Advertisement
০৫ জানুয়ারি ২০২৫
Cyclone Amphan

ক্ষতি না হলেও মিলেছে টাকা, দাবি মেমারিতে

প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, রাজপুর গ্রামে আট জন সরকারি অনুদান পেয়েছেন। বিজেপির অভিযোগ, তার মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ে সাত জনেরই বাড়ির কোনও ক্ষতি হয়নি।

রাজপুর গ্রামে ত্রিপল ঘেরা বাড়ির পাশেই পাকা বাড়ি নির্মাণ। নিজস্ব চিত্র

রাজপুর গ্রামে ত্রিপল ঘেরা বাড়ির পাশেই পাকা বাড়ি নির্মাণ। নিজস্ব চিত্র

সৌমেন দত্ত
শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২০ ০০:০১
Share: Save:

ত্রিপলের ‘দেওয়ালের’ ঘর, ছাউনি অ্যাসবেস্টসের। অক্ষত রয়েছে সেই ছাউনি। পাশে তৈরি হচ্ছে পাকা বাড়ি। ঘূর্ণিঝড় ‘আমপান’-এ ওই ত্রিপলে ঘেরা ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জানিয়ে ২০ হাজার টাকা সরকারি অনুদান পেয়েছেন ঘরের মালিক।

রবিবার সকালে মেমারির দলুইবাজার ১ পঞ্চায়েতের রাজপুর গ্রামে সেই ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে গণেশ সামন্ত দাবি করেন, ‘‘১৯৯০-৯১ সাল থেকে এখানে আছি। আগে দেওয়ালের উপরে ত্রিপল দেওয়া ছিল। এখন শুধু ত্রিপল দেওয়া আছে।’’ ঝড়ে দেওয়াল নষ্ট হলে তো অ্যাসবেস্টসের ছাউনিও নষ্ট হওয়ার কথা। তা বেঁচে গেল কী ভাবে? পাশে পাকা বাড়ি কি ক্ষতিপূরণের টাকায় তৈরি হচ্ছে? প্রশ্ন শুনে হেসে চলে গেলেন এলাকায় তৃণমূল কর্মী বলে পরিচিত গণেশবাবু।

প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, রাজপুর গ্রামে আট জন সরকারি অনুদান পেয়েছেন। বিজেপির অভিযোগ, তার মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ে সাত জনেরই বাড়ির কোনও ক্ষতি হয়নি। শুধুমাত্র তৃণমূলের ‘ঘনিষ্ঠ’ হওয়ায় তাঁরা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। অথচ, এলাকায় প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তেরা আবেদন করেও অনুদান পাননি বলে দাবি বিজেপি নেতাদের। শুক্রবার মেমারি ১ ব্লক অফিসে তাঁরা ক্ষতিপূরণ দেওয়ায় স্বজনপোষণের অভিযোগও করেছেন।

পঞ্চায়েত প্রধান সমাপ্তি ঘোষ অবশ্য দাবি করেন, ‘‘এক জনের ব্যাপারে আমাদের সন্দেহ রয়েছে। সোমবার ব্লক থেকে সরেজমিন তদন্ত করতে যাবেন আধিকারিকেরা। তার পরে প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেবে।’’ ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বাড়ির ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সঙ্গে একশো দিনের কাজ প্রকল্পে ৯০ দিনের মজুরি দেওয়ার সিদ্ধান্তও হয়েছিল। ব্লকের অন্য ক্ষতিগ্রস্তেরা সেই টাকা পেয়েও গিয়েছেন। কিন্তু অভিযোগ ওঠায় রাজপুর গ্রামের সাত জনের একশো দিনের প্রকল্পের টাকা এখনও দেওয়া হয়নি বলে পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে।

ওই গ্রামের বাসিন্দা সুধারানি সাহার নামে ক্ষতিপূরণের টাকা এসেছে। অশীতিপর বৃদ্ধার অভিযোগ, ‘‘ঘরের পিছন দিকে ফাটল দেখা দিয়েছিল। সরকারের অনুদানে মাটির ঘরটা সারিয়েছি। কিছু টাকার ইট কিনতে দিয়েছি। তৃণমূলের ছেলেরাই টাকা পাইয়ে দিয়েছিল। এখন তারাই এসে টাকা ফেরত দিতে বলছে।’’ তাঁর পুত্রবধূ মামনিদেবী বলেন, ‘‘যে ভাবে বাড়িতে এসে টাকা চেয়ে গিয়েছে, তা খুব অপমানজনক।’’ বিজেপির দাবি, সুধারানিদেবীর ছেলে সুকুমার তৃণমূলের ‘ঘনিষ্ঠ’।

প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় নাম থাকা সত্ত্বেও গণেশ সামন্ত ত্রিপলে ঘেরা বাড়ি দেখিয়ে সরকারি অনুদান পেয়েছেন বলে অভিযোগ বিজেপির ২৫ নম্বর মণ্ডল সভাপতি গৌতম বলের। তিনি আরও দাবি করেন, ‘‘আমাদের এলাকায় প্রচুর মানুষ ত্রিপলে ঘেরা বাড়িতে থাকেন। তাঁদেরও তাহলে অনুদান পাওয়া উচিত ছিল।’’ স্থানীয় সূত্রের দাবি, গণেশবাবুর বাড়ির পাশেই অবসরপ্রাপ্ত এক ব্যাঙ্ক কর্মী ত্রিপলের ‘দেওয়াল’ ঘেরা বাড়ির জন্য সরকারি অনুদান পেয়েছেন। পঞ্চায়েত প্রধান অবশ্য বলেন, “আবাস যোজনায় নাম থাকলে ক্ষতিপূরণ পাবেন না, এমন নির্দেশিকা নেই।“

বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য ভীষ্মদেব ভট্টাচার্যের অভিযোগ, “যেমন ভাবে হোক পাইয়ে দাও আর লুটেপুটে খাও— এই হল তৃণমূলের রাজনীতি। সে জন্য প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তেরা বারবার বঞ্চিত হচ্ছেন।’’ স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা পঞ্চায়েতের উপপ্রধান পার্থসারথি খাঁ-র অবশ্য বক্তব্য, ‘‘এক জনকে নিয়ে আমাদের সন্দেহ রয়েছে। বাকিদের বিষয়ে অভিযোগের কোনও সারবত্তা নেই।’’

বিডিও (মেমারি ১) বিপুলকুমার মণ্ডল শুধু বলেন, ‘‘অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Amphan Scam TMC BJP Memari
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy