পথে: শ্রমিকদের পদযাত্রা চলল কলকাতার দিকে। রবিবার আসানসোলে। ছবি: পাপন চৌধুরী
অতিবর্ষণ ও স্থানীয় ক্ষোভ-বিক্ষোভের ‘জের’। তার ফলে গত তিন মাসে কয়লা উত্তোলন ব্যাহত হয়েছে। কিন্তু নভেম্বরে ৪.৩৪ মিলিয়ন টন কয়লা উত্তোলন করে সর্বকালীন রেকর্ড করা সম্ভব হয়েছে বলে দাবি করল ইসিএল। এমনকি, কয়লা পরিবহণ ও বর্জ্য (ওভারবার্ডেন) নিষ্কাশনেও রেকর্ড সাফল্যের দাবি করেছেন কর্তৃপক্ষ।
খনি শিল্পের বেসরকারিকরণের আশঙ্কা, ঠিকাকর্মীদের নানা দাবিদাওয়া, এলাকাবাসীর একাংশের ‘বাধা’-সহ বিভিন্ন কারণে গত তিন মাসে জেলার কয়লা শিল্পক্ষেত্রে নানা সমস্যা হয়েছে বলে ইসিএল আধিকারিকদের দাবি। তা ছাড়া, অতিবর্ষণে খোলামুখ খনিতে জল জমার ঘটনাও ঘটেছিল। এই দুই কারণে কয়লা উত্তোলনে সমস্যার কথা জানিয়েছেন ইসিএল কর্তৃপক্ষ। এই অবস্থায় চলতি অর্থবর্ষের লক্ষ্যপূরণ (৫৩ মিলিয়ন টন) করা নিয়ে চিন্তায় ছিলেন তাঁরা।
চিন্তার কারণ হিসেবে তাঁরা জানান, গত আর্থিক বছরের তুলনায় চলতি বছরের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে কয়লা উত্তোলন ও পরিবহণের পরিমাণ অনেকটাই কম ছিল। আধিকারিকের দাবি, গত অগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ন’টি ঘটনায় উত্তোলন মার খেযেছে। গত ৪ অগস্ট জামুড়িয়া খনিতে ডাম্পার চালকদের বিক্ষোভে গোটা দিন কয়লা পরিবহণ বন্ধ ছিল। ৩১ অগস্ট নর্থ সিহারসোল খনিতে দূষণের অভিযোগে এলাকাবাসীর বিক্ষোভ, ১৯ সেপ্টেম্বর পরাশিয়া খনিতে আদিবাসীদের বিক্ষোভে উৎপাদন ব্যাহত হয়। এ ছাড়া, ২৩ সেপ্টেম্বর ভানোড়া খনিতে, ২২ সেপ্টেম্বর নিউকেন্দা খনিতে ঠিকাকর্মীদের বিক্ষোভে উৎপাদন ব্যহত হয়। ৭ নভেম্বর সালানপুর খনিতে জমিদাতাদের বিক্ষোভে উৎপাদন ব্যাহত হয়। ১৪ নভেম্বর মাউথডিহি খনিতে শ্রমিক বিক্ষোভে কাজ বন্ধ তাকে। ২০ নভেম্বর কুনস্তরিয়া খনিতে আগুন-ধোঁয়া বার হওয়া নিয়ে ক্ষোভের জেরে কাজ বন্ধ থাকে। ২৭ নভেম্বর বাঁশরা খনিতে জমি নিয়ে বিক্ষোভের জেরে উৎপাদন ব্যহত হয়।
তবে নভেম্বর চিন্তা কাটিয়ে দিয়েছে বলে সংস্থার দাবি। সংস্থার সিএমডি প্রেমসাগর মিশ্র বলেন, ‘‘নভেম্বরের শেষে ইসিএলের ৫১টি ভূগর্ভস্থ, ২২টি খোলামুখ এবং ন’টি মিশ্র খনি থেকে ৪.৩৪ মিলিয়ন টন কয়লা তোলা হয়েছে।’’ কর্তৃপক্ষের দাবি, ইসিএলের জন্মলগ্ন থেকে এক মাসে এই পরিমাণ কয়লা উত্তোলন কখনও হয়নি। তা ছাড়া, ওই মাসে ৪.২২ মিলিয়ন টন কয়লা পরিবহণ করা হয়েছে। বর্জ্য নিষ্কাশন হয়ছে প্রায় ১৪.৩ মিলিয়ন কিউবিক মিটার। প্রেমসাগরবাবুর দাবি, ‘‘সংস্থার সব স্তরের কর্মী, আধিকারিকদের চেষ্টাতেই এই সার্বিক ‘রেকর্ড’। আশা করি আগামী দিনেও এই ধারা বজায় থাকবে।’’ খনি কর্তৃপক্ষের আশা, এমনটা চলতে থাকলে কয়লা উত্তোলনের লক্ষ্যমাত্রা ছোঁয়া সম্ভব হবে। সেই সঙ্গে কর্তৃপক্ষের আহ্বান, খনি ও শিল্পাঞ্চলের অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে বন্ধ হোক উত্তোলন প্রক্রিয়ায় বাধা দান।
যদিও শ্রমিক সংগঠনগুলি জানায়, নির্দিষ্ট কারণের ভিত্তিতেই ‘বাধ্য হয়ে’ অনেক সময়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ করতে হয় তাঁদের। সিটুর জেলা সম্পাদক বংশগোপাল চৌধুরী বলেন, ‘‘মাউথডিহি-সহ জেলার বেশ কিছু খনিকে বন্ধের চক্রান্ত করে তা বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এর ফলে, শ্রমিক-স্বার্থে আঘাত নামছে। তাই বিক্ষোভ ছাড়া রাস্তা নেই।’’ আইএনটিইউসি নেতা চণ্ডী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কয়লাখনির রাষ্ট্রায়ত্তকরণ হয়েছিল কংগ্রেস আমলে। বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার শ্রম-স্বার্থ বিরোধী নানা কাজ করছে। তাই আমাদেরও বাধ্য হয়ে পথে নামতে হচ্ছে। নভেম্বরের ‘রেকর্ড’ এটাও বলছে, কারণ না থাকলে আমরা বিক্ষোভ দেখাই না। কাজ করি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy