Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
Ethanol Factory

জ্বালানিতে ইথানল, আশা ধানের দামে

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, পূর্ব বর্ধমানে রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চালকল রয়েছে। ইথানলের কাঁচামাল হিসেবে ভাঙা-চাল বা খুদকুঁড়ো বেশি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে পূর্ব বর্ধমানেই।

গলসিতে তৈরি হচ্ছে ইথানল তৈরির কারখানা। নিজস্ব চিত্র

গলসিতে তৈরি হচ্ছে ইথানল তৈরির কারখানা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২৩ ০৭:৪৮
Share: Save:

কাল, শুক্রবার থেকে পেট্রোলের সঙ্গে ইথানল মেশানো জ্বালানির উপযুক্ত যন্ত্রাংশের নতুন গাড়ি তৈরি হবে। কেন্দ্রের লক্ষ্য, ২০২৫ সালের এপ্রিল থেকে সব গাড়ির ইঞ্জিনই ‘ই-২০’ তেল ব্যবহারযোগ্য হবে। পূর্ব বর্ধমানেও গলসি এবং আউশগ্রামে দুটি ইথানল তৈরির কারখানা গড়ে উঠছে। জেলা প্রশাসনের দাবি, আরও দুটি ইথানল কারখানা তৈরির প্রস্তাব রয়েছে। এর ফলে, চাষিদের লাভ হবে এবং কর্মসংস্থানের সম্ভাবনাও বাড়বে।

এ দিকে, ইথানলের কারখানা গড়ার সাফল্য নিয়ে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে দড়ি টানাটানি শুরু হয়েছে। তৃণমূলের দাবি, ২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বর পশ্চিম বর্ধমানের পানাগড়ে একটি অনুষ্ঠানে ইথানল তৈরির ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাতেই উৎসাহ হয়ে শিল্পপতিরা বর্ধমানে ইথানল কারখানা গড়তে এগিয়ে আসেন। বিজেপির পাল্টা দাবি, এখন পেট্রলের সঙ্গে ১০ শতাংশ ইথানল মেশানো তেল চালু গাড়িতে ব্যবহার করা যায়। আগামী ১ এপ্রিল থেকে সব ‘ই-২০’ জ্বালানির জন্য উপযুক্ত যন্ত্রাংশের নতুন গাড়ি তৈরি শুরু হবে। কেন্দ্রের নীতিতে ইথানলের ব্যবহার বাড়বে, সে কারণেই শিল্পপতিরা উৎসাহিত হয়েছেন।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, পূর্ব বর্ধমানে রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চালকল রয়েছে। ইথানলের কাঁচামাল হিসেবে ভাঙা-চাল বা খুদকুঁড়ো বেশি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে পূর্ব বর্ধমানেই। সেই কারণেই দুটি সংস্থা আউশগ্রামের বেলারি ও গলসির গলিগ্রামে প্রায় ১০০ বিঘা জমির উপরে কারখানা তৈরি করেছে। প্রশাসনের কর্তাদের দাবি, দুটি কারখানায় প্রায় ২৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হচ্ছে। সরাসরি ৯০ থেকে ১০০ জনের কর্মসংস্থান হবে। এ ছাড়াও পরোক্ষ ভাবে অনেকের কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা রয়েছে।

পানাগড় থেকে মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছিলেন, চাল থেকে ইথানল গড়ার কাজ শুরু হলে রাজ্যে দেড় হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ আর ৪৮ হাজারের বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। চাষিরাও লাভবান হবেন। কৃষি বিশেষজ্ঞদের দাবি, খুদ থেকে সবচেয়ে কম খরচে ইথানল তৈরি করা যায়। মূলত চালকল থেকেই খুদ মেলে। এর ফলে, ধুঁকতে থাকা চালকলগুলিও প্রাণ পাবে। কৃষি বিজ্ঞানী কৌশিক ব্রহ্মচারী বলেন, ‘‘১০০ গ্রাম ভাঙা চাল থেকে ২৯.২ গ্রাম ইথানল তৈরি হবে। ফলে ওই জাতীয় চালের চাহিদা বাড়বে। তাতে দাম বাড়লে ধানেরও দাম পাবেন চাষিরা।’’ আইআইটির খড়্গপুরের বিজ্ঞানী শীর্ষেন্দু দে বলেন, ‘‘খুদ থেকে তিনটে স্তরে ইথানল তৈরি করা যায়। আমাদের রাজ্যে ইথানল কারখানা তৈরি হলে লাভের সম্ভাবনা রয়েছে।’’ ইথানল উৎপাদনকারী সংস্থার এক ডিরেক্টর আয়ূষ আগরওয়ালের দাবি, প্রতিদিন ১০০ কিলোলিটার ইথানল তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। কৃষি দফতরের উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদারও বলেন, ‘‘বেসরকারি ক্ষেত্রে ইথানল কারখানা তৈরিতে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।’’

গলসির চাষি রামরতন সাহা, আউশগ্রামের ইবাদত আলিরা মনে করেন, ইথানল কারখানা হলে তাঁরা লাভবান হবেন। তাঁদের কথায়, ‘‘ধানের কোনও অংশই ফেলা যায় না। ধানের ব্যবহার বাড়লে চাহিদা বাড়বে। তাতে ধানের দামও বাড়বে। অভাবী বিক্রি কম হবে।’’ চালকল মালিকদের রাজ্যের সংগঠন ‘বেঙ্গল রাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’ সূত্রে জানা যায়, রাজ্যে ১৫ থেকে ২০ লক্ষ মেট্রিক টন ভাঙা চাল হয়। ওই চালের বেশির ভাগটাই মদশিল্পে ব্যবহৃত হয়। সংগঠনের রাজ্যের কার্যকরী সভাপতি আব্দুল মালেক বলেন, ‘‘ইথানলের কারখানা গড়ে উঠলে আমাদের আর কম দামে ভাঙা চাল বিক্রি করতে হবে না। চালকল বাঁচবে, চাষিরাও ধানের স্থিতিশীল দর পাবেন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Ethanol Factory Bardhaman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE