গ্রামে এল দেহ। শোকার্ত বেলিবিবি। নিজস্ব চিত্র।
পথ দুর্ঘটনায় এক পরিবারের পাঁচ জন সদস্যের মৃত্যুর ঘটনায় সারা গ্রাম একত্রিত হয়ে শোকার্ত পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে মৃতদেহগুলি সৎকারের কাজে এগিয়ে এলেন। এবং ওই পরিবারের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে একে অপরের রাজনৈতিক রং ভুলে যেতেও দেখা গিয়েছে। বড়ঞার সৈয়দপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা এমনই নজির সৃষ্টি করছেন।
শুক্রবার কাটোয়া-বর্ধমান রাজ্য সড়কের উপর কামনাড়া মোড়ের পথ দুর্ঘটনায় পরিবারের দু’শিশু, দু’মেয়ে ও পরিবারের কর্তা-সহ মোট পাঁচ জনের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে সৈয়দপাড়া।
ওই ঘটনায় আরও তিন শিশু, দু’মহিলা ও এক ছেলের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মুম্বই থেকে বাড়ি ফিরছিলেন পরিবারের মেজো ছেলে কাওসর শেখ। তাঁকে কলকাতার বিমানবন্দর থেকে বাড়িতে আনতে ছোট গাড়ি ভাড়া করে গিয়েছিলেন সবাই মিলে। সেখান থেকে ফেরার সময় দুর্ঘটনা।
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ওই জখমদের চিকিৎসার দেখভাল করছেন বিপ্রশিখর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের সদস্য তথা ওই গ্রামের বাসিন্দা ফজলুর রহমান বলেন, “পরিবারের লোকজন ও আমাদের দলের ব্লক নেতৃত্বদের সঙ্গে পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসার সমস্ত ব্যবস্থা করা হয়েছে। আরিয়ান ও সোহেলের অবস্থার অবনতি হয়েছিল, কিন্তু এখন অনেকখানি সুস্থ হয়েছে। তবে দু’জনেই আইসিইউ চিকিৎসা চলছে।”
কালীর পুজোর পরের দিন ভোর রাতে কাটোয়া-বর্ধমান রাজ্য সড়কের উপর কামনাড়া মোড়ের ওই দুর্ঘটনায় সৈয়দপাড়ার একই পরিবারের পাঁচ জনের মৃত্যুর ঘটনায় সৈয়দপাড়া ছাড়িয়ে গোটা জেলে জুড়ে শোকের ছায়া নেমেছে। শনিবার বহরমপুর কেন্দ্রের সাংসদ তথা প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অধীর চৌধুরী সৈয়দপাড়ায় গিয়ে ওই পরিবারের লোকজনের সঙ্গে দেখা করে সমবেদনা জানিয়েছেন। তবে ওই একটি দুর্ঘটনায় গোটা গ্রামবাসীকে এক জায়গায় দাঁড় করিয়েছে। ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ওই পরিবারের কর্তা রাশেদ শেখের। গ্রামবাসীরা পরিবারের লোকজনের উপর আঁচ আসতে দেননি। মৃতদেহগুলি বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ থেকে ময়নাতদন্ত করার পর দেহ গ্রামে নিয়ে এসে সৎকারের সমস্ত ব্যবস্থা গ্রামের বাসিন্দারাই করেছেন।
ওই গ্রামের বাসিন্দা রাজু মির্জা, আজিজুল খাঁ, গোলাম গাউসরা বলেন, “মানুষের বিপদের দিন মানুষের পাশে থাকাটাই মানুষের কর্তব্য। সেটা সৈয়দপাড়ার বাসিন্দারা রাজনীতির রং ভুলে সেই কাজ করে দেখিয়েছে।”
ওই দিন পাঁচটি নিথর দেহ বাড়ির বাইরে নামানো হলে বর্তমানে ওই পরিবারের কর্ত্রী বেলি বিবি, বড় মেয়ে দুলালি বিবিরা ভেঙে পড়েন। দুলালি বিবি বলেন, “আমাদের পরিবারের সঙ্গে যে ঘটনা ঘটল, সেটা যেন আর কোনও পরিবারের সঙ্গে না ঘটে।”
ওই দিন পাঁচটি দেহ গ্রামের ফেরার সময় গ্রামের আট থেকে আশি সকলের চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি।
হাজির ছিলেন বিপ্রশিখর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান তৃণমূলের সুদীপ ভট্টাচার্য, বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা ও বড়ঞা ব্লকের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। প্রধান সুদীপ বলেন, “আমরা পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে ওই পরিবারের পাশে আছি, এবং পঞ্চায়েত থেকে যাতে বাকী জখমদের চিকিৎসার ব্যবসা করা যায় সেই বিষয়ে ব্লক প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা করছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy