এনআইটি-র অতিথি নিবাসে চলে জিজ্ঞাসাবাদ। নিজস্ব চিত্র।
ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের এক জন এবং বীরভূমের কয়েক জন তৃণমূল নেতাকে সোমবার দুর্গাপুরে জিজ্ঞাসাবাদ করল সিবিআই। ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি’র (এনআইটি) অতিথি নিবাসে সিবিআইয়ের অস্থায়ী কার্যালয়ে তাঁদের তলব করা হয়। প্রত্যেকেই ‘হিংসার’ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
এ দিন ডাক পড়া নেতাদের মধ্যে, যাঁদের নাম জানা গিয়েছে, তাঁরা হলেন— বীরভূমের মহম্মদবাজারের তৃণমূল নেতা তাপস সিংহ, পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রাম ২-এর তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি আহমদ শামস তাবরিজ ওরফে অরূপ মির্ধা। এ ছাড়া, ওই অতিথি নিবাসে ঢুকতে দেখা যায়, বীরভূমের সাঁইথিয়া পুরসভার চেয়ারম্যান বিপ্লব দত্ত, সাঁইথিয়ার তৃণমূল বিধায়ক নীলাবতী সাহার স্বামী দেবাশিস সাহা প্রমুখকে।
সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল ১০টায় প্রত্যেককে ডাকা হয়েছিল। প্রত্যেকেই সময় মতো চলে আসেন। প্রায় সওয়া এক ঘণ্টা সিবিআই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বলে জানান অরূপ। অতিথি নিবাস থেকে বেরিয়ে আসার সময় তিনি বলেন, “মনে হয়, ভোট পরবর্তী হিংসার কোনও মামলায় ডেকেছে। তবে আমাদের এলাকায় তেমনকিছুই ঘটেনি।”
ঘটনাচক্রে, অরূপ বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের ‘অনুগামী’ হিসেবে এলাকায় পরিচিত। সে প্রসঙ্গ উঠতেই তাঁর প্রতিক্রিয়া, “উনি আমাদের পর্যবেক্ষক। ওঁর সঙ্গে শুধু দলেরই কথা হয়। এ সব চাপ দেওয়ার জন্য ডাকা হয়েছে।”প্রয়োজনে, দল জানতে চাইলে সিবিআই-এর এই তলবের কথা ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বকেও জানাবেন বলে জানান তিনি।
সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, অরূপের পরে, অতিথি নিবাসে ঢোকেন তাপস। তাপস সংবাদমাধ্যমকে জানান, তিনি কী করেন, কখন কলেজে পড়াশোনা করেছেন, পরিবারের কে, কী চাকরি করেন, এ সব জানতে চাওয়া হয়। তাপসের দাবি, তাঁকে একটি ‘কল লিস্ট’ দেখিয়ে বলা হয় ২০২১-এর ২ মে অনুব্রত মণ্ডলকে তিনি দুপুর ১২টা এবং সন্ধ্যা ৭টায়, দু’বার ফোন করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে কী কথা হয়েছিল? তাপস বলেন, “আমি সিবিআই-কে জানাই, সে দিন ভোটের ফল ঘোষণা ছিল। দলীয় কার্যালয়ে বসে কত ভোটে এগোচ্ছি, তা দলের জেলা সভাপতিকে জানাই। সন্ধ্যা ৭টায় ফোন করে জানাই, ফল ঘোষণা সম্পূর্ণ হয়েছে। সব শান্তিপূর্ণ হয়েছে।” তিনি জানান, ইলামবাজারে একটি খুনের ঘটনা নিয়ে জানতে চান তদন্তকারীরা। তাপসের বক্তব্য, “আমি জানাই, ইলামবাজার আমার এলাকা থেকে বহু দূরে।সেখানে কী হয়েছে, তা জানা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। পরদিন খবরের কাগজে ঘটনার কথা জানতে পারি।” এ দিকে, সিবিআই তাঁকে সাক্ষী হিসেবে ডেকেছে বলেও দাবি করেন। সিবিআইয়ের তলব পেয়ে তিনি অনুব্রতকে জানান বলেও দাবি। তাপসের দাবি, এর পরে, অনুব্রত তাঁকে বলেন, “কেন যাবেন না? ডেকেছে যখন যান।” পাশাপাশি, সিবিআই-এর সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা করার কথাও বলেন তাপস।
এর পরে, ওই অতিথি নিবাসে ঢুকতে দেখা যায় সাঁইথিয়া পুরসভার চেয়ারম্যান বিপ্লব দত্ত, সাঁইথিয়ার তৃণমূল বিধায়কের স্বামী দেবাশিস সাহাকে। তবে তাঁরা সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে চাননি। পরে দেবাশিস দাবি করেন, তিনি দুর্গাপুরে গেলেও তাঁকে সিবিআই তলব করেনি। এ দিন আইনজীবী হিসেবে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে এনআইটি-তে এসেছিলেন সিউড়ি আদালতের সরকারি আইনজীবী মলয় মুখোপাধ্যায়।তবে তিনিও সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কোনও কথা বলতে চাননি।
তবে এই তলব নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপান-উতোর। দুর্গাপুরে তৃণমূলের আহ্বায়ক তথা দুর্গাপুর পুরসভার চেয়ারম্যান মৃগেন্দ্রনাথ পাল বলেন, “কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি দিয়ে আমাদের দলের নেতাদের অহেতুক হেনস্থা করার চেষ্টা হচ্ছে। তবে আইন আইনের পথেই চলবে।” এ দিকে, বিজেপির অন্যতম রাজ্য সম্পাদক তথা বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুইয়ের প্রতিক্রিয়া, “সিবিআইয়ের উপরে মানুষের আস্থা রয়েছে। রাজ্য জুড়ে তৃণমূল বিরোধীদের উপরে যে হিংসা চালিয়েছে ও চালাচ্ছে, এ সব তারই ফল।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy