ফাইল চিত্র।
পশু-হাটে সিবিআইয়ের নজর পড়তেই জেলা পুলিশও নড়েচড়ে বসেছে। গরু পাচার নিয়ে জেলার সীমানা এলাকায় কড়া পাহাড়া দেওয়া, গরু বোঝাই ট্রাক বা ছোট মালবাহী গাড়িগুলি আটকে নথিপত্র পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ। প্রতিটি থানাকেও জানানো হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা থেকে বিরোধীদের দাবি, গরু পাচার কাণ্ডে বীরভূমের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল গ্রেফতার হওয়ার পরে কেতুগ্রামের পাঁচুন্দি পশু হাট থেকে ট্রাক বা ছোট মালবাহী গাড়িতে করে গঙ্গা পার করে গরু নিয়ে নদিয়া যাওয়ার প্রবণতা একেবারেই কমে গিয়েছে। সিবিআই ও জেলা পুলিশের নজরদারির কারণেই গরুর পাইকারেরা চুপচাপ বলে মনে করছেন তাঁরা। এ দিন বীরভূম থেকে বৈধ কাগজ ছাড়া গরু নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে পাঁচুন্দির পশু হাটের কাছে পুলিশ ন’জনকে গ্রেফতারও করে।
জেলার একটি বড় পশুর হাট পাঁচুন্দি। স্থানীয় বাসিন্দা, বিরোধী ও পুলিশের একাংশের দাবি, কাটোয়া ও কেতুগ্রামের গঙ্গা দিয়ে নৌকা করে গরু নদিয়া নিয়ে যাওয়ার রীতি কয়েক দশকের। কিন্তু ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর থেকে কেতুগ্রামের উদ্ধারণপুরের ফেরিঘাট দিয়ে প্রতিদিন ৩০-৪০ ট্রাক করে গরু নৌকা করে নদিয়া নিয়ে যাওয়া হত। নদিয়ার দিকে গঙ্গার পাড়ে ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকত। নৌকা এলেই ট্রাকে গরুগুলিকে চাপিয়ে পড়শি রাজ্যের সীমান্তে চলে যেত। এটা দেখতেই অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলেন দু’পাড়ের বাসিন্দারা। কিন্তু অনুব্রতর গ্রেফতারের পরে উদ্ধারণপুরের ফেরিঘাটে গরু বোঝাই ট্রাক কমতে থাকে। বৃহস্পতিবার ওই ফেরিঘাট দিয়ে কোনও গরু পারাপার করেনি বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। রাতারাতি ছবি বদলে যাওয়ার কারণ নিয়ে জোর জল্পনা শুরু হয়েছে এলাকার বাসিন্দা থেকে শুরু করে রাজনৈতিক মহলে।
উদ্ধারণপুর গ্রামের বাসিন্দা মিঠুন সরকার, নন্দ দাস, রবি মজুমদারদের দাবি, ‘‘আমরা দীর্ঘদিন ধরেই দেখে আসছি প্রচুর গরু আমাদের গ্রামের ঘাট দিয়ে গঙ্গা পার করে নিয়ে যাওয়া হয়। বৃহস্পতিবার হাটের দিন বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রচুর ট্রাকে করে গরু আসে। আমাদের সন্দেহ ছিল, গরুগুলি বৈধ ভাবে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে না। তৃণমূল নেতা গ্রেফতার হওয়ার পরে হাট হলেও ফেরিঘাট দিয়ে কোনও গরু পারাপার হতে দেখিনি।’’
সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক তমাল মাঝিরও দাবি, ‘‘যে ঘাট দিয়ে প্রতিদিন কয়েকশো গরু নদিয়া যেত, অনুব্রত মণ্ডলের গ্রেফতারে সব বন্ধ হয়ে গেল! এর পিছনে রহস্য রয়েছে বলে মনে হয়। উপযুক্ত তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।’’
পূর্ব বর্ধমান জেলা বিজেপি সভাপতি (কাটোয়া সাংগঠনিক) গোপাল চট্টোপাধ্যায়েরও দাবি, ‘‘অনুব্রত সিবিআইয়ের হাতে ধরা পড়তেই উদ্ধারণপুরের ঘাট দিয়ে গরু যাওয়া বন্ধ হয়ে গেল, সবই পরিষ্কার।’’
অভিযোগ উড়িয়ে কেতুগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক শেখ সাহানেওয়াজ বলেন, ‘‘পাঁচুন্দি গরু হাট বহু বছরের পুরনো। অনেকেই এ সময় হাটে এসে গরু কেনা-বেচা করছেন না। তাই হয়ত ঘাট পারাপার হতে দেখা যাচ্ছে না।’’ ওই ফেরিঘাটের ইজারাদার বাপি সরকার, স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান বিকাশ বিশ্বাস ফোনও ধরেননি। রাত পর্যন্ত মেসেজেরও উত্তর দেননি।
জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘জেলায় বেশ কয়েকটি বৈধ পশুর হাট রয়েছে। বৈধ চালান ছাড়া গরু নিয়ে গেলে পুলিশ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়। এখন আমরা আরও বেশি করে অভিযান চালানো শুরু করেছি। রাস্তায় কড়া নজরদারি থাকবে। বৈধ নথি না থাকলেই প্রয়োজন মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
বীরভূমের ইলামবাজারের সুখবাজার-সহ দু’টি পশু হাটে সিবিআই নজর দিয়েছে। ওই সব হাটের গরুই পড়শি দেশে পাচার হতো বলে সিবিআইয়ের দাবি। তদন্তকারী সংস্থার ধারণা, ভিন জেলা ছাড়াও ইলামবাজারের হাটে গরু-সরবরাহ করত পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোটের কৈচর আর রায়নার সেহেরার বৈধ পশুহাট। পুলিশের দাবি, এই দুই হাটে প্রকাশ্যেই বাঁকুড়া ও জঙ্গলমহল থেকে গরু আনা হয়। এ বার গরুর বৈধ ভাবে আনা হচ্ছে কি না, তা জেলার সীমানাতেই পরীক্ষা করে দেখা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy