পূর্বস্থলীতে চলছে আলু তোলা। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল।
আবহাওয়া ভাল থাকায় ভাল ফলনের আশা রয়েছে। কিন্তু জলদি জাতের আলু জমি থেকে ওঠার পরে, যে দরে বিক্রি হয়েছে, তাতে মাথায় হাত আলু চাষিদের। এই দামে আলু বিক্রি করতে হলে লোকসানের মুখে পড়তে হবে, দাবি তাঁদের অনেকেরই। এমন পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকারের ৬ টাকা কেজি দরে ১০ লক্ষ টন আলু কেনার সিদ্ধান্তে খানিক স্বস্তি আলু চাষিদের মধ্যে। এই দরে আলু বিক্রি করে লাভ যদি না-ও হয়, এর জেরে খোলা বাজারে দর বাড়বে— এমনটাই আশা করছেন তাঁরা।
সোমবার নবান্নে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ঠিক হয়, এ বার চাষিদের কাছে ন্যায্য দামে আলু কিনে নেওয়া হবে। অন্তত ১০ লক্ষ টন জ্যোতি আলু ছ’টাকা কেজি দরে বিভিন্ন হিমঘর কিনে নেবে বলে ঠিক হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের কারণ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার মঙ্গলবার বলেন, ‘‘অভাবি দরে ফসল কেনার জন্য অনেকে সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। সরকার কেনা শুরু করলে তারাও বেশি দরে কিনতে শুরু করে।’’
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার জেলায় প্রায় ৭৩,৬৭৬ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে, গত বারের থেকে যা প্রায় তিন হাজার হেক্টর বেশি। এর মধ্যে সাত-আট শতাংশ জমিতে জলদি জাতের পোখরাজ আলু চাষ হয়। সম্প্রতি সে আলু জমি থেকে উঠেছে। চাষিরা জানান, মঙ্গলবার প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) সেই আলু বিক্রি হয়েছে ২৭০-২৮০ টাকায়। চাষিদের দাবি, এক দিকে যেমন চাষের এলাকা বেড়েছে, তেমনই ভাল মরসুমের কারণে ফলনও ভাল মিলবে। চাষিরা জানান, এ বার বস্তা পিছু আলুবীজ কিনতে হয়েছে ৪,৫০০-৫,২০০ টাকা দরে। প্রতি বিঘা জমিতে আলু চাষ করতে খরচ হয়েছে ৩৫-৪০ হাজার টাকা। বিঘা প্রতি জমিতে ফলন মেলে প্রায় একশো বস্তা করে। ফলে, সরকার কেজি প্রতি ছ’টাকা দরে আলু কিনলেও লাভ হবে না, দাবি চাষিদের।
তবে সরকারের সিদ্ধান্তে এক দিক থেকে স্বস্তি মিলেছে বলে জানান চাষিরা। মেমারির চাষি অরুণ চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘সরকার কেজি প্রতি ছ’টাকা দরে আলু কিনলেও লাভ হবে না। তবে সরকার আলু কেনা শুরু করলে বাজারদর কিছুটা চাঙ্গা হতে পারে, এটাই আশা।’’ কালনা ১ ব্লকের চাষি সুভাষ সরকারের দাবি, ‘‘২০১০ সালে সরকার আলু কিনেছিল বাজারদরের থেকে ১০০ টাকা বেশি দরে। সে বার কিছুটা লাভ হয়েছিল। এ বার সরকারের ঘোষণার পরে বাজারদর কী হয়, তার উপরেই অনেক কিছু নির্ভর করছে।’’ আলু জমি থেকে ওঠার পরপরই সরকার আলু কিনতে নামছে কি না, তার উপরেও দর নির্ভর করবে বলে চাষিদের অনেকের দাবি।
‘প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি’র জেলা সম্পাদক জগবন্ধু মণ্ডলের মতে, ‘‘সরকার আলু কিনলে বাজারদর একেবারে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।’’ জেলার হিমঘর মালিকদের সংগঠনের সভাপতি নবকুমার কুণ্ডু বলেন, ‘‘শুনেছি, হিমঘরগুলিতে আলু কেনা হবে। সাধারণত হিমঘরে মজুত আলুর একাংশ সরকারের জন্য বরাদ্দ রাখতে হয়। কী ভাবে, কতটা আলু কেনা হবে, তা নিয়ে সরকারি স্তরে বৈঠক হবে। সেখানেই বিষয়টি জানা যাবে।’’
ভোট ঘোষণা হয়ে গেলে কি আলু কেনা সম্ভব হবে? মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘সে ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের কাছে বিষয়টি নিয়ে আবেদন জানানো হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy