পড়াচ্ছেন আউশগ্রামের সুকান্তপল্লির শিক্ষকেরা।
ছেলেমেয়েরা বই ছেড়ে টিভি-মোবাইলে ডুবে যাচ্ছে। ঘরে ‘আটকে’ থেকে মেজাজও বদলে যাচ্ছে তাদের। শিক্ষকদের হাতের কাছে পেলেই এমনই নানা অভিযোগ জানাচ্ছিলেন অভিভাবকেরা। তাঁদের দাবি মেনে পডুয়াদের স্কুলের অভ্যাস ধরে রাখতে খোলা মাঠে পড়ানো শুরু করেছেন পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রাম ১ ব্লকের দিগনগর ২ পঞ্চায়েতের সুকান্তপল্লি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকেরা।
শুক্রবার দুই শিক্ষক নিমাই হাজরা এবং সুদীপকুমার চঁদ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়াদের স্কুলের কাছেই খোলা মাঠে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দু’হাত দূরে দূরে বসিয়ে পড়ানো শুরু করেন। স্কুলের পোশাকে খুশি মনে হাজির হয় পড়ুয়ারাও। শিক্ষকদের দাবি, গত বছর থেকে তাঁরা অনলাইনে পড়ানো শুরু করেছিলেন। এ বছর নতুন পড়ুয়া ভর্তির জন্য গ্রামে ঘোরার সময়ে অভিভাবকেরা তাঁদের কাছে সামনাসামনি পড়ানোর অনুরোধ জানান। তাই এই উদ্যোগ।
আউশগ্রাম ১ চক্রের বিদ্যালয় পরিদর্শক অমিত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অভিভাবকদের দাবি মতো বিদ্যালয়ের বাইরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পড়ুয়াদের নিয়ে ওই শিক্ষকেরা পড়ানোর ব্যবস্থা করেছেন বলে জেনেছি। খুবই ভাল উদ্যোগ।’’
ওই স্কুলের মোট পড়ুয়া ৫৪ জন। শিশু শ্রেণি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণির পড়ুয়াদের এক দিনে এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়াদের অন্য দিন পড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শিক্ষকেরা। প্রধান শিক্ষক নিমাই হাজরা বলেন, ‘‘গত বছর এপ্রিল থেকে অনলাইনে পড়ানো হচ্ছিল। এ বারেও অনলাইনে পড়ানো শুরু করেছিলাম। কিন্তু অভিভাবকেরা এ ভাবে পড়ানোর কথা বলেন। পড়ুয়ারা যাতে কিছু শিখতে পারে, তাই খেলার মাঠে ক্লাস নেওয়া শুরু করেছি।’’ প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত পড়ানো হবে বলে জানান তিনি। তাঁর দাবি, ‘‘বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় পড়ুয়ারা অনেক পিছিয়ে গিয়েছে। অনেকের সঙ্গেই বইয়ের যোগাযোগ প্রায় নেই। ফের পঠনপাঠন শুরু করে তাদের যদি কিছুটা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, তার চেয়ে ভাল কিছু হয় না।’’
অভিভাবক বিকাশ বিশ্বাস, রীতা সুর, পাপিয়া বিশ্বাস, সঞ্চিতা বিশ্বাসদের অনেকেই এ দিন মাঠের ধারে দাঁড়িয়ে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া দেখছিলেন। তাঁদের কথায়, ‘‘স্কুল বন্ধ থাকায়, ছেলেমেয়েদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। পড়াশোনায় একেবারে মন বসছিল না। মোবাইল এবং টিভি দেখার ঝোঁক বাড়ছিল। জানুয়ারি থেকে স্কুল খোলার একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েও ফের করোনার কারণে স্কুল বন্ধ হয়ে গেল। তার পরেই আমরা শিক্ষকদের অনুরোধ করি সামনাসামনি পড়ানোর।’’ তাঁদের দাবি, স্কুল বন্ধ থাকায় অনেক পড়ুয়াই জেদি হয়ে যাচ্ছিল। খোলা আকাশের নীচে এক সঙ্গে পড়াশোনা করলে মানসিক বিকাশ হবে। সংক্রমণের আশঙ্কাও কম থাকবে, দাবি তাঁদের।
স্কুল হবে জেনে সকাল সকাল বসার চট, বই হাতে হাজির হয়ে গিয়েছিল সুপ্রিয়া বসু, সুপর্ণা হাওলাদার, আদি বিশ্বাসেরা। তারা বলে, ‘‘বাড়িতে আর ভাল লাগছে না। বন্ধুরা মিলে পড়াশোনা করার আনন্দই আলাদা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy