Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Chittaranjan Locomotive Works

২৩ জানুয়ারি ছুটি নয় কেন, বিতর্ক কারখানায়

শ্রমিক নেতৃত্বের দাবি, ১৯৫০-র ২৬ জানুয়ারি সংস্থায় উৎপাদন শুরু হয়। তার পরের বছর থেকে এই দিনটিতে সবেতন ছুটি দেওয়া হত।

সিএলডব্লিউ-তে প্রতিবাদ কর্মসূচি। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

সিএলডব্লিউ-তে প্রতিবাদ কর্মসূচি। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
আসানসোল শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২০ ১৩:০০
Share: Save:

কারখানা তৈরির পরে এই প্রথম ২৩ জানুয়ারি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিনে ছুটি পেলেন না রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ ওয়ার্কসের (সিএলডব্লিউ) শ্রমিকেরা। বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে কারখানা চত্বরে এবং শহরে। বৃহস্পতিবার কারখানায় প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে অবস্থান, বিক্ষোভেরও কর্মসূচি নেয় কারখানার কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠনগুলির সমন্বয়ে গঠিত ‘জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি’।

শ্রমিক নেতৃত্বের দাবি, ১৯৫০-র ২৬ জানুয়ারি সংস্থায় উৎপাদন শুরু হয়। তার পরের বছর থেকে এই দিনটিতে সবেতন ছুটি দেওয়া হত। কিন্তু এ বার তা না হওয়ায় সকাল ১১টা থেকে কমিটির নেতৃত্বে কয়েকশো শ্রমিক প্রশাসনিক ভবনের সামনে মঞ্চ সাজিয়ে সুভাষচন্দ্রের প্রতিকৃতিতে মালা দিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করেন। জাতীয় পতাকাও উত্তোলন করা হয়।

কারখানার ওয়েবসাইটে ‘রেসট্রিকটেড হলিডেজ়’ বলে ২৩ জানুয়ারি-সহ মোট কুড়ি দিনের তালিকা রয়েছে। সেই তালিকার নীচে লেখা, এই কুড়িটি দিনের মধ্যে যে কোনও দু’টি দিন কারখানা ছুটি নিতে পারে। কিন্তু সিটুর কারখানা শাখার সহ-সভাপতি চিন্ময় গুহের ক্ষোভ, ‘‘শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা না করে কারখানা কর্তৃপক্ষ ২৩ জানুয়ারির ছুটি বাতিল করেছেন। এটা শ্রমিকদের আবেগে আঘাত করেছে।’’ আইএনটিইউসি নেতা নেপাল চক্রবর্তীও বলেন, ‘‘কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ না হলে ভবিষ্যতে আরও অনেক অধিকার হারাতে হবে। সিদ্ধান্ত বদলের জন্য কারখানা কর্তৃপক্ষকে বলা হলেও লাভ হয়নি।’’

দুপুর ২টো নাগাদ কমিটি সংস্থার প্রিন্সিপাল চিফ পার্সোনেল অফিসার এসডি পাটিডারের সঙ্গে দেখা করে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে স্মারকলিপি দেয়। বিষয়টি রেল বোর্ডকে জানানো হবে, আশ্বাস কর্তৃপক্ষের। যদিও এই সিদ্ধান্ত কেন, সে বিষয়ে প্রতিক্রিয়ার জন্য যোগাযোগ করা হলে সংস্থার জনসংযোগ আধিকারিক মন্তার সিংহ মন্তব্য করতে চাননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন আধিকারিকের অবশ্য দাবি, ২৩ জানুয়ারির ছুটি বাতিল রেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত। মার্চ অর্থবর্ষের শেষ মাস। তাই এই কয়েক মাসে কারখানার উৎপাদন প্রক্রিয়া তুঙ্গে ওঠে। ফলে, ছুটি দিলে উৎপাদন ও আর্থিক বিষয়টি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। পরবর্তী অর্থবর্ষের শুরুতে কোনও একটা দিন শ্রমিক কর্মীদের জন্য সবেতন ছুটি দেওয়া হতে পারে।

বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও। তৃণমূল নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারির ক্ষোভ, ‘‘অতীতে একাধিক বার এই দিনটিকে ‘জাতীয় ছুটি’ হিসেবে ঘোষণা করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার কোনও পদক্ষেপ করেনি। এটা দেশবাসীর আবেগে আঘাত।’’ দিনটিকে ‘দেশপ্রেম দিবস’ হিসেবে ঘোষণার দাবি ফরওয়ার্ড ব্লকের দীর্ঘদিনের। সিপিএম নেতা বংশগোপাল চৌধুরীও বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রায়ই নানা বক্তৃতায় সুভাষচন্দ্র বসুর কথা বলেন। কিন্তু নেতাজির প্রতি কোনও দিনই প্রকৃত সম্মান দেখাননি বিজেপি নেতৃত্ব।’’ ঘটনাচক্রে, ক্ষমতায় এসে ঝাড়খণ্ডে সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিনে আবার সরকারি ছুটি ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেন মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সরেন। তখনই জানা গিয়েছিল, বিজেপি সরকার ২০১৫ সাল থেকে ঝাড়খণ্ডে এই ছুটি তুলে দিয়েছিল। বিজেপির জেলা সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোড়ুই অবশ্য বলেন, ‘‘আমার ধারণা, এটা রেল বোর্ড বা কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্ত নয়। কারখানা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত। এমন সিদ্ধান্তে সরকারের ভাবমূর্তির ক্ষতি হচ্ছে। তবে ভারতমাতার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের এক জন নেতাজি, কর্মের আদর্শও শিখিয়েছেন আমাদের।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Chittaranjan Chittaranjan Locomotive Works
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy