কালনায় কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী। নিজস্ব চিত্র।
একশো দিনের প্রকল্পে টাকা আদায়ের জন্য কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে তৃণমূল। তার মাঝেই বর্ধমানের সার্কিট হাউসে সোমবার সকালে কেন্দ্রের অর্থ প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধরী দাবি করেন, “একশো দিনের প্রকল্পে যদি কোনও রাজ্য ঠিকমতো কাজ না করে তাহলে সেই টাকা আটকে দেওয়ার কথা আইনেই বলা হয়েছে। ব্যবস্থা নেওয়ার রিপোর্ট পাঠালে সেই টাকা দেওয়া হবে।” তাঁর অভিযোগ, পূর্ব বর্ধমান ও হুগলিতে ওই প্রকল্পে অনেক গরমিল পাওয়া গিয়েছিল। যদিও ২০১৯ সালের সেই ‘গরমিলের’ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হয়েছে বলে দাবি প্রশাসন সূত্রের। কোনও ব্যবস্থা না নেওয়া হয়ে থাকলে কেন্দ্রের তরফে সে নিয়ে পরবর্তী কোনও পদক্ষেপ করা হচ্ছে না, সে বিষয়ে মন্ত্রীর কোনও বক্তব্য মেলেনি।
এ দিন কালনা শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পাঁচটি বিধানসভার দলীয় নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী। রবিবার জামালপুরে মন্ত্রীর সামনে হাতাহাতিতে জড়িয়েছিলেন দলের কয়েক জন। এ দিন কয়েক জন ‘বিক্ষুব্ধ’ নেতাকে বাইরে ঘোরাফেরা করতে দেখা গেলেও, প্রকাশ্যে গোলমাল হয়নি।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত বছর জানুয়ারিতে একশো দিনের প্রকল্পে রাজ্যের পেশ করা খতিয়ান না মেলায় হুগলিকে দু’কোটি ও পূর্ব বর্ধমানকে এক কোটি ১৬ লক্ষ টাকা জরিমানা করে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন দফতর। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরের ওই রিপোর্টে খণ্ডঘোষের শশঙ্গা, রায়না ১ ব্লকের নতু, হিজলনা, আউশগ্রামের ২ ব্লকের রামনগর, এড়ালের ২৮টি কাজ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়। দুর্নীতির দাবি করে টাকা ফেরত, দোষীদের খুঁজে বার করে ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়। তিন বছর ধরে টানাপড়েন চলে। ২০২২ সালে শশঙ্গা পঞ্চায়েতের একশো দিনের কাজের ছয় সুপারভাইজ়ারের বিরুদ্ধে বিডিও (খণ্ডঘোষ) সত্যজিৎ কুমার এফআইআর করেন। শশঙ্গা পঞ্চায়েতের দাবি, আদালতের মাধ্যমে ১৪ লক্ষ টাকা জরিমানা বাবদ ফেরত দেওয়া হয়েছে। রায়নার নতু পঞ্চায়েত জরিমানার টাকা ফেরত দেওয়ার দাবি করলেও আউশগ্রামের পঞ্চায়েত দু’টি টাকা ফেরত দিয়েছে বলে জানা যায়নি।
কেন্দ্রের অর্থ প্রতিমন্ত্রীর অভিযোগ, “১০০ দিন প্রকল্পে করা যায় না, এমন কাজ করা হয়েছে। ব্যক্তিগত জায়গায় রাস্তা বানানো হয়েছে। উপগ্রহ-চিত্রে পুকুর দেখা যাচ্ছে, সেখানেই পুকুর কাটা দেখানো হয়েছে! কেন্দ্র সরকার বিস্তারিত বাংলার সরকারকে পাঠিয়েছিল। তারা তদন্ত করেনি। ৬০:৪০ অনুপাতে মজুরি ও নির্মাণ সামগ্রীও ভাগ হয়নি।’’
জেলা প্রশাসনের দাবি, প্রায় দু’লক্ষ মানুষের ৩৩ কোটি টাকা মজুরি বাকি। এ ছাড়াও নির্মাণ সামগ্রী বাবদ ১২২ কোটি টাকা পাবে জেলা। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় (গ্রামীণ) জেলায় ‘আবাস প্লাসে’ ৫৫,৬১৪টি বাড়ির অনুমোদন মিলেছে। প্রতিটি বাড়ির সঙ্গে আধার সংযোগও হয়েছে। কিন্তু টাকা আসেনি। মন্ত্রীর দাবি, “যোগ্যদের বাদ দিয়ে অযোগ্যদের নাম তালিকায় তোলা হয়েছে। তদন্তে সে কথা উঠে এসেছে। তার রিপোর্টও কেন্দ্র সরকার পায়নি।”
জেলা পরিষদের সভাধিপতি শ্যামাপ্রসন্ন লোহার, সহ-সভাধিপতি গার্গী নাহারা বলেন, “রাজনৈতিক চক্রান্ত করার জন্য মিথ্যা অভিযোগ তুলছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। প্রাপ্য টাকা আদায়ে শীর্ষ নেতৃত্ব আন্দোলন করছেন। বঞ্চিতরাও আন্দোলনে রয়েছেন।’’
পঞ্চায়েত ভোটে বহু আসনে বিজেপি প্রার্থী দিতে পারেনি। এ দিন রুদ্ধদ্বার বৈঠকে লোকসভা ভোটের আগে বুথকে শক্তিশালী করার পরামর্শ দেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। কিছু কিছু কর্মসূচি এবং নেতাদের বুথস্তর পর্যন্ত দ্রুত পৌঁছে যাওয়ার কথা বলেন। দলের কাটোয়া সাংগঠনিক জেলার সভাপতি গোপাল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘লোকসভা ভোটের আগে সাংগঠনিক শক্তি বাড়াতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বেশ কিছু মূল্যবান পরামর্শ দিয়েগেছেন। আমরা তা মেনে চলব।’’ পরে জামালপুরের ঘটনা নিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘‘বিজেপি একটা পরিবারের মতো। সেখানে মতভেদ হতে পারে। আমরা বিষয়টি বসে ঠিক করে নেব।’’ জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠকে জানা গিয়েছে, কেন্দ্রের কাছে কোনও রাজ্যের টাকা বাকি নেই বলেও দাবি করেন তিনি। তাঁর দাবি, ‘‘বিজেপি যখন কেন্দ্রে ক্ষমতায় ছিল না, তখন বাংলা বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে পেত ১৮ হাজার কোটি টাকা।সেখানে ২০২৩ সালে কেন্দ্রীয় সরকার দিয়েছে ২ লক্ষ ৫ হাজার কোটি টাকা। তৃণমূল রাজনীতি করার জন্য মিথ্যা অভিযোগ করছে।’’
তৃণমূলের রাজ্যে অন্যতম মুখপাত্র দেবপ্রসাদ বাগ বলেন, ‘‘যাঁরা গরিব মানুষের টাকা দেয় না, তাঁদের মুখে বড় বড় কথা মানায় না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy