প্রতীকী ছবি।
ঘূর্ণিঝড় ‘আমপান’-এ ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায় উপভোক্তার সংখ্যা ৬৩। তাঁদের মধ্যে ৩০ জনের নামের পাশে একই মোবাইল নম্বর দেওয়া রয়েছে বলে অভিযোগ। সেই নম্বরটি কাটোয়া পুরসভার এক কর্মীর। এ ছাড়া, আরও দুই পুরকর্মীর নম্বরও রয়েছে বেশ কিছু উপভোক্তার নামের পাশে, অভিযোগ বিজেপি, সিপিএমের। দুই দলের নেতাদের কটাক্ষ, ‘‘একে ‘ভুল করে’ টাকা পেয়ে গিয়েছেন তৃণমূলের একাধিক কাউন্সিলরের ঘনিষ্ঠরা। তার উপরে ফোন-নম্বর জালিয়াতি। বোঝা যাচ্ছে দুর্নীতি কতখানি!’’
যদিও তালিকায় যাঁর মোবাইল নম্বর রয়েছে, সেই পুরকর্মী চন্দন মাঝির দাবি, ‘‘তড়িঘড়ি রিপোর্ট জমা দিতে হয়েছে। আবেদনকারীদের অনেকেই মোবাইল নম্বর দেননি। কিন্তু ফোন নম্বর দেওয়া বাধ্যতামূলক ছিল। তাই কিছু জায়গায় আমার নম্বর দেওয়া হয়েছে।’’ বিষয়টি জানেন না, দাবি করেছেন কাটোয়া পুরসভার কার্যনির্বাহী আধিকারিক তাপস ভট্টাচার্য। পুর প্রশাসক তথা তৃণমূল বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
এ দিন ক্ষতিপূরণের টাকা ফেরত দিতে চেয়ে কাটোয়া পুরসভায় আবেদন করেছেন ১৯ জন। তার মধ্যে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর ইলা হাজরার আত্মীয়-স্বজন ও ঘনিষ্ঠদের নিয়ে মোট ১১ জন রয়েছেন। ইলাদেবী আগেই দাবি করেছিলেন, এক ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট তৈরি করতে গিয়ে গোলমাল হয়েছে। এ দিন ২০ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর মিঠু সাহা রায়ের বিরুদ্ধেও স্বজনপোষণের অভিযোগ উঠেছে। তিনি নিজের দেওর ভীমদেব রায়কে টাকা পাইয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ। মিঠুদেবীর ভাসুর তথা ২০ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল নেতা বাসুদেব রায় এ দিন মহকুমাশাসকের (কাটোয়া) কাছে গিয়ে ভুল স্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, ‘‘ভাইয়ের নামে ভুল করে টাকা এসেছে। মহকুমাশাসকৃকের কাছে ফেরত দেওয়ার আবেদন করা হয়েছে।’’ মিঠুদেবীরও দাবি, ‘‘দেওরের নাম ভুল করে তালিকায় উঠে গিয়েছে। টাকা ফেরত দেওয়া হবে।’’
১ নম্বর ওয়ার্ড থেকেও সাত জন টাকা ফেরানোর আর্জি জানিয়েছেন। তাঁরাও ওই ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর মাসুদা খাতুনের ঘনিষ্ঠ বলে জানা গিয়েছে। মাসুদা খাতুনের দাবি, ‘‘বহু মানুষ আবেদন করেছিলেন। যাঁদের নাম ভুল করে গিয়েছে, তাঁরা টাকা ফেরত দিচ্ছেন। এখানে দুর্নীতির কিছু নেই।’’ ১১ নম্বর ওয়ার্ড থেকেও এক জন টাকা ফেরানোর আবেদন করেছেন। মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এক জন বাদে প্রত্যেকেই আবেদনপত্রে জানিয়েছেন, ঝড়ে বাড়ির ‘আংশিক ক্ষতি’র পরিবর্তে ভুল করে ‘সম্পূর্ণ ক্ষতি’ লেখা হয়েছে। সেই কারণেই টাকা ফেরত দিচ্ছেন, বলেও দাবি করা হয়েছে।
যদিও ‘টিআর ৭’ ফর্মের মাধ্যমে টাকা ফেরানোর আবেদনকারীদের কাছ তেকে মেলা ২০ হাজার টাকা কী ভাবে জমা হবে, তা নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। কোন খাতে টাকা জমা পড়বে বা টাকা ফেরত দিলেও দুর্নীতি থেকে অভিযুক্তেরা রেহাই পাবেন কি না তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাটোয়া মহকুমা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, “সরকার ঘূর্ণিঝড়ে কাঁচা বাড়ি ভেঙে গেলে তা মেরামতের জন্য ওই টাকা দিয়েছে। ইচ্ছাকৃত ভাবে তা নেওয়ার পরে ওই খাতে ফের ফেরত দেওয়ার কোনও সুনিদিষ্ট নিয়ম এখনও আসেনি। সরকারকে ভুল তথ্য দেওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাই টাকা ফেরত দিলেই যে অভিযুক্তরা রেহাই পেয়ে যাবে, এমন হয়তো নয়।’’
জেলা বিজেপি সভাপতি (কাটোয়া) কৃষ্ণ ঘোষের দাবি, “একে চেনা লোকেদের টাকা পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। তার উপরে, টাকা আত্মসাৎ করার জন্যই বেনিফিশিয়ারিদের বদলে পুর-কর্মীরা নিজেদের মোবাইল নম্বর দিয়েছেন। এই দুর্নীতির ব্যাপারে আমরা চুপ করে বসে থাকব না।’’ কাটোয়ার সিপিএম নেতা অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ও বলেন, “ভু্য়ো উপভোক্তাদের আড়ালে রাখতে পুরকর্মীদের মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়েছে। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডেও এক জনকে বেনামে টাকা দেওয়া হয়েছে।’’
রবীন্দ্রনাথবাবুর দাবি, “তদন্ত চলছে। অনেকেই টাকা ফেরত দিতে চেয়ে আবেদন করেছেন। আমাদের এখানে দুর্নীতির কোনও জায়গা নেই।’’ মহকুমাশাসক প্রশান্তরাজ শুক্লা বলেন, ‘‘১৯ জন আবেদন করেছেন। সরকারি নিয়ম মেনে টাকা ফেরত নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy