বর্ধমানের সদরঘাটে করোনা আক্রান্তের খোঁজ মেলার পরে প্রশাসনের দল। নিজস্ব চিত্র
এক দিনে দশ জন নতুন করোনা আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে পূর্ব বর্ধমান জেলায়। লকডাউন চতুর্থ পর্বের শেষ পর্যায়ে এসে লাফিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ায় চিন্তা বাড়ছে প্রশাসনের। আক্রান্তদের বেশির ভাগই পরিযায়ী শ্রমিক। রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের হিসেবে পূর্ব বর্ধমানে এখনও পর্যন্ত ৩৫ জন আক্রান্ত। যদিও জেলা প্রশাসনের হিসাবে সংখ্যাটা ২৬। আক্রান্তদের মধ্যে আট জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন বলে দাবি তাঁদের।
জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) বিজয় ভারতী বলেন, “লালারসের নমুনা সংগ্রহ বাড়ানো হয়েছে। আক্রান্ত এলাকা ‘এ’ ও ‘বি’ দুটি জ়োনে ভাগ করে গণ্ডিবদ্ধ করা হচ্ছে।’’ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) প্রণব রায় বলেন, “রবিবার রাত থেকে জেলায় ন’জন আক্রান্তের হদিস মিলেছে। এ ছাড়া, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পশ্চিম বর্ধমানের এক মহিলার করোনা পজ়িটিভ রিপোর্ট এসেছে।’’
আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ায় প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতরের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবের অভিযোগও উঠছে। মেমারির ঝিকড়া গ্রামের এক যুবক দিল্লির শা-পুর এলাকায় থাকতেন। পেশায় নির্মাণকর্মী ওই যুবক মেমারি ২ ব্লকের সাতগেছিয়ার একটি ‘কোয়রান্টিন’ কেন্দ্রে ছিলেন। কাল রাতে ওই নিভৃতবাসে থাকা সমস্ত পরিযায়ী শ্রমিককে ছেড়ে দেওয়া হয়। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাড়ি থেকে একটু দূরে খড়ের ছাউনি দেওয়া মাটির বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন ওই যুবক। তাঁর স্ত্রী সেখানেই তাঁকে দু’বার খাবার পৌঁছে দেন।
গভীর রাতে জানা যায়, যুবকের রিপোর্ট ‘পজ়িটিভ’। খবর পেয়ে পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন গ্রামে আসে। অভিযোগ, স্বাস্থ্য দফতরের কাউকে দেখা যায়নি। বারবার অ্যাম্বুল্যান্স চেয়ে স্বাস্থ্য দফতরকে ফোন করেও সাড়া মেলেনি, দাবি প্রশাসনের একাংশের। শেষ পর্যন্ত রিপোর্ট আসার প্রায় ১২ ঘণ্টা পরে অ্যাম্বুল্যান্স করে ওই ব্যক্তিকে কাঁকসার কোভিড-১৯ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
বিএমওইএইচ (মেমারি ২) অভিষেক রায়ের দাবি, “জেলায় এক সঙ্গে অনেকগুলি করোনা পজ়িটিভ রিপোর্ট এসেছে। অ্যাম্বুল্যান্স চালক বা সঙ্গে যাঁরা যাবেন, তাঁদের স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয় আছে। সেগুলি দেখতে হয়েছে।’’ এ দিন বিকেলে মেমারি ২ ব্লকের বড়পলাশন ২ পঞ্চায়েতের পাঁজারপাড়ার এক যুবকেরও করোনা ‘পজ়িটিভ’ রিপোর্ট এসেছে। তিনি মুম্বই থেকে রবিবার দুপুরে ফিরেছেন। সেখানে গয়নার দোকানে কাজ করতেন। বর্ধমানে তাঁর লালারসের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল।
বর্ধমান শহরে দামোদর পাড়ে সদর ঘাটে এক করোনা-আক্রান্তের খোঁজ করতে গিয়ে কার্যত ‘নাকানিচোবানি’ খেতে হয় পুলিশকে। পুলিশের দাবি, স্বাস্থ্য দফতর থেকে তাঁদের কাছে যে রিপোর্ট এসেছিল, সেখানে তথ্যে ভুল থাকায় আক্রান্তকে খুঁজে পেতে হয়রান হতে হয় বর্ধমান থানাকে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, সদরঘাটের ওই ব্যক্তি মধ্যপ্রদেশে একটি সরকারি সংস্থায় কাজ করতেন। রবিবার দুপুরে বাড়ি ফেরেন তিনি। রাতেই রিপোর্টে ধরা পড়ে রোগ। ওই ব্যক্তিকেও রিপোর্ট পাওয়ার প্রায় ১৪ ঘণ্টা পরে কাঁকসার হাসপাতালে পাঠানো হয়।
আউশগ্রামের ভেদিয়ায় চেন্নাই ফেরত এক ব্যক্তির দেহে করোনা সংক্রমণ মিলেছে। রবিবার রাতে তাঁকেও কাঁকসার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। গলসির বিক্রমপুরে সোমবার দুপুরে এক করোনা আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। তিনিও মুম্বই থেকে ফিরেছেন। এ ছাড়া, রায়নায় দু’জন, জামালপুরের জৌ গ্রামে এক জন পরিযায়ী শ্রমিকের দেহে সংক্রমণ মিলেছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। তিন জনই মহারাষ্ট্র থেকে ফিরেছেন। রাতে পূর্বস্থলীর জাহান্নগরে এক জন আক্রান্তের খোঁজ মেলে। তিনি মুম্বই থেকে ফিরেছেন।
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পশ্চিম বর্ধমানের বারাবনির পানুরিয়ার এক মহিলারও ‘করোনা পজ়িটিভ’ রিপোর্ট এসেছে। আসানসোল জেলা হাসপাতালে গত বুধবার ওই মহিলার গর্ভপাত হয়। শনিবার তাঁকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। উপসর্গ দেখে রবিবার সকালে লালারসের নমুনা নেওয়া হয়। সোমবার সকালে জানা যায়, ওই মহিলা করোনায় আক্রান্ত। তাঁকে কাঁকসার হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ সুহৃতা পাল বলেন, “স্বাস্থ্যবিধান মেনে যা-যা করণীয়, সবটাই করা হচ্ছে।’’ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ওই মহিলার প্রত্যক্ষ সংস্পর্শে আসায় ১১ জন চিকিৎসক-নার্সকে নিভৃতবাস কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের ওয়ার্ড ও লিফট্ ‘স্যানিটাইজ়’ করা হয়েছে।
জেলাশাসক জানান, প্রথম দিকে করোনা-আক্রান্তদের মধ্যে কলকাতা যোগ মিলছিল। এখন পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে করোনা-আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy