে যাচ্ছে। ফলে চাষের খরচ এক লাফে অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। পেঁয়াজের চাষ ছেড়ে অনেকেই সর্ষে, ধনের চাষ করছেন।’’ তাঁর দাবি, এ বার দুর্যোগে পেঁয়াজের বীজতলার ব্যাপক ক্ষতি হয়। চাহিদার তুলনায় পেঁয়াজের চারা অনেক কম।

পূর্ব বর্ধমান থেকে সম্প্রতি নদিয়ায় বদলি হওয়া সহ কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষ বলেন, ‘‘পেঁয়াজের চারার দর অনেক বেড়েছে। পেঁয়াজ চাষ করতে না পারলে সর্ষে, ধনে এবং কোনও কোনও এলাকায় শীতকালীন আনাজের চাষ করা উচিত।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Kalna
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy