প্রণবের অফিস ও বাড়িতে তদন্তকারীরা। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র।
একটি বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার লেনদেনে জড়িত থাকার অভিযোগে বর্ধমানের পুর-প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান প্রণব চট্টোপাধ্যায়কে (খুদু নামেই পরিচিত) সিবিআইয়ের গ্রেফতারের খবর শুনেও কার্যত ‘নিরুত্তাপ’ থাকল শহর। শুক্রবার বর্ধমান শহরে প্রণবের বাড়ি ও তাঁর অফিসে হানা দেয় সিবিআই। প্রায় আট ঘণ্টা ধরে বর্ধমান শহরের জিটি রোডে ঢলদিঘি মোড়ে প্রণবের অফিসে তল্লাশি চালান তদন্তকারীরা। প্রণবের তেলমারুই পাড়ার বাড়িতে গিয়েও তাঁর স্ত্রী রেখা চট্টোপাধ্যায়কে প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদ করে। বাড়ি বা অফিসের বাইরেও সে ভাবে দলের কর্মী বা কৌতূহলী জনতার ভিড় দেখা যায়নি।
পরিজনদের সূত্রে জানা যায়, হুগলির ইটাচুনা কলেজে পড়ার সময়েই কংগ্রেসের হয়ে প্রণবের রাজনীতিতে হাতেখড়ি। ছাত্র সংসদের নেতাও হয়েছিলেন। সত্তরের দশকে ‘মিসা’ আইনে গ্রেফতারও হয়েছিলেন। ১৯৭৩ সালে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে এক ছাত্র খুনের ঘটনাতেও তাঁর নাম জড়িয়েছিল। জেলে থাকা অবস্থাতেই তিনি বর্ধমান পুরসভায় নির্দল হিসাবে প্রার্থী হন। জিতে কাউন্সিলরও হন। পরে, কংগ্রেসের হয়ে বেশ কয়েক বার কাউন্সিলর হয়েছিলেন। বর্ধমান পুরসভার বিরোধী দলনেতাও ছিলেন।
১৯৯৮ সালে তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। যদিও ২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে থেকে রাজনীতির সঙ্গে তাঁর ‘দূরত্ব’ বেড়ে যায়। তার পরে অপ্রত্যাশিত ভাবেই চলতি বছরের অগস্টে পুরপ্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান। পুরসভার কর্মীদের একাংশের দাবি, “আমরাও হতবাক। কয়েকদিন ধরে প্রণবদা অনিয়মিত ভাবে অফিসে আসছিলেন। বুধবার বিকেল থেকে তাঁকে ফোনেও পাওয়া যাচ্ছিল না।’’
এ দিন বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ সিবিআইয়ের চার তদন্তকারী কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান নিয়ে প্রণবের ঢলদিঘি মোড়ের কাছে বাণিজ্যিক ভবনের অফিসে ঢোকেন। তাঁরা সোজা গিয়ে প্রণবের নিজস্ব চেম্বারে ঢুকে একের পরে এক নথি ঘাঁটতে থাকেন। সূত্রের খবর, কম্পিউটার থেকেও বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা হয়। প্রায় আট ঘণ্টা ওই ঘরে তাঁরা ছিলেন। ভবনের সামনে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা দাঁড়িয়েছিলেন।
দুপুর ১২টা নাগাদ তেলমারুই পাড়ায় প্রণবের বাড়িতে যায় সিবিআই। সেখানে গিয়ে তদন্তকারীরা প্রণবের স্ত্রী রেখাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এ দিন দুপুরে রেখা দাবি করেন, “আমার স্বামীকে কলকাতায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে সিবিআই ডেকেছিল। সেখানে গিয়েছে। গ্রেফতারের কোনও খবর জানি না। আপনাদের কী মনে হয়, আমরা এ সব কাজে যুক্ত থাকতে পারি?’’
সিবিআই কেন এসেছিল? রেখার দাবি, “২০০৮ সাল থেকে কয়েক বছর ধরে আমার নামে থাকা বাণিজ্যিক ভবনে একটি অর্থলগ্নিকারী সংস্থা ভাড়া নিয়েছিল। তারা জুটমিল করবে বলে জানিয়েছিল। মাসে ২৫ হাজার টাকার মতো ভাড়া ছিল। যখন স্বামী জানতে পারল, ওই সংস্থা টাকা তুলছে, তখনই তাদের বারণ করা হয়। এ সব ব্যাপারেই সিবিআই জিজ্ঞাসা করছিল।’’ এতে তিনি ‘চক্রান্তের’ গন্ধ পাচ্ছেন বলেও দাবি করেন। প্রণবের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ উড়িয়ে তাঁর অনুমান, “প্রায় এক যুগ কেটে যাওয়ার পরে, এ রকম ঘটনা দেখে মনে হচ্ছে, রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার পরে কিছু লোক স্বামীকে ফাঁসানোর জন্যই এ সব করিয়েছেন।’’
বিজেপির সাংগঠনিক জেলা (বর্ধমান সদর) সম্পাদক শ্যামল রায়ের কথায়, “শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করা হচ্ছে। বর্ধমান শহরে সুশিক্ষিত মানুষজনের বাস। সেখানে প্রশাসকের গ্রেফতার হওয়ার ঘটনা খুবই লজ্জার।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, “জনগণের সেবা করতে এসে নিজেরাই জনগণের টাকা লুটে অভিযুক্ত হচ্ছেন। কলকাতা থেকে বর্ধমান— সর্বত্র এক ছবি।’’ যদিও জেলা তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “দলের কোনও বিষয় নয়। দেখেশুনে মনে হচ্ছে, রাজনৈতিক হিংসা চরিতার্থ করার জন্যই সিবিআইকে ব্যবহার করা হয়েছে।’’
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের একাংশ থেকে শহরের বিশিষ্ট নাগরিকদের একাংশের দাবি, “পুরবাসীর কাছে একটা খারাপ বার্তা গেল। পুরসভায় নাগরিক পরিষেবা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দেবে।’’ যদিও পুরসভার ভাইস-চেয়ারম্যান আইনুল হকের দাবি, “দৈনন্দিন কাজে কোনও প্রভাব পড়বে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy