ফাঁকা হাট। নিজস্ব চিত্র
গরু পাচার মামলায় তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে সিবিআই গ্রেফতার করার পরে নজরদারি বেড়েছে পুলিশের। বৈধ নথি ছাড়া গরু নিয়ে গেলে ধরপাকড় করছে পুলিশ। আটক করা হচ্ছে গবাদি পশু। এর জেরে বদলে গিয়েছে দু’শো বছরের পুরনো কেতুগ্রামের পাচুন্দি গ্রামের গরু-হাটের চেহারা। সাপ্তাহিক ওই হাটে বেচাকেনা কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছে, দাবি ব্যবসায়ী এবং হাট কর্তৃপক্ষের একাংশের।
পুলিশ সূত্রে খবর, গত দু’সপ্তাহে কেতুগ্রামের নানা এলাকা থেকে বৈধ নথি ছাড়া গরু নিয়ে যাওয়ার কারণে গ্রেফতার করা হয়েছে অনেক জনকে। উদ্ধার করা হয়েছে ৪৭টি গরু। তাদের রাখা হয়েছে খোঁয়াড়ে।
ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতি বৃহস্পতিবার পাচুন্দি গ্রামে পশুহাট বসে। বহু লক্ষ টাকার কেনাবেচা হয়। হাজারের বেশি মানুষ আসেন হাটে। আনাজ, জামা-কাপড় ও মাটির জিনিসপত্রের পসরা সাজিয়ে বসেন ছোট কারবারিরা। গরু কেনাবেচা বন্ধ হওয়ায় তাঁরাও আতান্তরে পড়েছেন। পশুহাটের মালিকপক্ষের তরফে সুশান্ত মণ্ডল বলেন, “হাটে গরু ঢোকা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এ ভাবে চলতে থাকলে বহু মানুষের রুটি-রুজি বন্ধ হয়ে যাবে।”
এই পরিস্থিতির জন্য বিজেপিকে দায়ী করেছেন পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, “গরু পাচার নিয়ে বিজেপি’র নোংরা রাজনীতির জেরেই হাটে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। গ্রামীণ অর্থনীতি ধুঁকতে শুরু করেছে। হাটে স্বাভাবিক অবস্থা ফেরাতে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে পদক্ষেপ করা হবে।” পাল্টা দিয়েছে বিজেপি-ও। দলের কাটোয়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি গোপাল চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “তৃণমূলের নেতারা গরু পাচারে যুক্ত। সে লজ্জা ঢাকতে ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলছে আমাদের বিরুদ্ধে।”
বিষয়টি নিয়ে মন্তব্যে নারাজ জেলা পুলিশের আধিকারিকেরা। তবে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ আধিকারিকের বক্তব্য, “বৈধ নথি থাকলে গরু হাটে নিয়ে যেতে কোনও সমস্যা হবে না। হাটে কেন গরু আসছে না, তা বলা মুশকিল। তা ছাড়া, এটি পুলিশের দেখার কাজও নয়।”
কেতুগ্রামের বামুণ্ডি গ্রামের বাসিন্দা জয়নাল শেখ বলেন, “আমি গত ৬০ বছর ধরে এই হাটে গরু কেনাবেচার কাজে যুক্ত রয়েছি। সংলগ্ন গ্রামগুলি থেকে গরু কিনে হাটে বিক্রি করি। ক্রেতারা গরু কেনেন। বহু বছর ধরে এই ব্যবসা চলছে। গরু পাচার মামলা সামনে আসতেই পুলিশ গরু ধরা শুরু করেছে। অনেককেই গ্রেফতার করেছে। গরু খোঁয়াড়ে ভরে দিচ্ছে। আতঙ্কে ভুগছেন ব্যবসায়ীরা। গত দু’সপ্তাহ একটি গরুও হাটে আসেনি। লক্ষ-লক্ষ টাকার কেনাবেচা বন্ধ। আমাদের মতো পাইকারদের রোজগার সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গিয়েছে।”
পাচুন্দি হাটতলার বাসিন্দা তনিমা সাহা বলেন, “হাটের দিন আমি খাবারের দোকান খুলে বসি। প্রায় ৯-১০ হাজার টাকার ব্যবসা হত। হাটে ক্রেতা-বিক্রেতারা আসছেন না। এখন হাজার টাকার খাবারও বিক্রি হচ্ছে না। সংসার চালানো দায় হয়ে পড়েছে।” ওই গ্রামের মেনকা বাগ নামে এক মহিলা বলেন, “হাট থেকে গোবর তুলে ঘুঁটে তৈরি করে বিক্রি করি। হাটে গরু না আসায় রোজগার বন্ধহয়ে গিয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy