যাত্রীর অপেক্ষায় অটো ও টোটো। আসানসোলে। —নিজস্ব চিত্র।
বড় রাস্তা থেকে যাত্রী তুলে নিচ্ছে অটো-টোটো। প্রতিবাদ করলে বেধে যাচ্ছে বচসা থেকে হাতাহাতি। পশ্চিম বর্ধমান জেলায় বাসের মালিক-কর্মীদের এই অভিযোগ অনেক দিনের। অটো-টোটোর সঙ্গে বাস-মিনিবাসের এই দ্বন্দ্ব চলছেই। প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে উদাসীন বলে অভিযোগ বাস মালিক সংগঠনের। অটো ও টোটো চালকদেরও ক্ষোভ রয়েছে রুট নিয়ে।
২০১৯ সালে কলকাতা হাই কোর্ট টোটো ও অটো চলাচল নিয়ে রাজ্য সরকারের ২০১৮ ও ২০১৯ সালের নির্দেশিকা কার্যকরের নির্দেশ জারি করেছিল। সেই নির্দেশিকা অনুযায়ী, রাজ্য সড়ক, জিটি রোড, জাতীয় সড়ক-সহ বাস-মিনিবাস চলাচলের পথে অটো-টোটো চলবে না। এলাকার ভিতরের রাস্তা থেকে মূল রাস্তা পর্যন্ত শুধু অটো-টোটো চলবে। অভিযোগ, এখনও সেই নির্দেশিকা কার্যকর হয়নি। ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত পশ্চিম বর্ধমানে বাস-মিনিবাস মালিকদের নিয়ে জেলা প্রশাসন ২৬ বার বৈঠক করেছে। তার পরেও নির্দেশিকা কার্যত উপেক্ষা করে প্রধান রাস্তায় টোটো-অটোর সংখ্যা অনেক গুণ বেড়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। গত ৩ জুলাই বর্ধমান ভবনে রাজ্যের বাস-মিনিবাস সমন্বয় সমিতির সম্মেলন হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হবে সংগঠন। তাতে সমস্যা না মিটলে আন্দোলনে নামা হবে।
মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গিয়েছে, বরাকর থেকে ডিসেরগড়, আসানসোল জেলা হাসপাতাল থেকে আদালত হয়ে বার্নপুর, কল্যাণপুর থেকে মহিশীলা কলোনি, রানিগঞ্জ মোড় থেকে তিরাট, রানিগঞ্জ থেকে মেজিয়া ঘাট, জামুড়িয়া থেকে চুরুলিয়া ও দরবারডাঙা, কুলটির শীতলপুর থেকে চিনাকুড়ির মতো ১৬টি রুটে মিনিবাস চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। পাণ্ডবেশ্বর থেকে ছত্রিশগন্ডা, জামুড়িয়া থেকে দোমহানি, হরিপুর থেকে উখড়ার মতো রুটে প্রায় দেড়শো মিনিবাস বন্ধ হয়ে গিয়েছে। প্রায় ৫০টি মিনিবাস বন্ধের মুখে। আবার, দুর্গাপুরের প্রান্তিকা থেকে চুয়ান্ন ফুট, প্রান্তিকা থেকে এমএএমসি হয়ে দুর্গাপুর, প্রান্তিকা থেকে ওয়ারিয়া রুটে মিনিবাস পুরোপুরি বন্ধ। দুর্গাপুর স্টেশন থেকে মায়াবাজার, বিজি জ়োন, এ-জ়োন, বিধাননগর, বেনাচিতি রুটে প্রায় অর্ধেক বাস বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অন্ডাল-উখড়া রুটে ১৮টি মিনিবাসের মধ্যে একটি চালু আছে।
আসানসোল বড় বাসের মালিক সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে, আসানসোল-বরাকর রুটে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আসানসোল থেকে চিত্তরঞ্জন, বার্নপুর ও রানিগঞ্জ রুটে শ’খানেক বাসের মধ্যে এখন চলছে ২৪টি। অভিযোগ, ২০১৯ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত প্রায় ২০ বার অটো-টোটোর চালকদের হাতে প্রহৃত হয়েছেন মিনিবাসের কর্মীরা।
অটো চালকদের পাল্টা দাবি, ২০১৬ সালে ১৮৭০টি অটোকে ৭৩টি রুটে চালানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়। তার পরে ৪৭১টিকে অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রায় তিনশো অটো নির্ধারিত ফি জমা দিয়েও অনুমোদন পায়নি বলে অভিযোগ। এর পর আসানসোল পুরসভা ন’শো টোটোকে ‘টেম্পোরারি আইডেন্টিফিকেশন নম্বর’ (টিন) দিয়েছিল। রুটও ঠিক করে দিয়েছিল। এর পরে ২০১৯ সালে পরিবহণ দফতর জেলায় বিভিন্ন নির্দিষ্ট রুটে টোটো চালানোর অনুমতি দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছিল। টোটো চালকদের একাংশের দাবি, তাতে প্রায় এক হাজার জন আবেদনপত্র পূরণ করেছিল। কিন্তু তাঁদের রেজিস্ট্রেশন হলেও, ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং নির্দিষ্ট রুট দেওয়া হয়নি।
ফলে, বাস-অটো-টোটো যাতায়াত করছে প্রায় একই রুটে। যাত্রী নিয়ে বেধে যাচ্ছে কাড়াকাড়ি।
(চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy