ইট পেতে তৈরি করা হয়েছে বালি খাদানে যাওয়ার রাস্তা, গলসির একটি খাদানে। নিজস্ব চিত্র
বাঁধ থেকে দু’-আড়াই কিলোমিটার দূরে নদী। সেখানে পৌঁছতে চরের বালি কেটে রাস্তা বানানো হয়েছে। তার উপরে ফেলা হয়েছে ইটের টুকরো, মোরাম। কোথাও পড়েছে পাথরও। পরিবেশবিদ থেকে নদী বিশেষজ্ঞদের দাবি, এ ভাবে রাস্তা তৈরি করে নদীকে কার্যত ‘মেরে ফেলা’ হচ্ছে। যদিও সেচ দফতরের আধিকারিকদের দাবি, বর্ষাকালে ওই রাস্তা নষ্ট করে দিলেই কোনও ক্ষতি হবে না।
জামালপুর থেকে কাঁকসা, দামোদরের দু’পাশে বহু পুরনো আমলের বাঁধ রয়েছে। ক্রমাগত বৈধ, অবৈধ বালিখাদান বাড়তে থাকায় বেড়েছে বাঁধের উপর দিয়ে যাতায়াত। বালি তোলার জন্য প্রতিদিন কয়েকশো ট্রাক, ম্যাটাডর নামে খাদানে। বাঁধ থেকে খাদান পর্যন্ত পৌঁছনোর জন্য চরের বালি কেটে রাস্তা তৈরি হয়েছে। তার উপরে মোরাম, ইট, পাথরও ফেলা হয়েছে অনেক জায়গায়। গলসির শিকারপুর খাদানেই রাস্তার উপরে ফেলা রয়েছে ইটের টুকরো। বর্ধমানের বাসিন্দা, ভূতত্ত্ববিদ বিকাশচন্দ্র রায় বলেন, “গত কয়েকদশকে বালি তোলার নামে দামোদরকে নির্যাতন করা হচ্ছে। বালির ট্রাক যাওয়ার জন্য নদীর চরের উপরে রাস্তা তৈরি করা ঠিক নয়। ভবিষ্যতে নদীর পাড়ের ক্ষতি হয় এতে।’’ রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্রও বলেন, “মোরাম বা পাথর দিয়ে নদীর বুকে রাস্তা বানানো একদমই কাম্য নয়।’’
সেচ দফতরের দাবি, অতিরিক্ত ভারবাহী বালির ট্রাক যাতায়াতে বাঁধের রাস্তা বেহাল হয়ে পড়ছে। বাঁধেরও ক্ষতি হচ্ছে। এ নিয়ে পুলিশ, প্রশাসনের কাছে অভিযোগও জমা পড়েছে। পুলিশের আবার দাবি, বাঁধের দু’ধারে সেচ দফতরের জায়গা ‘দখল’ করে জনবসতি গড়ে উঠেছে। দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে। শিকারপুরে বাড়ির উপরে বালির ট্রাক উল্টে একই পরিবারের পাঁচ জনের মৃত্যুর পরে আটটি খাদান বন্ধ করে দেয় প্রশাসন। কিন্তু সেগুলি খুললেই ফের চালু হবে যাতায়াত। ফলে, বাঁধের গায়ে বাস করাটাই ঝুঁকির বলে চিঠিতে জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছে পুলিশ। অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) শশীভূষণ চৌধুরী বলেন, “এ নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।’’
কিন্তু বসতি না থাকলে অর্থাৎ আশপাশে লোকজন না থাকলে বেআইনি বালির কারবার আরও বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। এমনিতেই নিয়মিত নজরদারি না থাকা, সিসিটিভি না থাকা নিয়ে অভিযোগ রয়েছে। বিশ্বভারতীর অধ্যাপক তথা নদী বিশেষজ্ঞ মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “এ ভাবে রাস্তা তৈরি করা নদীকে মেরে ফেলার সমান। লোভ আমাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে, এর শেষ কোথায় জানি না।’’ তবে সেচ দফতরের দামোদর ক্যানেল ডিভিশনের এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার ভাস্করসূর্য মণ্ডলের দাবি, “বর্ষার সময়েই এ রকম রাস্তা থাকলে নদীর গতিপথ বদলে যেতে পারে। কিন্তু অন্য সময় নদীতে জল না থাকায় ক্ষতির সম্ভাবনা কম। বর্ষার আগে রাস্তা উঠিয়ে দেওয়া খুবই জরুরি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy