Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Abhishek Banerjee

অভিষেক-বার্তায় ‘কাঁপুনি’ তৃণমূলে 

লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের নিরিখে বিরোধীশূন্য বর্ধমান পুরসভায় ৩৫টি আসনের মধ্যে ২০টিতেই বিজেপির থেকে পিছিয়ে রয়েছে তৃণমূল।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

সৌমেন দত্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২৪ ০৮:২৩
Share: Save:

লোকসভা ভোটে যে সব পুর-এলাকায় দলের ফল খারাপ হয়েছে, সে সমস্ত এলাকার দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ‘ব্যবস্থা’ নেওয়া হবে বলে গত ২১ জুলাই ধর্মতলার সভা থেকে বার্তা দিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। জেলা তৃণমূল সূত্রের খবর, অভিষেক-বার্তায় দলের পুর-প্রতিনিধি ও পঞ্চায়েত সদস্য, বিভিন্ন স্তরের নেতৃত্বের একাংশের মধ্যে কার্যত কাঁপুনি শুরু ধরেছে। চিন্তিত ব্লক নেতৃত্বের একাংশও। তাঁদের অনেকের পর্যবেক্ষণ— এ বারের ভোটে মুখ্য বিষয় ছিল ধর্মীয় মেরুকরণ ও নারীদের সমর্থন। সাংগঠনিক শক্তি ও সক্রিয়তা এসেছে তার পরে। তাঁদের আশা, এই বাস্তবতা বিচার করেই সিদ্ধান্ত নেবেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব।

লোকসভা ভোটে সাফল্যের জন্য দলের নেতা-কর্মীদের অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি, ধর্মতলার সভা থেকে অভিষেক জানিয়েছিলেন, নির্বাচনের ফলাফলে কার কী ভূমিকা ছিল, দল তা পর্যালোচনা করবে। তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘পুরভোটে নিজে টিকিট পেয়ে জিতব, কিন্তু লোকসভা বা বিধানসভা ভোটে দল এলাকায় আশানুরূপ ফল করবে না, এমন হলে দল ব্যবস্থা নেবে।’ এই মন্তব্যে হাঁটু কাঁপতে শুরু করেছে তৃণমূলের বহু পুর-প্রতিনিধির, খবর তৃণমূল সূত্রের। জেলার ছ’টি পুরসভার মধ্যে মেমারি বাদে পাঁচটিতেই তৃণমূলের ফল ভাল হয়নি। শুধু শহর নয়, জেলার প্রায় ১৮০০-র বেশি বুথে বিরোধীদের মিলিত ভোটের চেয়ে তৃণমূল পিছিয়ে রয়েছে বড় ব্যবধানে। ওই সব এলাকায় তৃণমূলের পঞ্চায়েত, পুরসভার প্রতিনিধি এবং সংশ্লিষ্ট এলাকায় দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত শহর সভাপতি বা অঞ্চল সভাপতিদের বিরুদ্ধেও পদক্ষেপের বার্তা দিয়ে রেখেছেন অভিষেক।

লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের নিরিখে বিরোধীশূন্য বর্ধমান পুরসভায় ৩৫টি আসনের মধ্যে ২০টিতেই বিজেপির থেকে পিছিয়ে রয়েছে তৃণমূল। তবে মোট প্রাপ্ত ভোটে তৃণমূল এগিয়ে বিজেপির থেকে। এর ঠিক উল্টো চিত্র গুসকরা পুরসভায়। সেখানে মোট প্রাপ্ত ভোটের ব্যবধানে বিজেপির থেকে তৃণমূল পিছিয়ে থাকলেও ওয়ার্ড ভিত্তিক ফলাফলে গেরুয়া শিবিরের থেকে এগিয়ে রাজ্যের শাসকদল। সেখানে ১৬টির মধ্যে ন’টি ওয়ার্ডে জিতেছিল তৃণমূল। পিছিয়ে থাকা ওয়ার্ডগুলির তৃণমূলের পুরপ্রতিনিধিরা একসুরে বলছেন, “দলের প্রার্থী, বিধায়ক, আমাদের মতো জনপ্রতিনিধিরা আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলাম। বেশ কিছু ওয়ার্ডে গত লোকসভা বা বিধানসভা ভোটের থেকে ব্যবধান কমানো গিয়েছে।”

বর্ধমানের পুরপ্রধান পরেশ সরকারের দাবি, “পূর্ববঙ্গ থেকে আসা মানুষ বা মতুয়া সম্প্রদায়ের লোকজনের বাস যে সব ওয়ার্ডে, সেখানেই আমরা পিছিয়ে পড়েছি। শুধু বর্ধমান পুরসভা নয়, রাজ্যের সর্বত্রই একই ছবি দেখা গিয়েছে। পর্যালোচনার পরে দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।” কাটোয়া, কালনা, দাঁইহাটের মতো পুরসভাগুলির ছবিও আলাদা নয়। একমাত্র মেমারি পুরসভায় তৃণমূল নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে। যদিও পুরপ্রধান, শহর সভাপতির ওয়ার্ডে হেরেছে তৃণমূল। লোকসভা ভোটে শহর সভাপতি স্বপন ঘোষালকে দল কার্যত ‘নিষ্ক্রিয়’ করে রেখেছিল। ভোটের দায়িত্বে থাকা পুরপ্রধান স্বপন বিষয়ীর বক্তব্য, “দল ভোটের আগে যে দায়িত্ব দিয়েছিল, তা পালন করেছি কিনা পর্যালোচনার পরেই বোঝা যাবে।”

গত পঞ্চায়েত ভোটে জেলায় ২১৫টি পঞ্চায়েতের মধ্যে চারটিতে তৃণমূল পিছিয়ে ছিল। লোকসভা ভোটের ফলের নিরিখে অনেকগুলি পঞ্চায়েত তৃণমূলের হাতছাড়া হয়েছে। বেশ কয়েকটি বিধানসভায় তৃণমূল বড় ব্যবধানে জয়ী হয়েছিল। লোকসভা ভোটের পরেও দেখা যাচ্ছে, সেই সব এলাকায় অর্ধেকের বেশি বুথে বিরোধীদের মিলিত ভোটের চেয়ে তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোট অনেকটাই কম। তৃণমূল সূত্রের খবর, এই কারণে ব্লক সভাপতি, অঞ্চল সভাপতি ও পঞ্চায়েত প্রধানরা কিছুটা চিন্তায় রয়েছেন। দলীয় সূত্রে এ-ও জানা গিয়েছে, পূর্ব বর্ধমান জেলায় দলের শাখা সংগঠনগুলির ভূমিকা ভাল চোখে দেখছে না অভিষেকের ‘টিম’। সেই বার্তা জেলা নেতৃত্বকে দেওয়া হয়েছে।

জেলা তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “পর্যালোচনা হলে দলের সাংগঠনিক কাঠামো মজবুত হয়। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব
বিষয়টি দেখছেন।”

অন্য বিষয়গুলি:

Abhishek Banerjee Bardhaman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy