প্রতি বছর এ ভাবেই জেলার নানা প্রান্তে নাড়া পোড়ানোর ছবি দেখা যায়। নিজস্ব চিত্র
আউশ ধান কাটা শুরু হয়ে গিয়েছে। আর কিছু দিন পরেই শুরু হবে আমন ধান কাটাও। গত বেশ কয়েক বছরে জেলার নানা প্রান্তে দেখা যাচ্ছে ধান কাটার পরে জমিতে ধান গাছের গোড়া (নাড়া) পোড়ানো চাষিদের অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে, দাবি কৃষি ও পরিবেশ দফতরের কর্তারা। সেই সঙ্গে তাঁদের আক্ষেপ, নাড়া পোড়ানো বন্ধে প্রচার চালিয়েও অনেক সময়েই লাভ হচ্ছে না। ফলে, চলতি বছরেও কী পরিস্থিতি দাঁড়ায় সে দিকে তাকিয়ে তাঁরা।
ওই দুই দফতরের কর্তারাই জানান, নাড়া পোড়ানোর জেরে দূষণ, জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি আউশগ্রাম, বড়শুল-সহ জেলার নানা এলাকায় ‘নাড়া পোড়ানো প্রতিরোধ দিবস’-ও পালন করে কৃষি দফতর। এ ছাড়াও বছরভর চলে প্রচার। কিন্তু এর পরেও কৃষিকর্তাদের একাংশের দাবি, খরিফ মরসুমে ধান কাটার পরেই খেতে নাড়া পোড়ানোর দৃশ্য দেখা যায় জেলায়। কৃষি-কর্তারা চাষিদের এই প্রবণতার বিপদ হিসেবে দিল্লির দূষণের উদাহরণ দিচ্ছেন। হরিয়ানা, পঞ্জাব, রাজস্থান ও উত্তরপ্রদেশে ব্যাপক নাড়া পোড়ানোর কারণে দিল্লিতে ভয়াবহ দূষণ দেখা দিয়েছে এ বছর।
কিন্তু এই নাড়া পোড়ানোর বিষয়ে চাষিদের ‘যুক্তি’ কী?
জেলার চাষিদের একাংশের দাবি, অনেক জায়গায় বীজ বোনা থেকে ধান কাটা, সবটাই হয় ‘কম্বাইন্ড হারভেস্টার’ যন্ত্রে। কিন্তু যন্ত্রে ধান কাটার পরে অপেক্ষাকৃত বড় গোড়া পড়ে থাকছে জমিতে। ধান ঝাড়ার পরে প্রচুর টুকরো খড়ও পড়ে থাকছে। এ সব সাফ করার লোক মিলছে না। তাই জমিতেই আগুন দিলে সময় ও খরচ, দুই-ই বাঁচছে! কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, চাষিদের পুরনো অভ্যাস ছাড়ার ক্ষেত্রেও অনেক সময়ে অনীহা দেখা যায়। এ প্রসঙ্গে পূর্বস্থলীর সাহাজাদ শেখ, আউশগ্রামের সঞ্জীব সামন্ত, বর্ধমানের বৈকুন্ঠপুরের সুমিত হাজরা, জামালপুরের রাজু দাস-সহ জেলার নানা প্রান্তের চাষিদের দাবি, ‘‘এতে জমি ভাল হয়! আগে তো পোকামাকড় মারতে আগুন দেওয়াই রীতি ছিল। আমাদের বাবা-দাদারাও তা-ই করেছেন।”
নাড়া পোড়ানোর বিপদ যে ভাবে
নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সালফার-সহ সতেরোটি মৌল গাছের জন্য অত্যন্ত জরুরি। এগুলি গাছের মধ্যেই থাকে। নাড়া পোড়ানোর ফলে ওই সব মৌল বিষাক্ত গ্যাসে পরিণত হয়ে নষ্ট হচ্ছে। এই বিষাক্ত গ্যাসে বাতাস দূষিত হচ্ছে। জমিতে থাকা উপকারী পোকা, জীবাণু, কেঁচো মারা যাচ্ছে। জমির উর্বরতাও নষ্ট হচ্ছে। চাষের জন্যে জমির উপরি ভাগের ছ’ইঞ্চি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আগুনে ক্ষতি এই মাটির এই অংশেই। এর ফলে জমি বন্ধ্যা হয়ে যেতে পারে।
যদিও চাষিদের এই ধারণা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ও অবৈজ্ঞানিক বলেই দাবি বিশেষজ্ঞদের। বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি বিজ্ঞানী কৌশিক ব্রহ্মচারী বলেন, “নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সালফার-সহ সতেরোটি মৌল গাছের জন্য অত্যন্ত জরুরি। এগুলি গাছের মধ্যেই থাকে। নাড়া পোড়ানোর ফলে ওই সব মৌল বিষাক্ত গ্যাসে পরিণত হয়ে বাতাসে মিশছে।’’ আর এ থেকেই দূষণ, মত বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানের শিক্ষক অপূর্বরতন ঘোষের। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ বিজনকুমার দাসের মতে, “আগুনে জমিতে থাকা অনেক উপকারী পোকা, জীবাণু ও কেঁচো মারা যায়। ফলে, জমির উর্বরতা নষ্ট হয়।’’
বিশেষজ্ঞদের এই সব কথা চাষিদের মধ্যে প্রচার করা হচ্ছে বলে জানায় কৃষি দফতরও। জেলার উপ কৃষি আধিকারিক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “চাষের জন্য জমির উপরি ভাগের ছ’ইঞ্চি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আগুনে সব থেকে ক্ষতি হয় জমির এই অংশেরই। এর ফলে, জমি বন্ধ্যা পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে।’’
সাংগঠনিক ভাবে নাড়া পোড়ানো বন্ধে প্রচার চালানোর কথা জানিয়েছেন কৃষকসভার সভাপতি উদয় সরকার, কৃষক ও খেতমজুর সংগঠনের জেলা সভাপতি শেখ সাহনেওয়াজেরাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy