প্রতীকী ছবি।
টিভিতে অপরাধমূলক অনুষ্ঠান দেখে মাথায় এসেছিল খুনের ভাবনা। তার পরে দু’দিন ধরে পরিকল্পনা করে বন্ধুকে ডেকে গলায় গামছা দিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করেছিল তারা, পুলিশের দাবি জেরায় তাদের কাছে এমনটাই জানিয়েছে মেমারির পালশিটের নাবালক খুনে অভিযুক্ত দুই কিশোর। পুলিশের দাবি, খুনের পরে করন্দা গ্রামের শুভ মণ্ডলের (১৪) দেহ ফেলে দেওয়া হয় শেয়াল যাতায়াতের জায়গায়, সেটাও পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী।
তদন্তকারীদের দাবি, খুন করার পরে ঠান্ডা মাথায় দশ দিন বাড়িতে কাটানো, দুই বন্ধু মিলে সাইকেলে ঘুরে বেড়ানো, বাঁকা নদীর পাড়ে আড্ডা দেওয়া সবই করেছে অভিযুক্তেরা। পরিজন, পড়শিদেরও সন্দেহ হয়নি। এত অল্প বয়সে এ ভাবে খুন করার ঘটনাও আশ্চর্য হচ্ছেন পোড়খাওয়া পুলিশ আধিকারিকেরাও। মনোবিদ ইন্দ্রাণী দত্তের মতে, ‘‘পুরোটাই একটা গেম ভেবেছে ওই কিশোরেরা। সে জন্য মনে উথালপাতালও হয়নি।’’
বৃহস্পতিবার বিকেলে করন্দা গ্রামের কাছে একটি খালের ধারে ক্ষতবিক্ষত দেহ মেলে শুভর। মোবাইলে ‘অনলাইন গেম’-এ হারের আক্রোশে তাকে খুনের অভিযোগে দুই বন্ধুকে গ্রেফতারও করে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, মূল অভিযুক্তের ‘সঙ্গী’ মেমারি থানার পালশিট দুলেপাড়ার কিশোর গুজরাতের সুরাতে গয়না শিল্পের কাজ করত। চতুর্থ পর্বের ‘লকডাউন’-এর শুরুতে সে ফিরে আসে। তার পরেই বন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে জড়িয়ে পড়ে এই ঘটনায়।
প্রাথমিক ভাবে পুলিশের ধারণা, ‘অনলাইন গেম’-এ জেতা-হারা নিয়েই বন্ধুদের বিবাদে এই ঘটনা ঘটেছে। যারা এই ‘গেম’টি নিয়মিত খেলেন তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, ‘অনলাইনে’ নির্দিষ্ট টাকা দিয়ে নাম নথিভুক্ত করাতে হয়। তার পরে একটা ‘আইডি’, ‘পাসওয়ার্ড’ দেওয়া হয়। একটা ‘আইডি’ থেকে একা এক জনও খেলতে পারে, আবার এক সঙ্গে অনেকজনও খেলা যায়। জিতলে ‘ক্রিডেনশিয়াল’ বাড়ে। যত ‘ক্রিডেনশিয়াল’ বাড়বে, খেলার সময়ও বাড়ে। এই ‘গেমে’ আসক্ত কয়েকজনের থেকে জানা যায়, ১০ মিনিটের মধ্যে ৪৯ জনকে যুদ্ধে হারাতে পারলে তবেই বাড়ে ‘ক্রিডেনশিয়াল’।
পুলিশের দাবি, নিহত কিশোরের বন্ধুরা জানিয়েছে, শুভ পালশিট স্টেশনের কাছে এক গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তে যেত। সেখানেই মামার বাড়িতে থাকত মূল অভিযুক্ত কিশোর। মাসখানেক আগে তাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব হয়। প্রথম দিকে শুভ-র ‘আইডি-পাসওয়ার্ড’ জেনে নিয়ে ওই ‘গেম’ খেলত অভিযুক্ত কিশোর। শুভর টাকা ফুরিয়ে গেলে, সে খেলতে পারত না। এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে মারপিটও হয় বলে জেনেছে পুলিশ। ‘অনলাইন গেম’-এও দু’জনের মধ্যে বেশ কয়েকবার মুখোমুখি লড়াই হয়। পুলিশের দাবি, তাতে পালশিটের কিশোর হেরে যায়। তার জেরে বন্ধুদের সামনেও মারপিট হয়। আক্রোশের জন্মও সেখান থেকেই।
যদিও ছেলের ‘অনলাইন গেম’-এ আসক্তির কথা মানতে নারাজ নিহতের বাবা-মা। নিহতের মা সাগরিকাদেবীর দাবি, “স্কুলে পড়ুয়াদের বিবাদের জেরে ছেলেকে খুন হতে হয়েছে। আমার ছেলে সারা দিন পড়া নিয়ে থাকত। ওই সব গেম খেলত না। তা ছাড়া, গেম খেলার টাকা পাবে কোথায়?” পালসিটের অভিযুক্ত কিশোরের পড়শিরা আগেই জানিয়েছিলেন, গত কয়েকমাস ধরে বাড়িতে অশান্তি করছিল ওই কিশোর। পাড়ার লোকেরাও অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। চুরির অভিযোগও উঠেছিল তার নামে। শুক্রবার ওই ছেলেটির বাবা গোপাল বিশ্বাসের দাবি, “ঘটিগরম বিক্রি করে সংসার চালাই। ছেলে পড়াশোনা ছেড়ে বাড়িতেই বসে আবদার করত। না মেটাতে পারলেই মারধর করত। বাড়ি ছেড়ে দু’মাস মামার বাড়িতেই ছিল। তবে ওই সব গেমের ব্যাপারে কিছু জানা নেই।’’ আর এক অভিযুক্তের বাবা নারাণ মাঝিরও দাবি, “ছেলে বাইরে কাজ করে। দিন আনি দিন খাই সংসার। ও সব মোবাইলে বড়লোকদের খেলা আমার ছেলে কী করে জানবে? ডেকে নিয়ে গিয়ে ফাঁসিয়ে দিয়েছে ওকে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy