Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Death

Death: খাটে শুয়ে ছেলে, মায়ের দেহ মেঝেতে

পুলিশ জানায়, মৃতার নাম বনশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায় (৭৫)। তবে নির্দিষ্ট করে ক’দিন আগে, কী ভাবে ওই বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে, তা বলতে পারেনি পুলিশ।

এই বাড়ি থেকেই উদ্ধার হয় বৃদ্ধার দেহ। পানাগড় রেলপাড়ার ট্যাঙ্কিতলা এলাকায়। বৃহস্পতিবার।

এই বাড়ি থেকেই উদ্ধার হয় বৃদ্ধার দেহ। পানাগড় রেলপাড়ার ট্যাঙ্কিতলা এলাকায়। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাঁকসা শেষ আপডেট: ২০ মে ২০২২ ০৭:১৪
Share: Save:

পাড়ারই একটি বাড়ি থেকে পচা গন্ধ পেয়ে তড়িঘড়ি পুলিশে খবর দেন পড়শিরা। পুলিশ এসে দরজা ভাঙে। দু’কামরার সে একতলা বাড়িতে ঢুকতেই দেখা যায়, কোথাও কোনও আলো জ্বলছে না। একটি ঘরের দরজা হাট করে খোলা। জানলা বন্ধ। দিনের সামান্য আলোয় পুলিশ দেখল, সে ঘরে একটি খাট। বিছানা এক দিকে গোটানো। সেখানেই শুয়ে রয়েছেন শীর্ণকায় এক ব্যক্তি। খাটের নীচেই মেঝেতে পড়ে এক বৃদ্ধার পচন ধরা দেহ। বুধবার সকালে পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসার পানাগড় রেলপাড়া ট্যাঙ্কিতলার ঘটনা। পুলিশ জানায়, মৃতার নাম বনশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায় (৭৫)। তবে নির্দিষ্ট করে ক’দিন আগে, কী ভাবে ওই বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে, তা বলতে পারেনি পুলিশ। পুলিশ বৃদ্ধার ‘মানসিক সমস্যা’ থাকা বছর পঁয়তাল্লিশের ছেলেকে উদ্ধার করে পানাগড় ব্লক
স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠিয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় আড়াই দশক আগে ট্যাঙ্কিতলায় বাড়ি তৈরি করে প্রাক্তন রেলকর্মী তারকনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, স্ত্রী বনশ্রী এবং তাঁদের ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে থাকতে শুরু করেন। এখানে আসার কয়েক বছর পরেই শারীরিক অসুস্থতায় মৃত্যু হয় মেয়ের। বছর চারেক আগে মৃত্যু হয় তারকনাথের। তার পর থেকে ছেলেকে নিয়ে থাকতেন বনশ্রী। তারকনাথের পেনশনের টাকায় সংসার চলত। তাঁর ছেলে কোনও কাজ করতেন না।

কী ভাবে ঘটনার কথা জানা গেল? এলাকাবাসীর একাংশ পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, বনশ্রীর ছেলে ‘মানসিক সমস্যা’ ছিল। মা-ছেলে, দু’জনেই বাড়ির বাইরে খুব একটা বেরোতেন না। পড়শিদের সঙ্গেও তাঁদের মেলামেশা ছিল না। তবে বনশ্রীকে মাঝেমধ্যে হাটে-বাজারে যেতে দেখা যেত। স্থানীয় বাসিন্দা পূরব বন্দ্যোপাধ্যায় সংবাদমাধ্যমের একাংশের কাছে বলেন, “ওই বাড়িতে লোকজনের আসা-যাওয়া তেমন দেখিনি। তবে দিন তিনেক ধরে ওই বাড়ি থেকে কাউকেই বেরোতে দেখেননি এলাকাবাসী।” তার পরে, এ দিন সকাল থেকে ওই বাড়ি থেকে দুর্গন্ধ পান এলাকাবাসী, জানান স্থানীয় বাসিন্দা কমলেশ দেবনাথ। বাড়িতে গিয়ে ডাকাডাকিও করেন অনেকে। কিন্তু কোনও সাড়াশব্দ পাওয়া যায়নি। এর পরেই কাঁকসা থানায় খবর দেওয়া হয়। কমলেশের সংযোজন: “মায়ের দেহ ছেলে না জানি কত দিন ধরে আগলে ছিলেন! ভাবতেও পারিনি, এমন ঘটনা ঘটবে।” তবে পুলিশ জানিয়েছে, বাড়িটি অগোছালো থাকলেও, খুব একটা নোংরা ছিল না।

নির্দিষ্ট করে কত দিন আগে বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে, তা নিয়ে রাত পর্যন্ত ধন্দ কাটেনি। পড়শিরা পুলিশকে জানিয়েছেন, তাঁরা এ বিষয়ে কিছুই আন্দাজ করতে পারেননি। তবে দিন তিনেক ধরে ওই বাড়িতে কোনও আলো জ্বলতে দেখা যায়নি। বিষয়টি নিয়ে বৃদ্ধার ছেলে বলেন, “আমি কিছু জানি না।” প্রাথমিক তদন্তের পরে, পুলিশ জানিয়েছে, সম্ভবত তিন ধরে কিছু দাঁতে কাটেননি ওই ব্যক্তি। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এসিপি (কাঁকসা) শ্রীমন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বৃদ্ধার মৃত্যু কবে হয়েছে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়। দেহের ময়না-তদন্ত করানো হয়েছে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে। রিপোর্ট এলে, কত দিন আগে মৃত্যু হয়েছে, তা বলা যাবে। বৃদ্ধার ছেলের মানসিক সমস্যা রয়েছে। তাঁর চিকিৎসা চলছে। পাশাপাশি, ওই পরিবারের আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ চলছে।”

এ দিকে, ঘটনার কথা জেনে বিষয়টি নিয়ে চর্চা রয়েছে চিকিৎসকদের মধ্যেও। পাশাপাশি, ওই ব্যক্তি মায়ের দেহ ‘আগলে’ ছিলেন কি না, তা নিয়েও ধন্দ রয়েছে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে। দুর্গাপুরের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ কিংশুক কর্মকার বলেন, “প্রথমেই দেখা উচিত, ওই ব্যক্তির মানসিক সমস্যা ঠিক কোন পর্যায়ে রয়েছে। হতে পারে তিনি হয়তো জানেনই না বা বুঝতেই পারেননি, তাঁর মা মারা গিয়েছে। আবার অনেক সময় ভয়েও অনেকে সব কিছু লুকিয়ে যেতে চান। তবে এ ক্ষেত্রে কী ঘটেছে, তা ওই ব্যক্তিকে পরীক্ষা না করে বলা সম্ভব নয়। এই মুহূর্তে সবার আগে, ওঁর চিকিৎসার প্রয়োজন।”

অন্য বিষয়গুলি:

Death Old woman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy