পদব্রজে গন্তব্যের পথে পরিযায়ী শ্রমিকেরা। আসানসোলে শনিবার। ছবি: পাপন চৌধুরী
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব রাজ্যগুলিকে চিঠি দিয়ে জানান, পরিযায়ী শ্রমিকদের বিশেষ ট্রেনে বা বাসে চাপিয়ে বাড়ি ফেরাতে হবে রাজ্যগুলিকে। পশ্চিম বর্ধমানের ডুবুরডিহিতে দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার (এসবিএসটিসি) বাস সার দিয়ে দাঁড়িয়েও থাকছে। কিন্তু বাস কখন ছাড়বে, সে অপেক্ষায় না থেকে শনিবার হেঁটেই বাড়ির পথ ধরলেন পরিযায়ী শ্রমিকদের একাংশ।
বারো বছরের ছেলে মুবারক তখন সবে দু’টো কচুরিতে মনোনিবেশ করেছে। ‘পা চালা। দেরি করলে হবে না। সন্ধ্যার আগে দার্জিলিং মোড় পৌঁছতে হবে’, বাবা জয়নুল হুসেনের তাগাদায় হুঁশ ফেরে ছেলের। ফের, শুরু হয় হাঁটা, লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য! লক্ষ্য, বাড়ি মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর।
শনিবার সকাল ১০টায়, প্রায় ৩৯ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রাকে সঙ্গী করে পশ্চিমবঙ্গ-ঝাড়খণ্ড সীমানায় ডুবুরডিহিতে এমন বহু ঘটনা ঘটল! এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, ডুবুরডিহিতে স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করছেন মহারাষ্ট্র, দিল্লি, পঞ্জাব থেকে ফেরা হাজারখানেক পরিযায়ী শ্রমিক ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা। তাঁরা জানান, কেউ এসেছেন গাড়ি ভাড়া করে, কেউ বা ট্রাকে চেপে। কেউ বা হেঁটেই। কেউ আবার জানান, ভিন্ রাজ্যে বাস মিলেছে।
এ দিন এসবিএসটিসি-র বাসও দাঁড়িয়েছিল সীমানায়। অথচ, মুর্শিদাবাদের জয়নুল, মালদহের গাজলের বাসিন্দা মনো মুদি ও ফুলকুমারি মুদি প্রমুখ বলেন, “দিল্লি, মুম্বই থেকে হেঁটে ফিরছি আমরা। বাকি পথটাও হেঁটেই ফিরব।” ভিন্ রাজ্য থেকে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা করিয়ে শংসাপত্র দিয়ে তবে রাজ্যে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু বাস থাকা সত্ত্বেও কেন এই ঘটনা? দিন সাতেক আগে গুরুগ্রাম থেকে স্ত্রী মালতিদেবীকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়েছিলেন মালদহের পুরাতন বাজারের মিঠুন মণ্ডল। মালতিদেবী বলেন, “অপেক্ষার বাঁধ ভেঙেছে। তাই হেঁটেই ফিরছি।” তাঁরা সকলেই জানান, স্বাস্থ্যপরীক্ষার পরে, পুলিশ-প্রশাসন গাড়ি দেবে বলেছে। কিন্তু কখন সেই গাড়ি ছাড়বে তার ঠিক নেই। তাই অপেক্ষা না করে বেরিয়ে পড়েছেন। অপেক্ষা করতে হচ্ছে কারণ, কোনও একটি এলাকার বা জেলার জন্য বাস নির্দিষ্ট থাকছে। অথচ, একলপ্তে যথেষ্ট সংখ্যক যাত্রী না থাকায় বাস ছাড়ছে না। বিষয়টির উদাহরণ দিয়ে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানান, ধরা যাক, নদিয়া যাবে একটি বাস। কিন্তু এক লপ্তে চার-পাঁচ জনের বেশি যাত্রী নেই। ফলে, ফের পরিযায়ী শ্রমিকের দল কখন আসবে, সেই দলে নদিয়ার কেউ থাকবে কি না, থাকলেও তাঁর স্বাস্থ্যপরীক্ষা করানো, শংসাপত্র দেওয়া-সহ দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হবে। এই অপেক্ষা করতে রাজি হচ্ছেন না শ্রমিকেরা।
বিষয়টি নিয়ে অতিরিক্ত জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদরির দাবি, “এমনটা হওয়ার কথা নয়। শ্রমিকদের জন্য বাস আছে। আমি নোডাল অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করে দেখছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy