কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়। —ফাইল চিত্র।
জেলার পড়ুয়াদের বাড়ির কাছেই উচ্চ শিক্ষার সুবিধা, গবেষণার সুযোগ করে দিতে তৈরি হয়েছিল আসানসোলের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু প্রায়ই বিক্ষোভ-আন্দোলনের জেরে পঠনপাঠন যেন গৌণ বিষয় হয়ে উঠেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে, অভিযোগ এলাকার শিক্ষানুরাগীদের। নানা পক্ষের আন্দোলনে পরিবেশও নষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ। যত দ্রুত
সম্ভব এর সমাধানের উপায় খুঁজে বার করা প্রয়োজন বলে দাবি শিক্ষানুরাগীদের। রাজ্য সরকারেরও প্রয়োজনীয় ভূমিকা নেওয়া উচিত বলে মনে করছেন তাঁরা।
৮ জুলাই থেকে পড়ুয়াদের টানা বিক্ষোভে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিঘ্ন ঘটেছে প্রশাসনিক কাজ। পরিবেশ তপ্ত হওয়ায় পঠনপাঠনে প্রভাব পড়েছে। বিক্ষোভকারী টিএমসিপি নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, গত ১৩ মাসে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তহবিল থেকে প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা আইনি খরচ বাবদ ব্যয় করেছেন। তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন ব্যাহত হয়েছে। খরচ সামালতে পাঠ্যক্রমের বেতন বাড়ানো হয়েছে। উপাচার্যের মদতে এই ‘অনৈতিক’ কাজ হয়েছে অভিযোগ করে তাঁদের দাবি, অবিলম্বে ওই টাকা তহবিলে ফেরত দিতে হবে। অন্যথায় উপাচার্যকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে দেওয়া হবে না। উপাচার্য দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাল্টা দাবি, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কারও বিরুদ্ধে নিজে মামলা
করেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে যে সব মামলা হয়েছে, তা লড়তে আইনি খরচ হয়েছে। এই খরচের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব উচ্চ শিক্ষা দফতরকে দেওয়া হয়েছে।
এই টানাপড়েনের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ও ভবিষ্যৎ অন্ধকার হচ্ছে বলে মত অনেকেরই। তাঁদের দাবি, উচ্চ শিক্ষা দফতর স্বতপ্রণোদিত ভাবে সমস্যা মেটাতে এগিয়ে আসুক। চিত্তরঞ্জন কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ অরুণাভ দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘এই রাজনৈতিক দড়ি টানাটানিতে বলি হচ্ছেন পড়ুয়ারা এবং শিক্ষা ব্যবস্থা। সব দায়িত্বশীল পক্ষকে এর অবসানে সক্রিয় হতে হবে।’’ শিক্ষিকা তথা সাহিত্যিক নিবেদিতা আচার্য বলেন, ‘‘এই অচলাবস্থা বস্তুত শিক্ষার মূল্যবোধে আঘাত করছে। তাই উচ্চ শিক্ষা দফতরের উচিত এগিয়ে এসে পদক্ষেপ করা।’’
আসানসোল জেলা আদালতের সরকার পক্ষের প্রধান আইনজীবী স্বরাজ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের ভবিষ্যত যেখানে জড়িত, সেখানে এমন অচলাবস্থা গ্রহণযোগ্য নয়। উচ্চ শিক্ষা দফতর সক্রিয় হবে বলে আশা করি।’’ চিকিৎসক অরুণাভ সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘মনীষীর নামাঙ্কিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা উদ্বেগের। পঠনপাঠন ও গবেষণায় বিঘ্ন ঘটছে। যদি দু’পক্ষই অনঢ় থাকেন তবে উচ্চ শিক্ষা দফতরের সদর্থক ভূমিকা পালন করা উচিত।’’ কলেজের শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুটার জেলা আহ্বায়ক চন্দন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আগেও এমন পরিস্থিতি হয়েছে। অনেক আগেই ইতিবাচক পদক্ষেপ করার প্রয়োজন ছিল।’’
বছর দুয়েক আগে প্রাক্তন উপাচার্য সাধন চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে একই ভাবে তছরুপের অভিযোগ তুলে তাঁর অপসারণ চেয়ে আন্দোলন-বিক্ষোভ করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাংশ। বহু পড়ুয়া সেই বিক্ষোভে শামিল হয়েছিলেন। সে বারও বিক্ষোভকারীদের বাধায় একাধিক বার বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যালয়ে ঢুকতে পারেননি সাধন। ফলে, স্তব্ধ হয়ে যায় প্রশাসনিক কাজকর্ম ও পঠনপাঠন। সমাধানের পথ খুঁজতে আচার্য তথা রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস আর তাঁর মেয়াদ বৃদ্ধি করেননি। পরিবর্তে দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে উপাচার্য পদে বসান। বর্তমান উপাচার্যের ক্ষেত্রেও ফের আগের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়ায় হতাশ শিল্পাঞ্চলের পড়ুয়া ও শিক্ষক মহলের বড় অংশই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy