প্রতীকী ছবি।
‘মাড়োয়ারি’ সম্প্রদায়ের ভোট রানিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের জন্য যে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, তা প্রকাশ্যে না হলেও ঘরোয়া আলোচনায় স্বীকার করেন প্রায় সব রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বই। কিন্তু ২০২১-এর বিধানসভা ভোট এবং সময়ে ভোট হলে আসানসোল পুর-নির্বাচনে এই ভোট কোন দিকে যাবে, তা নিয়ে শহরে শুরু হয়েছে জল্পনা। সম্প্রতি, তৃণমূল নেতৃত্বের একটি সিদ্ধান্ত সেই জল্পনাকে উস্কে দিয়েছে। গত ১৯ অগস্ট কলকাতায় তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছ থেকে দলের পতাকা নিয়েছেন ‘রানিগঞ্জ চেম্বার অব কর্মাস’-এর সভাপতি সন্দীপ ভালোটিয়া।
১৯৮৫, ১৯৯০-এ সিপিএম পরিচালিত সাবেক রানিগঞ্জ পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান করা হয় ডাক্তার রাজকুমার মিশ্রকে। ২০১০-এ একই পদের দায়িত্ব দেওয়া হয় সুনীল খাণ্ডেলওয়ালকে। রাজকুমারবাবু, সুনীলবাবু দু’জনেই মাড়োয়ারি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি।
কিন্তু কেন এই ‘গুরুত্ব’ দেওয়া? রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা: প্রথমত, দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম বৃহত্তম পাইকারি বাজার এই রানিগঞ্জে। শহরের ব্যবসায়ী মহল, তাঁদের উপরে নির্ভরশীল বহু মানুষের (বিশেষত অবাঙালি) রুটি-রুজির উপরে অনেকটাই ‘নিয়ন্ত্রণ’ রয়েছে বণিকসভার হাতে। সে সূত্রেই কি সন্দীপবাবুকে তৃণমূলে দলে টানা কি না, তা নিয়ে জল্পনা রয়েছে তৃণমূলের অন্দরেও। দ্বিতীয়ত, রানিগঞ্জ পুর-এলাকায় রয়েছেন দশ হাজারেরও বেশি মাড়োয়ারি ভোটার রয়েছেন। তাঁদের ‘প্রভাব’ রয়েছে অন্য অবাঙালি সম্প্রদায়গুলির মধ্যেও, দাবি শহরের এক প্রবীণ নেতার। তিনি জানান, রানিগঞ্জ পুর-এলাকার অর্ধেকের বেশি ভোটার মাড়োয়ারি-সহ অবাঙালি।
ঘটনাচক্রে, বিভিন্ন ভোটের ফলাফলের নিরিখে দেখা যায়, রাজ্য বা দেশ জুড়ে যা-ই হোক না কেন, রানিগঞ্জে এই সম্প্রদায়ের ভোট থেকেছে বামেদের সঙ্গে। ২০১১-র বিধানসভা ভোটে বামেরা প্রথমবার রানিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রটি হারে। কিন্তু সে বারও রানিগঞ্জ পুর-এলাকায় এগিয়ে ছিল বামেরাই। ২০১৬-র বিধানসভা ভোটে ফের এই বিধানসভায় জেতে বামেরা। সে বার দেখা যায়, পুর-এলাকায় বামেদের ভোট আরও বেড়েছে। এই দু’টি ফলই বলে দিচ্ছে, রানিগঞ্জে মাড়োয়ারি তথা অবাঙালি ভোট বামেদের পক্ষেই গিয়েছে। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে অবশ্য এই ভোট বিজেপি পেয়েছিল।
এই পরিস্থিতিতে সন্দীপবাবুর মতো মুখকে দলে টানার মধ্য দিয়ে আখেরে তিনি যে সম্প্রদায় থেকে আসছেন, তাকেও বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করল কি না তৃণমূল, সেটাই এখন চর্চার। যদিও তা মানেননি তৃণমূলের জেলা সভাপতি জিতেন্দ্র তিওয়ারি। তাঁর কথায়, ‘‘সব থেকে কম বয়সে রানিগঞ্জের বণিকসভার দায়িত্ব সামলাচ্ছেন সন্দীপবাবু। সেখানে দক্ষ প্রশাসকের পরিচয় দিচ্ছেন। স্বচ্ছ ভাবমূর্তির কারণেই তাঁকে দলে নেওয়া হয়েছে। তিনি কোন সম্প্রদায় থেকে আসছেন, তা দেখে নয়।’’
এই যোগদানকে বিশেষ আমল দিতে নারাজ সিপিএম বিধায়ক রুনু দত্ত। তাঁর দাবি, ‘‘সন্দীপবাবুর পরিচিতি বণিকসভার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তাই তাঁর তৃণমূলে যোগদান ভোটে কোনও প্রভাব ফেলবে না।’’ পাশাপাশি, সিপিএম-এর জেলা সম্পাদক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “রানিগঞ্জে মাড়োয়ারিদের একাংশ দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সেই ইতিহাসকে সঙ্গে নিয়ে যাঁরা প্রগতিবাদী, তাঁদেরই আমাদের দলের তরফে প্রতিনিধিত্ব করানো হয়েছে। কোনও সম্প্রদায়গত পরিচয় এখানে বড় ব্যাপার নয়।’’ এ দিকে, ‘‘মাড়োয়ারিরা আমাদের পুরনো ভোটার। তাই এক জনের তৃণমূলে যোগ নিয়ে ভাবার কিছু নেই’’, দাবি বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি প্রমোদ পাঠকের।
আর যাঁর দলে যোগদান নিয়ে এ সব জল্পনা, সেই সন্দীপবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘সর্বস্তরের মানুষের কাজ করতে আমি তৃণমূলে যোগ দিয়েছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy