Advertisement
২১ জানুয়ারি ২০২৫
Coronavirus

তালা বন্ধ জেলায় পেশা বদল

পশ্চিম বর্ধমানের উখড়ার বাজপেয়ী মোড়ে ‘মাস্ক’ বিক্রি করছেন বিবিরবাঁধের বাসিন্দা সহদেব সূত্রধর।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

নীলোৎপল রায়চৌধুরী
শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২০ ০৫:১২
Share: Save:

ওঁদের কেউ গাড়ি বা টোটো চালক ‘ছিলেন’। কেউ বা হাটে পোশাক বিক্রি ‘করতেন’। কিন্তু কয়েক দশক ধরে জড়িয়ে থাকা এ সব পেশার মানুষগুলিকে এক ধাক্কায় বদলে দিয়েছে ‘লকডাউন’। এই পরিস্থিতিতে টিকে থাকার লড়াইটাই বড় হয়ে উঠেছে, জানান সহদেব সূত্রধর, নরেশ বাউড়ি প্রমুখ। আর ওই টিকে থাকার জন্যই ওঁদের কেউ ‘মাস্ক’ বিক্রি করছেন, কেউ বা আনাজ।

পশ্চিম বর্ধমানের উখড়ার বাজপেয়ী মোড়ে ‘মাস্ক’ বিক্রি করছেন বিবিরবাঁধের বাসিন্দা সহদেব সূত্রধর। তিনি জানান, দেড় দশক ধরে পাণ্ডবেশ্বরের হরিপুর, কুমারডিহি, অণ্ডালের উখড়া হাটে ছেলেদের পোশাক বিক্রি করতেন। তিনি বলেন, ‘‘তিনটি হাট সপ্তাহে দু’দিন করে বসতাম। লকডাউন-এর প্রথম চার দিন কোনও কাজ করতে পারিনি। পঞ্চম দিন থেকে বেঁচে থাকার তাগিদে ‘মাস্ক’ বিক্রি করছি।’’

ওই বেঁচে থাকার তাগিদেই আনাজ বিক্রি করছেন রানিগঞ্জের নরেশ বাউড়ি। তিনি পেশায় গাড়ির চালক ছিলেন। বছর আটেক ধরে হাবুল দত্ত অণ্ডাল-মাধাইগঞ্জ রাস্তায় বাজপেয়ী মোড়ের কাছে প্রাতঃরাশ ও বিকেলে ছোলা-ভাটুরা বিক্রি করতেন। কিন্তু তাঁর অভিজ্ঞতা, ‘‘লকডাউন-এর প্রথম দিন পুলিশ ঠেলা বার করতে বারণ করেছে। তাই, হেঁটে চা বিক্রি করছি।’’

টোটো চালানো ছেড়ে উখড়া স্কুল মোড়ে আনাজ বিক্রি করছেন সন্দীপ দাস। উখড়া গ্রাম যাওয়ার অন্যতম সংযোগকারী রাস্তার পাশে থালা, পিতলের বাসনের দোকানের মালিক দেবাশিস তাঁর দোকানের পাশে ফল বিক্রি করছেন। কিন্তু সকলেই জানান, তেমন বিক্রি হচ্ছে না। তবে পরিবার চলে যাচ্ছে কোনও রকমে।

এই সংখ্যাটা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন অর্থনীতির শিক্ষকেরা। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির শিক্ষক ভাস্কর গোস্বামী মনে করেন, ‘‘পরিযায়ী শ্রমিক-সহ অসংগঠিত শ্রম-ক্ষেত্রে জীবনধারণের জন্য মানুষের এই প্রবণতা খুবই স্বাভাবিক। কিছু ক্ষেত্রে বিষয়টি ক্ষণস্থায়ী ঠিকই। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পরেও পুরনো পেশায় ফেরত যাওয়াটা কঠিন হবে। তা ছাড়া, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি অর্থনীতিতে সার্বিক ভাবে একটি ‘স্ট্রাকচারাল ব্রেক’ বা সংগঠনমূলক ছেদ আনবেই।’’ অর্থনীতির শিক্ষক তথা রানিগঞ্জ টিডিবি কলেজের অধ্যক্ষ আশিসকুমার দে-র মতে, ‘‘উৎপাদন না হওয়ায় জাতীয় আয় কমছে। কর্ম-সঙ্কোচন বাড়বে। অর্থনীতি বিপর্যস্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। চাকরি যাওয়া, পুরনো পেশাকে ধরে থাকতে না পারার মতো ঘটনা ঘটছে তাই।’’

এই পরিস্থিতিতে সরকারি স্তর থেকে আরও বেশি সক্রিয়তাও দাবি করছে শিল্প-সংগঠনগুলি। ‘কোল অ্যান্ড স্টিল স্মল স্কেল ইন্ড্রাস্টিজ় অ্যসোসিয়েশন’-এর সভাপতি রামনাথ যাদব বলেন, ‘‘লকডাউন-এর ফলে দিশাহারা বেশির ভাগ মানুষ। অনেকেই একটা কিছু আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চাইছেন। সরকারের উচিত পাশে দাঁড়ানো।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy