Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

মুরগির মাংসে থাবা গুজবের

তবে বিশেষজ্ঞেরা যা-ই বলুন, দুর্গাপুরে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, মুরগির মাংসের নানা ধরনের কাবাব, বিভিন্ন পদ, ‘চিকেন বিরিয়ানি’, সব কিছুরই চাহিদা এক ধাক্কায় অনেকটাই কমে গিয়েছে।

 থরে থরে সাজানো মুরগির মাংসের নানা পদ। দুর্গাপুরের একটি রেস্তরাঁয়। ছবি: বিকাশ মশান

থরে থরে সাজানো মুরগির মাংসের নানা পদ। দুর্গাপুরের একটি রেস্তরাঁয়। ছবি: বিকাশ মশান

সুব্রত সীট
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০২০ ০২:২৩
Share: Save:

পরিচিত ক্রেতা ফ্রায়েড রাইস আর সঙ্গে পনীর খাচ্ছেন। তা দেখিয়ে বেনাচিতির এক রেস্তরাঁর কর্মী মহম্মদ ইউনুস জানালেন, ওই ক্রেতার পছন্দের পদ, পরোটা আর চিলি ‘চিকেন’। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় মুরগির মাংস (চিকেন) থেকে করোনা ভাইরাস ছড়াতে পারে, এমন ‘প্রচার’ এক ধাক্কায় ব্যবসায় প্রভাব ফেলছে, মত দুর্গাপুরের নানা প্রান্তের রেস্তরাঁ ও ফাস্টফুডের দোকানিদের। যদিও, বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, মুরগির মাংস বা ডিম থেকে ভাইরাসটি ছড়ানোর কোনও রকম আশঙ্কা নেই।

বেলগাছিয়ার প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য চঞ্চল গুহ বলেন, ‘‘মুরগির মাংস বা ডিম নিয়ে আতঙ্কের কোনও কারণ নেই। এ থেকে করোনা ভাইরাস ছড়ানোর প্রচারটা সম্পূর্ণ গুজব। এর কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। এ পর্যন্ত কোথাও প্রমাণিত হয়নি, মুরগির মাংস খেয়ে কেউ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এই ভাইরাসের হামলা রুখতে মানুষকে পরিচ্ছন্নতার দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।’’

তবে বিশেষজ্ঞেরা যা-ই বলুন, দুর্গাপুরে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, মুরগির মাংসের নানা ধরনের কাবাব, বিভিন্ন পদ, ‘চিকেন বিরিয়ানি’, সব কিছুরই চাহিদা এক ধাক্কায় অনেকটাই কমে গিয়েছে। বিক্রি বেড়েছে পনীর-সহ অন্য কিছু পদের। পাশাপাশি, ফাস্টফুডের দোকানেও ‘চিকেন রোল’, ‘চিকেন চাউমিন’-কে টেক্কা দিচ্ছে ‘এগ রোল’ বা ‘ভেজ চাউমিন’।

বেনাচিতির একটি রেস্তরাঁয় খোঁজ নিয়ে জানা গেল, গত এক সপ্তাহে আচমকা ‘মাটন বিরিয়ানি’র চাহিদাও বেড়েছে। ওই রেস্তরাঁর এক কর্মী জানান, দু’হাঁড়ি ‘চিকেন বিরিয়ানি’ ও এক হাঁড়ি ‘মাটন বিরিয়ানি’ বানানো হত। কিন্তু সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, মাটন বিরিয়ানির হাঁড়ি খালি হলেও বেঁচে যাচ্ছে এক হাঁড়ি ‘চিকেন বিরিয়ানি’। এখন তাই দু’হাঁড়ি মাটন ও এক হাঁড়ি চিকেন বিরিয়ানি বানানো হচ্ছে। সিটি সেন্টারের একটি রেস্তরাঁ কর্তৃপক্ষের দাবি, গত কয়েক দিনে মুরগির মাংসের নানা পদের বিক্রি কমেছে অন্তত ২৫ শতাংশ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রেস্তরাঁ-কর্তা বলেন, ‘‘ক্রেতাদের ইচ্ছাই ব্যবসার মূল চাবিকাঠি। তাই ক্রেতাদের সাহস করে চিকেন নিয়ে গুজবের কথা বলছি না। তবে আমরা নিজেরা চিকেন খাচ্ছি।’’

একই পরিস্থিতি ফাস্টফুডের দোকানেও। সিটি সেন্টারে রাস্তার ধারের এক ফাস্টফুড দোকানি কৃষ্ণ মেটে জানান, তাঁদের চিকেন মোগলাই, চিকেন চাউমিন ও চিকেন রোলের ভাল কদর রয়েছে। কিন্তু গত চার-পাঁচ দিনে অবস্থা এমনই যে, এগ রোল, এগ চাউমিন বানাতে হচ্ছে। মুরগির মাংসের পদের কদর এতটাই কম যে লাভও তেমন হচ্ছে না। তাঁর দোকানে এগ রোল কিনতে আসা এক ক্রেতা বলেন, ‘‘সত্যি-মিথ্যা জানি না। করোনার হাত থেকে বাঁচতে সাবধানের মার নেই।’’

পাশাপাশি, মুরগির মাংসের দরেও প্রভাব পড়ছে বলে জানান বিক্রেতারা। দুর্গাপুরের বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, মুরগির মাংসের কেজি প্রতি দর ঠেকেছে ৯০ থেকে একশো টাকার মধ্যে। অথচ, সাধারণত দর থাকে ১৬০ টাকার আশপাশে। ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল পোলট্রি ফেডারেশন’-এর তথ্য অনুযায়ী, সপ্তাহে জেলায় পোলট্রি ব্যবসায় ক্ষতির পরিমাণ ১৪ কোটি টাকারও বেশি। রাজ্য জুড়ে মুরগির মাংসের চাহিদা সপ্তাহে কমেছে গড়ে ৫৫ শতাংশ। পোলট্রি ব্যবসায়ী ক্ষতির পরিমাণ রাজ্যে সপ্তাহে ১৬০ কোটি টাকা।

এই পরিস্থিতিতে দুর্গাপুরের বেনাচিতির সরকারি পশু হাসপাতালের চিকিৎসক অভ্রকান্তি রায়ের পরামর্শ, ‘‘করোনা-গুজবে কান দেবেন না। এই ভাইরাস মুরগিকে আক্রমণ করে না। তাই চিকেন থেকে মানুষে সংক্রামিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। নিশ্চিন্তে আগের মতোই চিকেন খেতে

পারেন সবাই।’’

তবে ক্রেতারা কবে নিশ্চিন্ত হন, এখন সে দিকেই তাকিয়ে ব্যবসায়ীরা।

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Chicken
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy