Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪
Katwa

‘দশ হাতে কাজ করে মেয়েটা’

প্রিয়া ছাড়াও, তমাল সর্দার ও মীরা সর্দারের আরও দুই ছেলে-মেয়ে রয়েছে।

প্রিয়া সর্দার। নিজস্ব চিত্র

প্রিয়া সর্দার। নিজস্ব চিত্র

প্রণব দেবনাথ
কাটোয়া শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০২০ ০১:৩৪
Share: Save:

চালের খুদ দিয়েই দু’বেলা পেট ভরে তাঁদের। সপ্তাহে এক দিন গরম ভাতে টলটলে মুসুর ডাল আর আলু সেদ্ধ জুটলেই অমৃত। এমন পরিবারে লেখাপড়ার জন্য খরচ প্রায় অসম্ভব। কিন্তু কাটোয়ার আতুহাটপাড়ার প্রিয়া সর্দার বাড়ি-বাড়ি পরিচারিকার কাজ করে, বাবার চিকিৎসার খরচ চালিয়ে, পড়াশোনাও চালিয়ে যাচ্ছেন। কাটোয়া কলেজের কলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ওই তরুণীকে দেখে অনেকেই বলেন, ‘মেয়ে তো নয়,দশভুজা।’

প্রিয়া ছাড়াও, তমাল সর্দার ও মীরা সর্দারের আরও দুই ছেলে-মেয়ে রয়েছে। অভাবের সংসার হওয়ায় কেতুগ্রামের গঙ্গাটিকুরিতে মামাবাড়ি থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন প্রিয়া। তমালবাবু বলেন, ‘‘বেকারিতে কাজ করতাম। বড় মেয়ে ঝিলিককে ধার-দেনা করে বিয়ে দিই। বিয়ের খরচার পরে অভাবটা আরও জাঁকিয়ে বসে।’’ তার মধ্যেই বছর চারেক আগে টিউবারকিউলোসিস রোগে অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন তমালবাবু। প্রিয়াকে মামাবাড়ি থেকে ফিরিয়ে আনা হয়। পড়াশোনাও বন্ধ হওয়ার জোগাড় হয় তাঁর। বাধ্য হয়ে ১৬ বছর বয়স থেকেই মায়ের সঙ্গে পরিচারিকার কাজ শুরু করেন প্রিয়া।

বছর কুড়ির প্রিয়া বলেন, ‘‘খুব চেষ্টা করেছিলাম, যদি টিউশন দিয়ে কিছু রোজগার করতে পারি। কিন্তু মাধ্যমিক পাশ মেয়ের কাছে কে আর ছেলেমেয়েকে পড়াবেন! তাই পরিচারিকার কাজ করব ঠিক করি। সিদ্ধান্ত শুনে মা-বাবা কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছিল। আমি ওঁদের বোঝাই, কোনও কাজ ছোট নয়। নিজের পায়ে দাঁড়াতে, সংসারটাকে সামালতে যা করা সম্ভব, করব।’’

অন্ধকার থাকতে ঘুম থেকে উঠে, পড়তে বসেন প্রিয়া। সকাল ৬টা নাগাদ বেরিয়ে পড়েন কাজে। তিন বাড়ি কাজ সেরে ৯টায় ফিরে যাবতীয় সংসারের কাজ করেন তিনি। সঙ্গে অসুস্থ বাবার সেবা-যত্ন। প্রিয়া জানান, মাসে হাজার দেড়েক টাকা রোজগার হয়। বাবার ওষুধ, বাড়ির কিছু প্রয়োজন মিটিয়ে লেখাপড়ার খরচ জোটান। করোনা পরবর্তী সময়ে একটি কোচিং সেন্টার খোলার ইচ্ছে আছে তাঁর। প্রিয়ার কথায়, ‘‘পরিস্থিতির চাপে যাদের পড়াশোনা থমকে গিয়েছে তাদের সাহায্য করতে চাই আমি।’’

পড়শি বাসুদেব মুখ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শত দারিদ্রেও যদি মনে জোর থাকে তাহলে বড় হওয়া যায় তা প্রিয়া দেখিয়ে দিচ্ছে। ওর বয়সে শখ-আহ্লাদ, বন্ধুবান্ধব ভুলে বছরের ৩৬৫ দিন ভোর থেকে এত পরিশ্রম করা মুখের কথা নয়। ও আমাদের গর্ব।’’ কাটোয়া কলেজের অধ্যক্ষ নির্মলেন্দু সরকার বলেন, ‘‘ওই ছাত্রীর জেদকে কুর্ণিশ। ওর সঙ্গে যোগাযোগ করে কলেজের তরফে যতটা পারি সাহায্য করব।’’

মীরাদেবী বলেন, ‘‘ছোট মেয়ে আমার দশ হাতে হাত কাজ করে। ওই আমাদের লক্ষ্মী-সরস্বতী।’’ (শেষ)

অন্য বিষয়গুলি:

Katwa Priya Sardar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy