মনোজ সরাফ। নিজস্ব চিত্র।
তাঁর বড় হওয়া এই শহরে। তাই এই শহরের অবস্থা দেখে আর স্থির থাকতে পারেননি উখড়া চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি, বছর ৫০-এর মনোজ সরাফ। নিজে অক্সিজেন প্ল্যান্টের মালিক। তাই কোভিড পরিস্থিতিতে এ পর্যন্ত মোট ৭৪ জনকে বিনামূল্যে সিলিন্ডার-সহ অক্সিজেন দিয়ে শহরের পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি। তাঁর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে ব্লক প্রশাসনও।
উখড়ার প্রায় চার প্রজন্মের বাসিন্দা মনোজবাবুর বাবা প্রয়াত অযোধ্যা সরাফও ছিলেন ব্যবসায়ী। রাঁচীর একটি কলেজ থেকে মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে মনোজবাবু যোগ দেন পৈতৃক ব্যবসায়। পরে, নিজে দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকে তৈরি করেন অক্সিজেন প্ল্যান্ট। সেখানে প্রতি ঘণ্টায় ১৫০ কিউবিক মিটার শিল্পক্ষেত্রের উপযোগী অক্সিজেন উৎপাদন হয়। তবে এই মুহূর্তে প্রশাসনের নির্দেশ মতো সব অক্সিজেনই দিতে হচ্ছে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে।
কিন্তু সরকারি বা বেসরকারি স্তরে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংখ্যা যথেষ্ট নয়, এমন অভিযোগ উঠেছে উখড়া-সহ জেলার নানা প্রান্ত থেকে। এর পরেই মনোজবাবু সিদ্ধান্ত নেন, সিলিন্ডার বিলির। তিনি বলেন, ‘‘আমার অক্সিজেন প্ল্যান্ট থাকতে আমার প্রিয় শহর উখড়ার মানুষ প্রাণ-বায়ু পাবেন না, এটা হতে পারে না। তাই শহরের পাশে দাঁড়াতে এমন কাজ শুরু করি।’’ ছেলের এই কাজে গর্বিত মা রামপতিদেবীও।
বিভিন্ন হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে মনোজবাবু-সহ তিন জনের মোবাইল নম্বর ছড়িয়ে দিয়ে সিলিন্ডার বিলির বার্তা দেওয়া হচ্ছে। ওই নম্বরগুলিতে ফোন করে, চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ও আধার কার্ড নিয়ে রোগীর পরিজনেরা পৌঁছে যাচ্ছেন মনোজবাবুদের উখড়ার একটি অফিসে। সেখান থেকে নিয়ে যেতে হচ্ছে অক্সিজেন ও সিলিন্ডার। এ ভাবে, মোট ৬৫ জন কোভিড রোগী এবং ন’জন হৃদরোগ, ক্যানসার বা শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত রোগীর কাছে সিলিন্ডার পৌঁছে দেওয়া গিয়েছে বলে জানান মনোজবাবু। এই কাজ, কোনও ভাবেই প্ল্যান্টের সামাজিক উন্নয়ন তহবিল থেকে নয়। বরং, এই কাজ করতে গিয়ে এ পর্যন্ত তাঁর লাখখানেক টাকা খরচ হয়েছে বলে দাবি ওই ব্যবসায়ীর। উখড়া বাজপেয়ী মোড়ের এক বাসিন্দা জানান, অক্সিজেন সিলিন্ডারের অভাবে আতান্তরে পড়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত সমস্যার সমাধান হয় মনোজবাবুকে বিষয়টি জানানোর পরে। একই কথা জানান উখড়া গ্রামের বাসিন্দা এক কোভিড রোগীও।
তবে মনোজবাবু বলেন, ‘‘অক্সিজেন-সহ সিলিন্ডার শুধুমাত্র উখড়ার বাসিন্দাদের জন্য। এর বাইরে অণ্ডাল পর্যন্ত দশ কিলোমিটার এলাকায় কেউ সিলিন্ডার নিয়ে এলে তাঁকেও বিনা খরচে অক্সিজেন ভরে দেব।” মনোজবাবুর এই কাজকে স্বাগত জানিয়েছেন বিডিও (অণ্ডাল) সুদীপ্ত বিশ্বাসও। তাঁর কথায়, ‘‘মনোজবাবুর কাজের জন্য উখড়ার বহু মানুষ উপকৃত হচ্ছেন। তাঁকে অভিনন্দন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy