—প্রতীকী চিত্র।
স্থায়ী আমানত ভেঙে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা হাপিশ করার ঘটনায় তদন্তকারী সংস্থা সিআইডিকে দ্রুত উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বললেন বিচারপতি অমৃতা সিংহ। প্রয়োজন হলে তদন্তকারী অফিসার আর্থিক দুর্নীতি বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিতে পারবেন বলেও বিচারপতি জানিয়েছেন। এর সঙ্গে সিআইডিকে মামলার কী অবস্থা, তার রিপোর্ট মুখ বন্ধ অবস্থায় আদালতে জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা হাপিশ হওয়ার ঘটনায় ইডি তদন্ত চেয়ে হাই কোর্টে মামলা করেছিলেন প্রাক্তন আধিকারিক দেবমাল্য ঘোষ। তাঁর আইনজীবী, কলকাতা হাই কোর্টের শামিম আহমেদ বলেন, “ইডি কী পদক্ষেপ করেছে, তার রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য বিচারপতি নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে দুই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক ‘বেআইনি আর্থিক লেনদেন প্রতিরোধ আইনে’ (পিএমএলএ)-র ১২ ধারায় ইডিকে জানিয়েছে কি না, তারও রিপোর্ট চেয়েছেন বিচারপতি।”
বৃহস্পতিবার প্রায় ৪০ মিনিট ধরে বিচারপতি সিংহের এজলাসে এই মামলার শুনানি হয়। সিআইডি, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়, ইডির আইনজীবীদের সঙ্গে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সুজিত চৌধুরী ও ফিনান্স অফিসার সৌগত চক্রবর্তী পৃথক ভাবে আইনজীবী দাঁড় করিয়েছেন। গত ৬ মে এই মামলাটি শুনেছিলেন বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত। সেই দিনই তিনি তদন্তকারী সংস্থাকে কেস ডায়েরি (সিডি) আদালতে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন। সিআইডি গত ৬ জুন আদালতে রিপোর্ট পেশ করে জানিয়েছে, এই মামলায় দু’জন গ্রেফতার হয়েছে। আর এক অভিযুক্ত, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিনান্স বিভাগের কর্মী ভক্ত মণ্ডল পলাতক। তাঁর পরিবারেরও খোঁজ মিলছে না। আইনজীবীদের সূত্রে জানা যায়, ধৃত সুব্রত দাসের কাছ থেকে ৩৩ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। অভিযোগ, রেজিস্ট্রার ও ফিনান্স অফিসারের সই জাল করে ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তোলা হয়েছে। ওই দুই আধিকারিকের সইয়ের নমুনা হস্তবিশারদরা নিয়েছেন। তার রিপোর্টও জমা দিয়েছেন।
এজলাসে শুনানি চলাকালীন বিচারপতি জানতে পারেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ বছর ধরে অন্তবর্তীকালীন কোনও অডিট হয়নি। বিস্ময় প্রকাশ করেন তিনি। আইনজীবীরা বিশ্ববিদ্যালয় নিযুক্ত এই ঘটনার তদন্ত কমিটির একটি রিপোর্ট আদালতে পেশ করেন। তা দেখে বিচারপতি সিআইডির আইনজীবীর কাছে রেজিস্ট্রার ও ফিনান্স অফিসারের বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে কি না জানতে চান। আইনজীবী বিচারপতিকে জানান, ওই দু’জনের বয়ান রেকর্ড হয়েছে। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবীর কাছে জানতে চাওয়া হয়, কোনও নথি-নষ্ট হয়নি তো? তিনি জানান, সব নথিই পুলিশ ও সিআইডি দেখেছে। নথি সংগ্রহও করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, কয়েক দিন আগে সিআইডির চার জনের একটি দল ফিনান্স অফিসারকে চার ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। একাধিক নথি মিলিয়ে দেখেছে। নথি সংগ্রহও করেছে। বিচারপতি এ দিন তাঁর নির্দেশে জানিয়েছেন, কোনও নথি যাতে নষ্ট না হয়, তা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করতে হবে।
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে স্থায়ী আমানত রয়েছে। জেলখানা মোড়ের একটি ব্যাঙ্কের স্থায়ী আমানত থেকে মেয়াদ পূরণের আগেই ১ কোটি ৯৩ লক্ষ ৮৯ হাজার ৮৭৬ টাকা হাপিশ হয়ে যায়। দেড় বছর পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ বিভাগ তা জানতে পারে। গত ২২ ফেব্রুয়ারি রেজিস্ট্রার সুজিতকুমার চৌধুরী বর্ধমান থানায় এফআইআর করে জানান, অর্থ বিভাগের কর্মী ভক্ত মণ্ডল-সহ কয়েক জন এতে জড়িয়ে রয়েছেন। বর্ধমান থানা এক অস্থায়ী কর্মীকে গ্রেফতার করে। ব্যাঙ্কের কাছ থেকে পুলিশ জানতে পারে, টাকার একটা অংশ গিয়েছিল কল্যাণীর বাসিন্দা সুবৃত দাসের অ্যাকাউন্টে। তাঁকেও পুলিশ গ্রেফতার করেছে। এর পরেই মামলাটির তদন্তভার নেয় সিআইডি।
আইনজীবীরা জানিয়েছেন, এই মামলায় প্রয়োজন হলে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোনও ব্যক্তিকে সিআইডি জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে বলে বিচারপতি জানিয়েছেন। মামলাকারী দেবমাল্য ঘোষ বলেন, “আমার আইনজীবী আদালতে যে সব যুক্তি দিয়েছেন, তার বিরোধিতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী করেননি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy