Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
বোরো ধান নিয়ে হিসেব
Cyclone Amphan

দুর্যোগ সত্ত্বেও গড় ফলনে বৃদ্ধির আশা

শনিবার সকাল থেকে দফতরে ক্ষয়ক্ষতির হিসেব কষছেন জেলার কৃষি আধিকারিকেরা।

জমিতে জমে থাকা জলের মধ্যে থেকেই ধান তোলার চেষ্টা চাষিদের। শনিবার মন্তেশ্বরের বামুনপাড়ায়। ছবি: সুদিন মণ্ডল

জমিতে জমে থাকা জলের মধ্যে থেকেই ধান তোলার চেষ্টা চাষিদের। শনিবার মন্তেশ্বরের বামুনপাড়ায়। ছবি: সুদিন মণ্ডল

সৌমেন দত্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০২০ ০১:৪১
Share: Save:

ধান কাটার মরসুম শুরু হওয়ার পর থেকে লেগেই ছিল ঝড়-বৃষ্টি। তার সঙ্গে ‘লকডাউন’-এর জেরে শ্রমিক নিয়ে সমস্যাও ছিল। একেবারে শেষ লগ্নে কার্যত পাকা ধানে মই দিল ঘূর্ণিঝড় আমপান। কৃষি দফতরের প্রাথমিক হিসেবে, পূর্ব বর্ধমান জেলায় শুধু বোরো ধানেই ৩৬০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু এ সবের পরেও জেলায় গত মরসুমের চেয়ে বোরোর গড় ফলন বেশি হতে চলেছে বলে জেলার কৃষি-কর্তারা মনে করছেন।

শনিবার সকাল থেকে দফতরে ক্ষয়ক্ষতির হিসেব কষছেন জেলার কৃষি আধিকারিকেরা। উপ-কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমপানের আগেই জেলার ১৪৪টি পঞ্চায়েতে ‘ক্রপ কাটিং’ (ফসল ওঠার পরে যে পদ্ধতিতে উৎপাদন মাপে কৃষি দফতর) করা হয়েছে। জেলায় ১,১৭,০০০ হেক্টর জমির ধান চাষির ঘরে উঠে গিয়েছে। আমপানের পরে, জমিতে পড়ে থাকা ধানের ক্ষতি হবে ঠিকই। তবে গত বারের চেয়ে ধানের গড় উৎপাদন বেশি থাকবে বলে মনে করছি।’’

মঙ্গলবার জেলার সার্কিট হাউসে দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জেলার ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে বিশদ আলোচনা করতে কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বৈঠক করতে পারেন বলে দফতর সূত্রের খবর।

কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়, আমপানের আগে এ বার জেলায় বার তিনেক প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দেয়। দু’বার ঝড়-বৃষ্টি ও এক বার শিলাবৃষ্টি হয়। কাটোয়া ও কালনা মহকুমার তিনটি ব্লক, বর্ধমান সদরের দু’টি ব্লকের ধানগাছ নুইয়ে পড়েছিল। চাষিদের আশঙ্কা ছিল, বোরো চাষে বিস্তর ক্ষতি হতে চলেছে। কৃষি দফতরের কর্মী-আধিকারিকেরাও এলাকা ঘুরে রিপোর্ট পাঠান। মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার ‘লকডাউন’-এর মধ্যেই জেলার কৃষি-কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন, এলাকা ঘুরে দেখেন। কৃষি দফতরের কর্তাদেরও অনেকে মনে করছিলেন, গত বারের চেয়ে বোরো চাষের এলাকা বাড়লেও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে হেক্টর প্রতি গড় উৎপাদন কমে যেতে পারে।

কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় গত বছর ‘ক্রপ কাটিং’-এর পরে গড় উৎপাদন ছিল হেক্টর প্রতি ৫.৪১ টন। জেলার ‘ক্রপ কাটিং’-এর (শস্য-কর্তন অন্বীক্ষা) নোডাল অফিসার সুকান্ত মুখোপাধ্যায় দাবি করেন, ‘‘আমার ধারণা, আমপানের পরেও এ বার গড় উৎপাদন হেক্টর প্রতি ৬ টনের কাছাকাছি থাকবে। আমপানের আগে তিন বার প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পরেও, এক-একটি মৌজায় ফলন হেক্টর প্রতি সাড়ে সাত টনের বেশি ছিল।’’

কৃষি দফতরের রিপোর্ট অনুযায়ী, জেলায় হেক্টর প্রতি জমিতে সবচেয়ে বেশি গড় উৎপাদন কালনার সুলতানপুরে। সেখানে গড়ে ৯.১৫ টন পর্যন্ত ফসল পেয়েছেন চাষিরা। কিন্তু প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আঁচ পড়েছে তার লাগোয়া বেগপুর পঞ্চায়েতে। সেখানে গড় উৎপাদন দাঁড়িয়েছে প্রায় ১.৬১ টন। ভাতারের বামুনারা পঞ্চায়েতে, মন্তেশ্বরের বামুনাড়া পঞ্চায়েতে গড়ে আড়াই-তিন টন ধান পাওয়া গিয়েছে। আবার ভাতারের নিত্যানন্দপুর বা মন্তেশ্বরের মাঝেরপাড়ায় গড় উৎপাদন প্রায় সাড়ে সাত টন। মঙ্গলকোট, গলসি, আউশগ্রাম-সহ বেশ কয়েকটি ব্লকে ৬ টনের আশপাশে ধান উৎপাদন হয়েছে বলে কৃষি দফতরের দাবি। তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী, কাটোয়া ১ ব্লকের বেশ কিছু পঞ্চায়েতে গড়ে সাড়ে সাত টন উৎপাদন হয়েছে। তবে কোশিগ্রাম পঞ্চায়েতে উৎপাদন তুলনায় কম হয়েছে।

জেলা কৃষি দফতর জানায়, আমপানের সময়ে জেলায় প্রায় ৪৬,৭০০ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়নি। তার মধ্যে প্রায় ৩৩ হাজার হেক্টরের ধান নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে রিপোর্টে জানানো হয়েছে। জগন্নাথবাবু বলেন, ‘‘দেরিতে রোয়ায় ধান পড়ে রয়েছে গলসি ও আউশগ্রামের দু’টি ব্লকে। কিছুটা রয়েছে ভাতার ব্লকে। মূলত এই এলাকাগুলির ধানই ক্ষতির মুখে পড়েছে। পরামর্শ মেনে বেশিরভাগ চাষি ধান কেটে নিয়েছিলেন। জেলার দুই-তৃতীয়াংশ ধান উঠে যাওয়ায় গড় ফলন মার খাওয়ার সম্ভাবনা নেই।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Amphan Burdwan Rice
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy