এ পাড়াতেই বসবাস সাফাইকর্মীদের। আসানসোলে। ছবি: পাপন চৌধুরী
দিন-রাত এক করে আসানসোল পুর-এলাকাকে সাফসুতরো রাখেন ওঁরা। কিন্তু তাঁদের বেশির ভাগই অস্থায়ী কর্মী। পাশাপাশি, তাঁদের আবাস যেখানে, সেই বাড়ি-ঘরগুলির অবস্থা কার্যত খণ্ডহরের মতো। অভিযোগ, কোভিড-পরিস্থিতিতে কাজ করতে হলেও নিয়মিত মেলে না মাস্ক, ‘হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার’। এই অবস্থায় তাঁদের প্রত্যাশা, যে দলই পুর-বোর্ড তৈরি করুক, তাঁদের অবস্থার উন্নতিতে যেন ন্যূনতম পদক্ষেপ করা হয়। পুর-এলাকায় মোট ২১৭ জন স্থায়ী ও ২,৭৯১ জন অস্থায়ী সাফাইকর্মী রয়েছেন।
আসানসোলের চার নম্বর বরোর ৪১ ও ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডের সুইপার কলোনিতে প্রায় দু’শোটি পরিবার বসবাস করে। ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে প্রায় তিরিশ বছর আগে সাফাইকর্মীদের জন্য তৈরি করা হয়েছিল শতাধিক আবাসন। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, সে সব আবাসনের দেওয়াল ভাঙাচোরা। মেঝেতে চাটাইয়ের বেড়া। ওই এলাকার বাসিন্দা পূজা হাঁড়ি, পার্বতী হাঁড়িদের ক্ষোভ, “বর্ষায় জলে ভাসে গোটা ঘর। শীতে ঠান্ডায় রাত জাগাটাই দস্তুর। খুব কষ্টে আছি।” অথচ, দেখা গেল, ওই কলোনির সামনেই বিপিএল তালিকাভুক্তদের জন্য তিন তলা আবাসন তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু সে সব আবাসন তাঁরা এখনও পাননি বলেই জানান সাফইকর্মীরা।
পুরসভার ১ নম্বর বরো, জামুড়িয়ার স্যানিটেশন ইনস্পেক্টর নির্মল মণ্ডল জানান, ১৯৯৫-এ সাবেক জামুড়িয়া পুরসভায় ৪৬ জন ঠিকাভিত্তিক সাফাইকর্মী ছিলেন। ২০১৫-য় নব কলেবরে আসানসোল পুরসভা তৈরির পরে, ওই ৪৬ জন-সহ ১৫৯ জনকে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ করা হয়। প্রায় ১৫ বছর ধরে জামুড়িয়ায় সাফাইকর্মী হিসাবে কাজ করছেন চন্দন বাল্মীকি। তিনি বলেন, “মাসে ২৬ দিন, দৈনিক ৩১৭ টাকা মজুরিতে কাজ পাওয়া যায়। কাজে যোগ না দিলে, মজুরি পাওয়া যায় না। নেই অসুস্থতাজনিত ছুটি, চিকিৎসাজনিত কোনও সুযোগসুবিধা।” আর এক সাফাইকর্মী বান্টি বাল্মীকি জানান, পুরসভা তাঁদের পরিবহণের জন্যও কোনও ব্যবস্থা করেনি। সবারই প্রশ্ন কবে হবে, তাঁদের স্থায়ীকরণ। স্থায়ীকরণের বিষয়টি তাঁদের দীর্ঘদিনের দাবি, জানান ২ নম্বর বরো, রানিগঞ্জের নানা এলাকায় কর্মরত সাফাইকর্মী উত্তম হাড়িও। তিনি বলেন, “স্থায়ীকর্মীদের মতোই আমরা কাজ করি। কিন্তু বার বার আর্জি জানানোর পরেও, আমরা এখনও অস্থায়ীই রয়ে গেলাম।” এই বরোর স্যানিটেশন ইনস্পেক্টর সুমিত মাজি জানান, এখানে ৫২ জন স্থায়ী ও ৩৭৪ জন অস্থায়ী সাফাইকর্মী রয়েছেন।
সাফাইকর্মীদের অবস্থা নিয়ে সুর চড়াচ্ছেন বিরোধীরাও। ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী বিজেপি কাউন্সিলর কাউন্সিলর বিগু ঠাকুর বলেন, “সাফাইকর্মীদের আবাসনগুলি দীর্ঘদিন ধরেই বেহাল। রয়েছে নিকাশির সমস্যাও। পুরসভাকে বার বার বলেও কিছু হয়নি।” যদিও চার নম্বর বরোর বিদায়ী চেয়ারম্যান দয়াময় রায় বলেন, “সাফাইকর্মীদের অবস্থার উন্নতির জন্য নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।” এ দিকে, সিটু অনুমোদিত ‘আসানসোল মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন পার্মানেন্ট স্টাফ অ্যান্ড কনজ়ারভেন্স ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন’-এর কার্যকরী সভাপতি সু্প্রিয় রায় জানান, “অস্থায়ী সাফাইকর্মীদের নিয়মিত মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ারও দেওয়া হয় না। অস্থায়ী পদে বহু বছর ধরে কাজ করার পরেও, স্থায়ী করা হচ্ছে না তাঁদের।” তবে আসানসোলের পুর-প্রশাসক অমরনাথ চট্টোপাধ্যায় জানান, “অস্থায়ী সাফাইকর্মীদের স্থায়ীকরণ নিয়ে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।”
এ সব রাজনৈতিক চাপানউতোরের মধ্যে দাঁড়িয়ে আসানসোল বাজার এলাকায় কর্মরত এক সাফাইকর্মী বলেন, “সব নোংরা সাফ করছি আমরাই। অথচ, আমাদের পাড়াতেই নোংরা রয়েছে। পরিবেশও অস্বাস্থ্যকর।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy