Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Durga Puja 2020

ভোরে আনাজ বেচে বিকেলে খেতমজুরি অদম্য সরস্বতীর

সকাল ১০টা পর্যন্ত পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে আনাজ বিক্রি করার পরে বাড়ি ফিরে রান্নাবান্না, সন্তানকে স্কুলে পাঠানো। তার পরে বিকেলে ঘণ্টা দু’য়েক খেতমজুরি। আত্মীয় থেকে পড়শিদের অনেকে তাই তাঁকে ডাকেন ‘দশভুজা’ বলে।

কাটোয়ার সরস্বতী দাস। 
ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়

কাটোয়ার সরস্বতী দাস। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়

প্রণব দেবনাথ
কাটোয়া শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২০ ০৩:০৮
Share: Save:

অতিমারির কারণে পুজোয় এ বার জৌলুস কম। পুজোর দিনগুলো এ বছর অন্য ভাবে কাটবে, বলছেন অনেকেই। সরস্বতী দাসের অবশ্য এ বারও পুজোর দিনগুলো কাটবে অন্য বছরের মতোই।

ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতে আনাজ নিয়ে সাইকেলে বেরিয়ে পড়েন তিনি। সকাল ১০টা পর্যন্ত পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে আনাজ বিক্রি করার পরে বাড়ি ফিরে রান্নাবান্না, সন্তানকে স্কুলে পাঠানো। তার পরে বিকেলে ঘণ্টা দু’য়েক খেতমজুরি। গত বছর চারেক এমনই রুটিন কাটোয়ার পানুহাট দাসপাড়ার সরস্বতীদেবীর। আত্মীয় থেকে পড়শিদের অনেকে তাই তাঁকে ডাকেন ‘দশভুজা’ বলে।

ছোট থেকেই অভাবকে সঙ্গী করে বড় হয়েছেন সরস্বতী। পড়াশোনা বেশি দূর করা হয়নি। অল্প বয়সে পাড়ারই বাসিন্দা বিধান দাসের সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। দুই মেয়ে ও স্বামীকে নিয়ে তাঁর সংসার। স্বামী দিনমজুরি করেন। পরিবার সূত্রে জানা যায়, বছর পাঁচেক আগে বড় মেয়েকে ধারদেনা করে বিয়ে দেওয়ার পরে সংসারে অভাব চেপে বসে। তাই সংসারের হাল ধরতে আনাজ বিক্রি করতে নেমে পড়েন তিনি। অতিমারিতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয় স্বামীর কাজ না থাকায়। তখন থেকে তিনি একা সংসারের জোয়াল টানছেন।

মধ্যবয়সী সরস্বতী বলেন, ‘‘অভাব থাকলেও শান্তি রয়েছে। এক সময়ে কী করব তা ভেবে পাচ্ছিলাম না। লেখাপড়াও বিশেষ জানি না। বাবা রঞ্জিত দাস আমাকে বলেছিলেন, সৎ পথে যে কোনও কাজ করা যায়। কোনও কাজই ছোট নয়।’’ তিনি জানান, প্রায় চার বছর আগে মাত্র পাঁচশো টাকা মূলধন নিয়ে আনাজের ব্যবসায় নামেন। প্রথমে মাথায় বড় ঝাঁকা নিয়ে পাড়ায়-পাড়ায় ঘুরে বিক্রি করতেন। কিন্তু তাতে অসুস্থ হয়ে পড়লে ডাক্তার জানান, মাথায় ঝাঁকা নেওয়া যাবে না। তবে তিনি দমে যাননি। ব্যবসায় লাভের টাকা জমিয়ে হাজার টাকা দিয়ে একটি পুরনো সাইকেল কেনেন। তখন থেকে গত তিন বছর ধরে ভোর হতে না হতেই সাইকেলে কাটোয়া স্টেশন বাজারে পাইকারি আনাজ বাজারে পৌঁছে যান। সাইকেলের দু’পাশে ঝুড়ি ও বড় ব্যাগে আনাজ ভরে সকালে স্টেডিয়ামপাড়া-সহ লাগোয়া এলাকায় ঘুর বিক্রি করেন।

সরস্বতী জানান, বেলা ১০টা পর্যন্ত কাজ করে দু’আড়াইশো টাকা আয় হয়। তার পরে বাড়ি ফিরে মেয়েকে স্কুলে পাঠান, সংসারের যাবতীয় কাজকর্ম করেন। স্বামীর কাজ না থাকায় বিকেলে ঘণ্টা দু’য়েক অন্যের জমিতেও কাজ করেন। তাঁর কথায়, ‘‘লোকজন আমাকে উৎসাহ দেন। সারা বছর হাড়ভাঙা পরিশ্রম চলে। পুজোর আলাদা কোনও আনন্দ আমাদের থাকে না।’’ তিনি জানান, তাঁর স্বামী এখন কাজের খোঁজে রাজস্থানে গিয়েছেন।

সরস্বতীকে কুর্ণিশ জানাচ্ছেন পড়শিরাও। প্রতিবেশী চুমকি দাস, ভানু দাস, দীপা দাসেরা বলেন, “সরস্বতী দু’হাতে যেন দশ হাতের কাজ করেন। অভাবের মধ্যেও লড়াই করে যে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকা যায়, তা ওঁকে দেখে শেখা যায়। ওঁর জন্য আমরা গর্বিত।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja 2020 Lady Vendor Lady vendor Katwa
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy