কান্নায় ভেঙে পড়েছেন নিহতের পরিজনেরা। নিজস্ব চিত্র
পরিযায়ী শ্রমিক বাবা-মা ‘লকডাউন’-এ আটকে পড়েছিলেন বেঙ্গালুরুতে। তারই মধ্যে মেমারির করন্দা গ্রামে ১৭ মে নিখোঁজ হয়ে যায় তাঁদের একমাত্র ছেলে শুভ মণ্ডল (১৪) । দিন দশেক পরে, তার ক্ষতবিক্ষত দেহ মিলল খালের কাছে ঝোপে। মোবাইলে ‘অনলাইন গেম’-এ হারের আক্রোশে তাকে খুনের অভিযোগে দুই বন্ধুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশের দাবি, ধৃত দুই নাবালক জেরায় তাদের কাছে খুনের কথা স্বীকার করেছে। এসডিপিও (বর্ধমান দক্ষিণ) আমিনুল ইসলাম খান দাবি করেন, ‘‘মোবাইলে অনলাইন গেম নিয়ে সহপাঠীদের সঙ্গে বিবাদ। মাঝে এক দিন মারপিটও হয়েছিল। সেখান থেকেই এই মর্মান্তিক ঘটনা বলে তদন্তে জানা গিয়েছে।’’ বৃহস্পতিবার ধৃতদের বর্ধমানের জুভেনাইল আদালতে তোলা হলে হোমে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার দুপুরে মেমারি থানার পালশিটের কাছে করন্দা গ্রামের কিশোর, ভৈট্টা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র শুভর দেহ পাওয়া যায় বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে, একটি খালের ধারে। পুলিশের অনুমান, তাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে। পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, ১৭ মে বিকেলে সাইকেল ও মোবাইল নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল শুভ। তার পর থেকে পরিজনেরা আর তার খোঁজ পায়নি। ১৮ মে শুভর দাদু কিশোরী মণ্ডল মেমারি থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। পুলিশ জানায়, নাবালক হওয়ার কারণে নির্দিষ্ট ধারায় অপহরণের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়।
পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার পর্যন্ত বিভিন্ন জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেও কোনও সূত্র মেলেনি। সাইকেল বা মোবাইলেরও কোনও খোঁজ মিলছিল না। মোবাইল বন্ধ থাকায় তা ‘ট্র্যাক’ করা যাচ্ছিল না। এরই মধ্যে বুধবার বিকেলে কিছুক্ষণের জন্য ‘সিম’-হীন মোবাইলটি চালু হয়। কোন টাওয়ার এলাকায় সেটি রয়েছে, তা জানতে পারে পুলিশ। তদন্তকারীরা জানান, সেই সূত্র ধরে পৌঁছনো হয় স্থানীয় খাঁড়গ্রামের দশম শ্রেণির এক ছাত্রের কাছে। শুভর সহপাঠী ওই ছাত্রের কাছে মোবাইলটি উদ্ধার হয়। কী ভাবে সেটি তার কাছে পৌঁছল, তা জিজ্ঞাসাবাদের পরেই পালশিটের ওই দুই নাবালকের নাম মেলে বলে পুলিশের দাবি। খুনের সঙ্গে মৃতের ওই সহপাঠীর কোনও যোগসূত্র না মেলায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানায় পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃত দুই নাবালক ভৈট্টা উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিল। তার পর থেকে স্কুল-ছুট। পুলিশের দাবি, ধৃতদের জেরা করে জানা গিয়েছে, স্কুল যাতায়াতের পথে তাদের এক জনের সঙ্গে শুভর আলাপ হয়েছিল। তার পরে মোবাইলে অনলাইনে ‘গেম’ খেলত তারা। তাতে শুভ প্রায় সব সময়েই জিতত। সে জন্য স্কুলে যাতায়াতের পথে তাদের নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করত। এক দিন তাদের মধ্যে হাতাহাতিও হয়। সেখানেও শুভকে তারা কাত করতে পারেনি।
তদন্তকারীদের দাবি, জেরায় জানা গিয়েছে, এর পর থেকেই পালশিটের এক কিশোরের রাগ চেপে বসে। অন্য জনকে সঙ্গে নিয়ে শুভকে বাড়ি থেকে ডেকে প্রথমে বাঁকা নদীর ধারে নিয়ে যায় তারা। সেখান থেকে গল্প করতে করতে করন্দা গ্রামের কাছে খালের ধারে নিয়ে গিয়ে তার হাত-পা-মুখ বেঁধে ফেলা হয়। তার পরে গামছায় গলায় ফাঁস দিয়ে খুন করা হয় তাকে। সেখান থেকে দেহটি টেনে ঘাসের জঙ্গলে ফেলে রাখা হয়। যাতে শেয়ালে খেয়ে নিতে পারে, সে জন্যই এই পরিকল্পনা বলে মনে করা হচ্ছে, দাবি ওসি (মেমারি) সুদীপ্ত মুখোপাধ্যায়ের।
শুভর দাদু বলেন, ‘‘চার বছর বয়স থেকে কোলেপিঠে করে নাতিকে বড় করেছি। ‘লকডাউন’-এর সময়ে মোবাইল নিয়েই অনেকটা সময় কাটাত।’’ দু’দিন আগেই বেঙ্গালুরু থেকে ফিরেছেন শুভর বাবা নির্মল মণ্ডল ও মা সাগরিকাদেবী। বেঙ্গালুরুতে রং মিস্ত্রির কাজ করেন নির্মলবাবু। সাগরিকাদেবী কয়েকজনের বাড়িতে রান্না করেন। বৃহস্পতিবার বাড়িতে বসে তাঁরা বলেন, ‘‘ওখান থেকেই ছেলের নিখোঁজের খবর পেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম বাড়ি ফিরে নিশ্চয় ছেলের মুখ দেখতে পাব। কিন্তু কী দেখলাম! যে ছেলের সঙ্গে কারও কোনও বিবাদ নেই, তাকে এ ভাবে খুন করল!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy