Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

অসময়ে ভাসল ধানখেত, পরপর অবরোধ চাষিদের

নোট বাতিলের চক্করে হাতেহাতে নগদ দিতে না পারায় এক দিকে ধান কাটার শ্রমিক মিলছে না, তার উপর পাকা ধানের খেত জলে ভর্তি। এই ক্ষোভেই সোমবার দুপুরে রাস্তা অবরোধ করেছিলেন ভাতার থানার বেশ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা।

অবরোধে আটকে গাড়ি, বাস, ট্রাক। নিজস্ব চিত্র।

অবরোধে আটকে গাড়ি, বাস, ট্রাক। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ভাতার শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৬ ০০:০০
Share: Save:

নোট বাতিলের চক্করে হাতেহাতে নগদ দিতে না পারায় এক দিকে ধান কাটার শ্রমিক মিলছে না, তার উপর পাকা ধানের খেত জলে ভর্তি। এই ক্ষোভেই সোমবার দুপুরে রাস্তা অবরোধ করেছিলেন ভাতার থানার বেশ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা। প্রশাসনের জল নামানোর আশ্বাস দেওয়ায় এক ঘন্টার মধ্যে অবরোধ উঠেও যায়। কিন্তু খেত জমি থেকে জল নামার কোনও ব্যবস্থা হয়নি মঙ্গলবারও। ফলে প্রশাসনের টনক নড়াতে ফের এ দিন সকালে অবরোধে নামেন প্রায় দুশো চাষি।

সকাল ন’টা থেকে বর্ধমান-কাটোয়া রোডের বেলেন্ডা পুলে অবরোধ শুরু করেন চাষিরা। অবরোধ তোলার জন্য স্থানীয় বিডিও বা প্রশাসনের কর্তাদেরও দেখা যায়নি। ফলে, টানা ৬ ঘন্টা রাজ্য সড়ক অবরুদ্ধ হয়ে থাকে। অভিযোগ, অবরোধ টপকে যেতে গেলে মোটরবাইকের চাবি কেড়ে নেওয়া হয়। বাস-লরি তো বটেই অবরোধের জেরে অ্যাম্বুল্যান্সকেও আটকে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এমনকী, দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরে অবরোধ উঠছে না দেখে যাত্রীরা ধৈর্য্যহীন হয়ে পড়লে অবরোধকারীদের সঙ্গে ধ্বস্তাধ্বস্তি শুরু হয়ে যায়। ঘটনাস্থলের কাছে পুলিশ থাকলেও তাঁদের কোনও ভূমিকা ছিল না বলে ভুক্তভোগী যাত্রীদের অভিযোগ। আটক এক যাত্রীর ক্ষোভ, “পথ অবরোধ করে কী সমস্যার সমাধান হবে।” এ দিকে, অসময়ে পাশাপাশি দু’টি সেচখাল দিয়ে জল এল কী ভাবে তা নিয়েও স্পষ্ট কোনও উত্তর দিতে পারছে না সেচ দফতর কিংবা কৃষি দফতর।

কৃষি দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভাতারের উপর দিয়ে যাওয়া ৯ ও ১১ নম্বর সেচখালের জল উপচে শনিবার রাত থেকে জল ঢুকতে থাকে ওই জমিগুলিতে। রবিবার সকালে পাকা ধানের খেতে জল দেখে মাথায় হাত পড়ে চাষিদের। স্থানীয় বিডিও-র সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বিডিও কোনও সদুত্তর দিতে না পারায় সোমবার দুপুরে মাহাচান্দা, ভাতার সহ চারটে গ্রাম পঞ্চায়েতের ১০ টি গ্রামের মানুষ বর্ধমান-কাটোয়া রাজ্য সড়কে অবরোধ শুরু করেন। ঘন্টা খানেক পর প্রশাসনের কর্তারা পুলিশের মাধ্যমে খবর পাঠান, রাত থেকে জল কমতে শুরু করে দেবে। ওই আশ্বাসের পরে অবরোধ তুলে নেয় চাষিরা। কিন্তু রাত থেকে জল কমার বদলে ফের জল বাড়তে থাকে বলে চাষিদের অভিযোগ। অবরোধকারী মন্টু শেখ, নিরণ শেখরা বলেন, “১০০ টাকার অভাবে ধান কাটতে পারছিলাম না। ১০০ টাকা জোগাড় করলাম তো পাকা ধানে জল ঢুকে গেল। প্রচুর ক্ষতি হয়ে গেল।” বেশ কয়েকজন চাষির দাবি, “ঝাড়খণ্ড, পুরুলিয়া থেকে ধান কাটার শ্রমিকেরা এসেছেন। তাঁদের সঙ্গে মোটা টাকার চুক্তিও হয়েছে। ধান কাটা শুরু হওয়ার মুখেই বিপর্যয়। ধাক্কা সামলানো মুশকিল।”

কিন্তু অসময়ে সেচখাল উপচে জল এল কী ভাবে? কৃষি দফতর মনে করছে, সেচ দফতরই ওই জল ছেড়েছে। তা না হলে দু’টি খাল দিয়ে প্রবল বেগে জল উপচে বিঘের পর বিঘে জমি ভাসাতে পারত না। আর সেচ দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন, গলসির কাছে একটি গ্রামে বাঁধ দিয়ে জল আটকে রাখা ছিল। প্রয়োজন মিটতেই জল ছেড়ে দেওয়াতে বিপত্তি ঘটেছে। ভাতারের কৃষি আধিকারিক বিপ্লব প্রতিহার বলেন, “চারটি গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৫টি মৌজা জলমগ্ন। এখনও পর্যন্ত ১১০০ হেক্টর জমির ধানের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা ব্লক প্রশাসনের কাছে রিপোর্ট পাঠিয়ে দিয়েছি।” ভাতারের বিডিও প্রলয় মম্ডল বলেন, “সমস্ত লকগেট বন্ধ করে দেওয়ার জন্য সেচ দফতরকে বলা হয়েছে। আশা করছি, বুধবার সকাল থেকে জল নেমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করবে।”

অন্য বিষয়গুলি:

demonetization
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy