পালসিট টোলপ্লাজায় গাড়ির লম্বা লাইন। ছবি: উদিত সিংহ।
গাড়ির চাপে তখন হাঁসফাস অবস্থা টোল প্লাজার কর্মীদের। খুচরোর অভাবে কাজে দেরি হচ্ছে। ফলে, সার দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে গাড়ির পর গাড়ি। ঠিক সেই সময় ২ নম্বর জাতীয় সড়কের একটি লেন কার্যত অবরুদ্ধ করে সেনা নামানোর প্রতিবাদ সভা করল শাসকদলের মহিলা শাখা।
শনিবার দুপুরে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের উপরে পালসিট টোল প্লাজায় তৃণমূলের সেই প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য পেশ করার সময় রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় অবশ্য স্বীকার করে নেন, বুধবার রাতে থেকে রাজ্যের বিভিন্ন টোল প্লাজায় গাড়ি-সমীক্ষার জন্য চিঠি দিয়েছিলেন সেনা-কর্তৃপক্ষ। এর পরেই তিনি বলেন, “রাজ্যের স্বরাস্ট্র দফতর কি অনুমতি দিয়েছিল? সরকার কোনও অনুমতি দেয়নি।” তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার সন্ধ্যাতেই পালসিট টোল প্লাজায় মহিলাদের নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করার জন্য জেলা তৃণমূল সভাপতি স্বপন দেবনাথ ও জেলা মহিলা শাখার সভানেত্রী কৃষ্ণা সরকারকে নির্দেশ দেন দলের বর্ধমান জেলার পর্যবেক্ষক অরূপ বিশ্বাস। সেই মতো এ দিন বেলা ১০টা থেকে টোল প্লাজায় সেনা নামানোর প্রতিবাদে আসানসোলমুখী ৬ নম্বর গেটের পাশে চাঁদোয়া টাঙিয়ে, চেয়ার-টেবিল পেতে বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু হয়।
এই সমাবেশের ফলে ভোগান্তি বেড়েছে বই কমেনি। নোট বাতিলের জেরে এত দিন দেসের টোল প্লাজাগুলিতে টোল নেওয়া বন্ধ রাখা হয়েছিল। শুক্রবার গভীর রাত থেকে টোল নেওয়া শুরু হয়েছে। বেলা যত বেড়েছে খুচরো সমস্যায় জেরবারও হয়েছেন পালসিট টোল প্লাজার কর্মীরা। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গাড়ির লাইনও দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়েছে। এই সময় আসানসোলমুখী রাস্তায় ৬ নম্বর লেনের পাশেই মহিলা তৃণমূল কংগ্রেস সভা করার জন্য রাস্তা প্রায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। লোহার ব্যারিকেডে তৃণমূলের পতাকা লাগানোই ছিল! ফলে, ওই লেনে ঢুকে পড়া গাড়িকে পালসিটের কর্মীরা অন্য লেনে ঢোকাতে ব্যস্ত ছিলেন। এ দিন টোলপ্লাজায় গিয়ে দেখা যায়, আসানসোলমুখী লেনে লম্বা লাইন। যাত্রিবাহী ছোট গাড়ির চালকেরা টোল বাবদ কর্মীদের খুচরো নোট দিলেও, মালবাহী ছোট কিংবা বড় গাড়ির চালকরা ২০০০ টাকার নোট, কিংবা পুরনো ৫০০ টাকার নোট কাউন্টারের সামনে ঝুলিয়ে দিচ্ছিলেন। ফলে সমস্যায় পড়ে যাচ্ছিলেন টোলপ্লাজার কর্মীরা। এ নিয়ে কথা কাটাকাটিও হয়। টোল প্লাজার এক কর্মী বললেন, “সব সময় গণ্ডগোলের ভয় কাজ করছে।’’
এই ভয়ের কারণ কী?
প্রায় তিন সপ্তাহ পরে টোল নেওয়া শুরু জাতীয় সড়কে। গাড়ির চালক বা মালিকের হাতে খুচরো থাকলেও, পুরনো ৫০০ টাকার নোট বা নতুন দু’হাজার টাকার নোট দিয়ে খুচরো করাতেই বিশেষ উৎসাহী। আর তা নিয়েই ছোটখাটো ঝামেলা শুরু হচ্ছে। টোলপ্লাজার ম্যানেজার প্রীতম চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “আমাদের হাতে যথেষ্ট খুচরো মজুত রয়েছে। কিন্তু ৭৫ টাকার টোলের জন্য ২০০০ টাকার নোট দিচ্ছে। পুরনো টাকা নেওয়া বন্ধ করেছে কেন্দ্র, এ কথা বারবার বলার পরেও বহু গাড়ির চালক কর্মীদের হাতে পুরনো ৫০০ টাকা দিচ্ছে। স্বাভাবিক ভাবেই এ নিয়ে কথা কাটাকাটি হচ্ছে। ততক্ষণে গাড়ির লাইন বেড়ে যাচ্ছে।” সমস্যা মেটাতে পালশিটে খুচরো মজুত রাখার পাশাপাশি কার্ড সোয়াপিং যন্ত্র, ই-ওয়ালেট, ইলেকট্রনিক্স টোল সিস্টেম রাখা হয়েছিল। টোল প্লাজার ইনচার্জ চন্দন মণ্ডলের কথায়, “ডিজিট্যাল পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন মাত্র ২৮ জন!” অবস্থা দেখে টোলপ্লাজার কর্মীদের শঙ্কা, দু’এক দিন পর থেকে ফের খুচরোয় টান পড়বে। তখন সমস্যা বাড়বে।
অন্য দিকে, দু’ঘণ্টা ধরে চলা সভার শেষে সেনা নামানো প্রসঙ্গে শোভনদেববাবু বলেন, “টোল প্লাজায় দাঁড়িয়ে সেনাদের গাড়ি-সুমারির কী প্রয়োজন রয়েছে বুঝি না। মুখ্যমন্ত্রীকে একটা চিঠি করলেই গাড়ি সম্পর্কীয় সব কিছুই তো এক ঘন্টার মধ্যে পেয়ে যেতেন সেনারা। সরকারের খাতায় তো সব তথ্যই রয়েছে। সেনারা সেই পদ্ধতিতে গেল না কেন?” তাঁর দাবি, সেনা নামিয়ে গণতান্ত্রিক সরকারকে ভয় দেখানোর চেষ্টা চলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy