অবরোধস্থল। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ।
স্বাস্থ্যসাথী কার্ড আছে জেনে দুর্ঘটনায় আহত এক ব্যক্তিকে ভর্তি না নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে। এর প্রতিবাদে শনিবার ওই ব্যক্তির প্রতিবেশীরা রানিগঞ্জে রানিসায়ের বাইপাস অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। পরে, পুলিশের হস্তক্ষেপে অশোক বাউরি নামে স্থানীয় নিমচা গ্রামের ওই বাসিন্দাকে বেসরকারি একটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার দুপুরে সাইকেলে চড়ে বাড়ি ফেরার সময় রানিসায়ের বাইপাসে লরির ধাক্কায় জখম হন অশোক। তাঁর ডান হাতে গুরুতর আঘাত লাগে। অশোকবাবুর স্ত্রী ভারতীদেবী জানান, প্রতিবেশীদের সহায়তায় স্বামীকে আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে এক দিন ভর্তি থাকেন অশোক। পরদিন তাঁকে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানোর সিদ্ধান্ত নেয় আহতের পরিবার।
ভারতীদেবীর অভিযোগ, অশোকবাবুকে প্রথমে দুর্গাপুরে সিটি সেন্টার-এর কাছে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু স্বাস্থ্যসাথী কার্ড আছে জানার পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে ভর্তি নিতে রাজি হননি। তার পরে তাঁকে দুর্গাপুরের বিধাননগরে আর একটি হাসপাতালে ভর্তি করানোর চেষ্টা হয়। ভারতীদেবীর দাবি, স্বাস্থ্যসাথী কার্ড রয়েছে জানার পরে, ওই হাসপাতালটিও ভর্তি নেয়নি। দু’টি হাসপাতালের তরফেই তাঁদের জানানো হয়, হাড়ের যে ধরনের চিকিৎসা অশোকবাবুর প্রয়োজন, তার উপযুক্ত পরিকাঠামো হাসপাতালে নেই। পরে একই যুক্তি দিয়ে বাঁকুড়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালও অশোকবাবুকে ভর্তি নিতে অস্বীকার করে বলে অভিযোগ তাঁর স্ত্রীর। পুলিশ জানিয়েছে, তাদের কাছে মৌখিক ভাবে একই দাবি করেছেন ভারতীদেবী।
ভারতীদেবীর দাবি, ‘‘স্বাস্থ্যসাথী কার্ড আছে জেনেই কোথাও ভর্তি নেওয়া হয়নি। ফলে, বাড়ি ফিরে আসতে হয়। স্বামীর হাতের যন্ত্রণা বাড়ছিল। এ দিন প্রতিবেশীরা জোট বেঁধে বাইপাস অবরোধ করে ঘণ্টা দু’য়েক বিক্ষোভ দেখান। তার পরে পুলিশ আসে। অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করে। পুলিশের সহায়তায় স্বামীকে পানাগড়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।’’
ভারতীদেবী প্রশাসন বা পুলিশের কাছে লিখিত কোনও অভিযোগ করেননি। দুর্গাপুর ও বাঁকুড়ার যে তিনটি হাসপাতালের বিরুদ্ধে তাঁর অভিযোগ, তাদের তরফে দাবি করা হয়েছে, ওই নামের কোনও রোগী তাদের কাছে চিকিৎসার জন্য আসেননি।
স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকলে চিকিৎসার জন্য আসা কাউকে ফেরানো যাবে না বলে বারবার বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে কড়া বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরেও রোগী প্রত্যাখ্যানের ঘটনা ঘটায় ক্ষোভ ছড়ায় এলাকায়। বিডিও (রানিগঞ্জ) অভীক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘জখম ব্যক্তিকে যে সব হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেখানে এই ধরনের চিকিঞসার পরিকাঠামো না থাকার জন্য ওই ব্যক্তিকে ভর্তি নেওয়া হয়নি বলে প্রাথমিক ভাবে শুনেছি। খোঁজ নিয়ে দেখা হবে। এ দিন তাঁকে ঠিক জায়গায় পাঠানো হয়েছে। চিকিৎসা শুরু হয়েছে।’’
রানিগঞ্জের সিপিএম বিধায়ক রুনু দত্তর অভিযোগ, ‘‘স্বাস্থ্যসাথী কার্ড-এর নামে নাগরিকদের বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। আগামী দিনে এটা আরও পরিষ্কার হবে।’’ রাজ্য সরকারকে খোঁচা দিয়ে বিজেপির আসানসোল জেলা সভাপতি লক্ষ্মণ ঘড়ুইয়ের মন্তব্য, ‘‘আয়ুষ্মান প্রকল্প রাজ্যে চালু না করে বিপাকে পড়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। নির্বাচনের আগে ভোটারদের মন জয় করতে গিয়ে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড-এর চমক দিতে চেয়েছিল সরকার। এখন দিশেহারা হয়ে পড়ছে।’’ তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসনের অবশ্য দাবি, ‘‘ঠিক মতো পরামর্শ না পাওয়ায় আহত ব্যক্তির পরিবারকে ভুগতে হয়েছে। তবে পুলিশ তাঁদের পাশে দাড়িয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy