কালনার শাসপুরে বাঁশ দিয়ে এলাকা ঘেরা হয়েছে। নিজস্ব চিত্র
এক দিন বিরতির পরেই করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা হাফ সেঞ্চুরি পার করে ফেলল পূর্ব বর্ধমানে।
বুধবার নতুন করে জেলায় এক শিশু-সহ ২১ জন করোনা আক্রান্তের হদিস মিলেছে। আক্রান্তেরা প্রত্যেকেই পরিযায়ী শ্রমিক বলে জানা গিয়েছে। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত মিলেছে মঙ্গলকোট ও রায়না ২ ব্লকে। জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) বিজয় ভারতী বলেন, ‘‘বুধবার ২১ জন করোনা আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। প্রত্যেকেই ভিন্ রাজ্য থেকে এ জেলায় এসেছেন। আক্রান্তদের কাঁকসার কোভিড-১৯ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া, ঝাড়খণ্ডের রাঁচিতে বাস দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া এক পরিযায়ী শ্রমিকের দেহে করোনাভাইরাসের প্রমাণ মিলেছে।’’
এখনও পর্যন্ত কালনা এলাকায় সাত জন পরিযায়ী শ্রমিক করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তবে কালনা ও কাটোয়া শহরে এই প্রথম করোনা আক্রান্তের খোঁজ মিলল। কালনায় আক্রান্তের বাড়ি শহরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি মুম্বই থেকে একটি ট্রাকে বেশ কয়েকজন গয়না-শিল্পের সঙ্গে যুক্ত কর্মী কালনায় ফেরেন। তাঁদের মধ্যে আক্রান্ত যুবক ছাড়া, কালনা ২ ব্লকের দু’জন ছিলেন। তাঁদের কালনার একটি নিভৃতবাস কেন্দ্রে রাখা হয়। গত ২৩মে লালারস পরীক্ষা হয়। মঙ্গলবার রাতে জানা যায়, তিন জনেরই রিপোর্ট ‘পজি়টিভ’। বুধবার সকালে পুলিশ গিয়ে এলাকাগুলি ‘সিল’ করে দেয়।
বর্ধমানের কাঞ্চননগরেও ফের এক জন আক্রান্ত হয়েছেন। এর আগে কাঞ্চননগরে দেড় বছরের এক শিশুর দেহে করোনাভাইরাস মিলেছিল। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বছর পঁয়তাল্লিশের ওই ব্যক্তি আমদাবাদে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতেন। সেখান থেকে বাস-ট্রাকে কাঞ্চননগরের বাড়িতে ফেরেন তিনি। ২১ মে মেমারি পুলিশ তাঁকে ‘আটকে’ নিভৃতবাস কেন্দ্রে নিয়ে যায়। সেখানেই তাঁর লালারসের নমুনা সংগ্রহ হয়। মঙ্গলবার রাতে ‘পজি়টিভ’ রিপোর্ট আসে। বুধবার বেলা ১১টা নাগাদ তাঁকে কাঁকসার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশ জানিয়েছে, বড় এলাকা জুড়ে বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে ‘সিল’ করা হয়েছে।
মেমারির দু’জন চেন্নাইয়ে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করার জন্য প্রায় একই সময়ে এলাকা ছেড়েছিলেন। একই জায়গায় থাকতেন। একই সঙ্গে ১৯ মে শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনে বর্ধমানে নামেন তাঁরা। মেমারির আইটিআই কলেজের নিভৃতবাস কেন্দ্রে রাখার পরে ২০ মে তাঁদের লালারসের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ওই দিনই মেমারির গ্রামে ফিরে যান দুই যুবক। বাড়িতেই নিভৃতবাসে ছিলেন তাঁরা। মঙ্গলবার রাতে তাঁদেরও রিপোর্ট আসে।
ভাতারের কালিপাহাড়ির আক্রান্ত দম্পতিও আমদাবাদে গয়নার কাজ করতেন। ১৯ মে ছেলেমেয়েদের নিয়ে ভাতারে ফিরে আসেন তাঁরা। প্রথমে ওরগ্রামের নিভৃতবাস কেন্দ্রে ঠাঁই হয়। নমুনা নেওয়ার পরে ছেড়ে দেওয়া হয় তাঁদের। মঙ্গলবার রাতে জানা যায়, ওই দম্পতির ছোট ছেলে, দু’বছরের শিশু করোনা-আক্রান্ত। বুধবার তাঁদের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
আক্রান্ত হয়েছেন দিল্লির অশোকবিহারে স্টিল পালিশের কাজ করা রায়না ২ ব্লকের আলমপুরের এক যুবকও। ২১ মে জেলায় ঢোকার পর থেকে ২৪ মে পর্যন্ত কিসান মান্ডির নিভৃতবাস কেন্দ্রেই ছিলেন তিনি। স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, ওই যুবকের প্রত্যক্ষ সংস্পর্শে আসায় সাত জনকে বাড়িতেই নিভৃতবাসে থাকার জন্য বলা হয়েছে। রাতে এই ব্লকে আরও তিন আক্রান্তের খোঁজ মেলে। রায়না ১ ব্লকেও এক জন কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন।
কাটোয়ার দু’টি ব্লক, মঙ্গলকোট ও কেতুগ্রামেও করোনা আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে। তাঁরা পরিযায়ী শ্রমিক। প্রত্যেককে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এলাকায় গিয়েছে প্রশাসন, স্বাস্থ্য দফতরের দল। নজর রাখা হয়েছে তাঁদের সংস্পর্শে আসা লোকজনের দিকেও।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) প্রণব রায় বলেন, ‘‘২১ জন আক্রান্তের প্রত্যেকেই ভিন্ রাজ্য থেকে এসেছেন।’’ পরিযায়ী যত বাড়বে আক্রান্ত বাড়বে, আশঙ্কা জেলার কর্তাদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy