মঙ্গলকোটের কাশেমনগরের শিবিরে কন্যাশ্রী ক্লাব। ছবি: প্রদীপ মুখোপাধ্যায়।
‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচিতে আসা মানুষজনকে সাহায্যের জন্য হাত বাড়িয়ে দিতে বসেছিল তারা। সেখান থেকে নাবালিকা বিয়ে রোধেও প্রচার চালাল পূর্ব বর্ধমানের কন্যাশ্রী ক্লাবের মেয়েরা। এই প্রচারের সুফল মিলবে, মনে করছেন জেলা প্রশাসন থেকে চাইল্ডলাইনের কর্তারা।
১ ডিসেম্বর থেকে রাজ্য জুড়ে শুরু হয়েছিল ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচি। শুক্রবার সেই কর্মসূচির প্রথম পর্যায় শেষ হয়েছে। কর্মসূচি শুরুর কয়েকদিন পর থেকে নাদনঘাটের অন্নপূর্ণা বিদ্যালয়ে শিবিরের এক পাশে ‘হেল্প ডেস্ক’ করে কয়েকজন পড়ুয়া বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা মানুষজনকে বোঝানোর কাজ শুরু করে। নানা প্রকল্পের আবেদনপত্র পূরণেও তারা সাহায্য করে। তার পরে একই রকম ‘হেল্প ডেস্ক’ চালু হয় কেতুগ্রাম ২ ব্লকের মৌগ্রামে। একে একে ভাতার, মন্তেশ্বর, কালনা, মঙ্গলকোটেও ‘হেল্প ডেস্ক’ করে কোথাও স্কুল পড়ুয়ারা, আবার কোথাও কলেজ পড়ুয়ারা বসেছিলেন। শিবিরে যেমন নাবালিকা বিয়ে রোধে প্রচার চালানো হয়েছে, তেমনই অনেকে মেয়েদের কাছে কন্যাশ্রী সংক্রান্ত নানা অভিযোগও তুলে ধরেছেন।
জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) মহম্মদ এনাউর রহমান বলেন, ‘‘বিভিন্ন শিবিরে গিয়ে কন্যাশ্রী ‘হেল্প ডেস্ক’-এর মেয়েদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁরা পাড়ার, গ্রামের পরিচিত মানুষজনকে সাহায্য করতে পেরে খুশি বলে জানিয়েছেন। প্রত্যেকটি জায়গাতেই বিভিন্ন প্রকল্পের কথা বলেছেন, আবেদনপত্র পূরণেও সাহায্য করেছেন।’’ জেলা কন্যাশ্রী দফতর সূত্রে জানা যায়, প্রত্যেকটি শিবিরেই কন্যাশ্রীর মেয়েদের ‘হেল্প ডেস্ক’ করতে বলা হয়েছে। অভিভাবকদের অনুমতি নিয়ে তবেই শিবিরে আসতে বলা হয়েছে। অনেক জায়গায় করোনা-পরিস্থিতির কারণে অভিভাবকেরা মেয়েদের অনুমতি দিতে চাননি বলে জানা গিয়েছে, দাবি দফতরের কর্তাদের।
কাটোয়া কলেজের ছাত্রী, মৌগ্রামের বাসিন্দা মামনি পাল, অর্পিতা রাজবংশী, মন্তেশ্বর কলেজের ছাত্রী শ্রেয়া ঘোষাল, ভাতারের দাশরথী হাজরা কলেজের ছাত্রী সুদীপা সোরেনদের কথায়, ‘‘সরকারের কর্মসূচি নিয়ে আমাদের ধারণা ছিল। হেল্প ডেস্কে অনেকেই স্বাস্থ্যসাথী, খাদ্যসাথীর আবেদন পূরণের জন্য এসেছিলেন। এলাকার বাসিন্দাদের নানা প্রশ্নের জবাবও দিয়েছি। তাতে আমাদেরও সামাজিক পরিচয় হল, কী ভাবে মানুষের কাজ করতে হয়, তা-ও শিখতে পারলাম।’’ তাঁরা জানিয়েছেন, কন্যাশ্রী ও রূপশ্রী প্রকল্পের খোঁজে অনেক অভিভাবকেরা তাঁদের কাছে এসেছেন। কেউ জানতে চেয়েছেন, কী ভাবে কন্যাশ্রী প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত হতে হয়, কেউ আঠারো বছর হয়ে যাওয়ার পরেও বাড়ির মেয়ে এখনও কন্যাশ্রী (২) প্রকল্পের ২৫ হাজার টাকা পায়নি বলে অভিযোগ করেছেন। তাঁদের ব্লক অফিসের কোথায় কী ভাবে যোগাযোগ করতে হবে, তা জানানো হয়েছে বলে জানান তাঁরা।
মন্তেশ্বরের স্কুল ছাত্রী আয়েষা খাতুন, ভাতারের রূপসা মণ্ডল, পূর্বস্থলীর অতসী দেবনাথেরা বলে, ‘‘আমাদের কাছে অনেকেই এসেছিলেন। তাঁদের সাহায্য করার ফাঁকে বাড়িতে কোন স্কুলে, কোন শ্রেণিতে কে পড়ে জেনে নিয়েছি। নাবালিকা অবস্থায় বিয়ে না দেওয়ার কথা বলা হয়েছে তাঁদের। অভিভাবকেরা আমাদের সে ব্যাপারে আশ্বাসও দিয়েছেন।’’
চাইল্ডলাইনের পূর্ব বর্ধমানের কো-অর্ডিনেটর অভিজিৎ চৌবে বলেন, ‘‘বিয়ের মরসুমে কন্যাশ্রীর মেয়েদের প্রচার বাড়লে অনেক নাবালিকার বিয়ে আটকানো যাবে বলে মনে হয়। আমাদের কাছে অনেক বেশি খবরও আসবে।’’ জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘স্কুল বন্ধ থাকায় কন্যাশ্রী ক্লাবগুলির নজরদারি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। লকডাউন পর্বে নাবালিকা বিয়ে বেড়ে গিয়েছিল। এই কর্মসূচির মাধ্যমে কন্যাশ্রীরা ফের নাবালিকা বিয়ে আটকানোর প্রচার চালাল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy