থমকে প্রতিমা গড়ার কাজ। নিজস্ব চিত্র
অন্য বছর এই রকম সময়ে কাজ চলে। বর্ষা নামলে যাতে চাপে পড়তে না হয়, তা মাথায় রেখে পুজোর কাজ শুরু করে দেন হাত দিয়ে দেন অনেকে। কুমোরপাড়ায় এমন রেওয়াজ চলে আসছে অনেক দিন ধরেই। এ বার সেখানে উল্টো চিত্র। ‘লকডাউন’-এর জেরে প্রতিমা শিল্পেও আঁধার, দাবি শিল্পীদের।
বর্ধমান শহরে নীলপুর কমলা দিঘিরপাড়ের পালপাড়া, উদয়পল্লি, কাঞ্চননগর, শ্যামলাল, বিসি রোড-সহ কয়েকটি জায়গায় প্রতিমা তৈরি হয়। দুর্গাপুজোর বাকি মাস পাঁচেক। তার আগে রয়েছে বিশ্বকর্মা পুজো। সম্প্রতি এই এলাকাগুলিতে গিয়ে দেখা যায়, কাজ বন্ধ রয়েছে। নেই কোনও কর্মী। মৃৎশিল্পীরা জানান, অন্য বছর এই সময়ে দুর্গা প্রতিমা তো বটেই, লক্ষ্মী এবং কালী প্রতিমার কাঠামো তৈরির কাজও শুরু হয়ে যায়। তার পরপরই বরাত অনুযায়ী, বিশ্বকর্মা প্রতিমা তৈরি শুরু হয়।
শিল্পীদের দাবি, এ বার এখনও সে ভাবে দুর্গা প্রতিমার বরাত আসেনি। যাঁরা বরাত দিয়েছিলেন, তাঁরাও কাজ বন্ধ রাখার কথা বলেছেন। ‘লকডাউন’-এর পরে পুজোর বাজেট কী দাঁড়াবে, সে নিয়ে উদ্যোক্তারা ধন্দে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
বরাত মেলেনি বিশ্বকর্মা প্রতিমারও। পালপাড়ার শিল্পী তারকচন্দ্র পালের কথায়, ‘‘চৈত্র ও বৈশাখে বহু জায়গায় শীতলা কালী পুজো হয়। গত কয়েকবছরে এই পুজোর প্রতিমা তৈরির বরাত মিলত। এ বার তা-ও বাতিল হয়েছে।’’ তিনি জানান, অন্য বছরে এই সময়ে তাঁর ১০-১২টি দুর্গাপ্রতিমা তৈরির কাজ এগিয়ে যায়। এ বার এখনও একটিরও কাজ হয়নি। তারকবাবু বলেন, ‘‘গত কয়েকবছরে বর্ধমানে বিশ্বকর্মা ও গণেশ পুজোর চল বেড়েছে। তাতেও এ বার রাশ পড়বে বলে মনে হচ্ছে।’’
আর এক শিল্পী শিবনাথ পাল জানান, পয়লা বৈশাখের জন্য তিনি বেশ কিছু লক্ষী-গণেশ মূর্তি তৈরি করেছিলেন। তার বেশিরভাগই বিক্রি হয়নি। তাঁরও দাবি, প্রতি বছর যাঁরা বিশ্বকর্মা বা দুর্গা প্রতিমার বরাত দিতে আসেন, তাঁদের এখনও দেখা নেই। তাই তাঁর কাছে কাজ করা জনা দশেক কর্মীকে ছুটিতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। কাঞ্চননগর পূর্বপাড়ার বলরাম পাল, উদয়পল্লি বাজারের গোবিন্দ পাল, জয়ন্ত পাল, নীলপুরের সঞ্জীব পালেরাও একই রকম পরিস্থিতির কথা জানান।
শহরের মৃৎশিল্পীরা জানান, ফাল্গুন মাস থেকে তাঁদের টানা কাজ চলে। কালীপুজো মিটলে দম ফেলার ফুরসত পাওয়া যায়। মাটি, রং, কাঠামো, খড়, শ্রমিক খরচের জন্য শিল্পীদের কেউ-কেউ প্রায় চার-পাঁচ লক্ষ টাকা ঋণ নেন। প্রতিমা বিক্রি করে তা শোধ হয়। লাভের টাকায় চলে সংসারও। অনেক শিল্পীর দাবি, এ বারও আগে থেকে ঋণ নিয়ে রেখেছেন। কিন্তু এ বার পুজোর কেমন পরিস্থিতি থাকবে, কতটা উপার্জন হবে— সে সব নিয়ে চিন্তায় তাঁরা।
পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি দেবু টুডু জানান, সরকারের ‘প্রচেষ্টা’ প্রকল্পে এই ধরনের শিল্পীরা নাম নথিভুক্ত করতে পারেন। পরিস্থিতি বুঝে ভবিষ্যতে সরকার তাঁদের নিয়ে নিশ্চয় কোনও পদক্ষেপ করবে, আশা তাঁর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy