গৌরাঙ্গ গোস্বামীর (ইনসেটে) দেহ পৌঁছনোর পরে ভিড় কালনায়। নিজস্ব চিত্র।
পাঁচ টাকা ফি-তে রোগী দেখতেন। পরিচিত ছিলেন ‘গরিবের ডাক্তার’ নামে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে শনিবার সকালে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হল কালনার সেই চিকিৎসক তথা সিপিএম নেতা গৌরাঙ্গ গোস্বামীর (৭১)। তাঁর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র-সহ অনেকে। কালনা শহরে ছিল শোকের আবহ। এ দিন সন্ধ্যায় দেহ আনার পরে শহরের রাজবাড়ি চত্বরে একটি মাঠে রাখা হয়। সেখান থেকে সৎকারে নিয়ে যাওয়া হয়।
২০০০-২০১০ পর্যন্ত গৌরাঙ্গবাবু কালনা পুরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন। পুরসভার ক্ষমতা বদলের পরে, তাঁকে পুরসভার বিরোধী দলনেতা করে সিপিএম। দলীয় সূত্রে খবর, গত ২১ অগস্ট দলের বৈঠকে হাজির ছিলেন গৌরাঙ্গবাবু। সেখানেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ২৬ অগস্ট শ্বাসকষ্ট হলে, তাঁকে ভর্তি করানো হয় মুকুন্দপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। পরীক্ষায় জানা যায়, তিনি করোনায় আক্রান্ত। শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ায় তাঁকে ভেন্টিলেশন-এ রাখা হয়েছিল। শুক্রবার রাতে গৌরাঙ্গবাবুর অবস্থার অবনতি হয়। এ দিন সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ মারা যান তিনি।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রয়াত চিকিৎসকের স্ত্রী মালবিকাও করোনায় আক্রান্ত। গৌরাঙ্গবাবুর মেয়ে শ্রীরূপা থাকেন আমেরিকায়। সন্ধ্যায় গৌরাঙ্গবাবুর দেহ নিয়ে বাড়ি ফেরেন তাঁর ছেলে আনন্দরূপ গোস্বামী। তাঁদের পরিবারের কেউ কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলেন না। করোনা-বিধি মেনেই রাতেই কালনা শ্মশানঘাটে গৌরাঙ্গবাবুর দেহ সৎকার হওয়ার কথা।
গৌরাঙ্গবাবুর মৃত্যুর খবর আসার পরে, কার্যত শোকস্তব্ধ ছিল কালনা শহর। তাঁর দেহ কালনা শহরে ঢোকার পরে রাস্তার দু’ধারে বহু মানুষের ভিড় চোখে পড়ে। অনেককে কাঁদতে দেখা যায়। কালনার তৃণমূল বিধায়ক দেবপ্রসাদ বাগ বলেন, ‘‘এক জন রাজনৈতিক নেতার থেকে তাঁকে বেশি চিনতাম মানবদরদী এক চিকিৎসক হিসেবে। এমন এক জন মানুষের মৃত্যুতে বড় ক্ষতি হল। উনি যখন পুরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন, তখন আমরা ছিলাম বিরোধী আসনে। আমি যখন চেয়ারম্যান, উনি তখন ছিলেন বিরোধী দলনেতা। রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকলেও উন্নয়ন নিয়ে আমাদের মতভেদ হয়নি কোনও দিন।’’ দলীয় নেতাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে বিকেলে কালনা শহরে আসেন সিপিএমের পূর্ব বর্ধমান জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিক। তিনি বলেন, ‘‘উনি ছিলেন এক দিকে সংগঠক, অন্য দিকে জন-নেতা। এ ক্ষতি সহজে পূরণ হওয়ার নয়।’’
শহরের বাসিন্দা চিকিৎসক অমিয়কান্তি তাঁ বলেন, ‘‘রাত যতই হোক না কেন, উনি কাউকে ফেরাতেন না। এমন চিকিৎসক আমরা আর হয়তো কোনও দিন পাব না। গরিব মানুষের অপুরণীয় ক্ষতি হল।’’ শহরের আর এক বাসিন্দা, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সঞ্জিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘হঠাৎ উনি এ ভাবে চলে যাবেন, তা কল্পনা করতে পারিনি!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy